কুরআন মাজীদের একটি সূরার নাম ‘আলমুমিনূন’। এ সূরার প্রথম আয়াতটি হচ্ছে-
"অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ"।
এরপরের আয়াতগুলোতে আছে এই মুমিনগণের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা, যার একটি হচ্ছে-
"যারা অসার কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকে"। -সূরা মুমিনূন ২৩ : ৩
সুতরাং মুমিন কখনো অর্থহীন কাজে লিপ্ত হতে পারে না। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
"ব্যক্তির সুন্দর মুসলিম হওয়ার এক নিদর্শন, অর্থহীন কাজ ত্যাগ করা।"
মুমিন তো আল্লাহর ঐ বান্দা, আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহে যার বিশ্বাস, পৃথিবীতে
তার আগমন অর্থহীন ও তাৎপর্যহীন নয়। তাঁর জীবনও উদ্দেশ্যহীন পরিণামবিহীন
নয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার ¯্রষ্টা ও প্রভু এবং তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত ও ইতাআত-উপাসনা ও আনুগত্য। আর এ তার জীবনের
খণ্ডিত বিষয় নয়, জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাকে আল্লাহ তাআলার হুকুম মোতাবেকই
চলতে হবে। এই যে জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এর সাথে যা কিছু সাংঘর্ষিক এবং যা
কিছু অপ্রাসঙ্গিক মুমিনের তাতে কোনো আগ্রহ নেই। সুতরাং সে তা বর্জন করে এবং
এড়িয়ে চলে।
ইসলামের এ গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা ও
অনুশীলন এবং এ পরম গুণ অর্জনের আন্তরিক প্রচেষ্টা এখন খুব প্রয়োজন। কারণ
ইসলামী জীবন-দর্শন ও মুমিন-বৈশিষ্ট্যের সম্পূর্ণ বিপরীত যে ‘অসার-অর্থহীন
কার্যকলাপ’, এখন চারদিকে তারই স্রোত-প্রবাহ। সুতরাং প্রজ্ঞা, সচেতনতা ও
আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তি এখন খুব বেশি প্রয়োজন। নতুবা জীবনের মূল্যবান সময়ের
অপচয় হবে এবং জীবন লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে।
এর অতিসাম্প্রতিক উদাহরণটি হল
‘বিশ্বকাপ ক্রিকেট’। সাধারণ হুজুগ ও ক্রীড়ামত্ততা ছাড়াও যেহেতু বাংলাদেশ
দল এ আসরে অংশগ্রহণ করেছিল এজন্য এটা ‘দেশপ্রেমের’ও এক অনিবার্য অনুষঙ্গ
হয়ে উঠেছিল! একেই বলে চিন্তার ভ্রান্তি। চিন্তার গতিধারাই যখন বদলে যায় তখন
সঠিক কর্মের আশা নির্বুদ্ধিতামাত্র। এ-ও আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এক
প্রকারের শাস্তি। যারা আল্লাহকে ভুলে যায় আল্লাহ তাদের আত্মবিস্মৃত করে
দেন। ফলে নিজের ভালো-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণের উপলব্ধি ও আগ্রহ তার থাকে না।
এক কবি বলেছেন-
"যখন ব্যক্তির উপর থেকে আল্লাহর সাহায্য উঠে যায় তখন সবার আগে যা তাকে আক্রমণ করে তা তার নিজের চিন্তা।"
সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে তো কারো দ্বিমত নেই। শুধু ইসলামই নয়, পৃথিবীর সকল
ধর্ম, এমনকি নাস্তিক ও বস্তুবাদী দার্শনিকেরাও সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে
একমত। কিন্তু এইসব খেলাধুলার সময়ের অবস্থা দেখে মনে হয়, এ জাতির কাছে
সবচেয়ে মূল্যহীন ও অপ্রয়োজনীয় জিনিসের নাম সময়। এখন মিডিয়ার কল্যাণে ও
পর্দার ভিতরের-বাইরের নানা কারণে খেলাধুলার প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে। কিন্তু একে
কেন্দ্র করে যে উন্মাদনা আমাদের দেশে দেখা যায় তা বোধ হয় আর কোথাও নেই।
এরপর এবারের বিশ্বকাপে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ম্যাচে আম্পায়ারিংয়ের যে বিষয়টি
ব্যাপকভাবে আলোচিত হল তা থেকেও বাস্তবতার উপলব্ধি আমাদের কতটুকু হল তা
ভবিষ্যতই বলে দিবে।
আমাদের আত্মবিস্মৃতি ও অসার কার্যকলাপে
লিপ্ততার আরেক উদাহরণ থার্টিফাস্ট নাইট ও পয়লা বৈশাখ। মিডিয়ার কল্যাণে
‘পয়লা বৈশাখ’ উদযাপনও যেন এখন জাতীয় ঐতিহ্যের ব্যাপার! পয়লা বৈশাখে যেভাবে ও
যেসব উপায়ে ‘বাঙালিয়ানা’র প্রকাশ দেখা যাচ্ছে একে অনাচার-উচ্ছৃঙ্খলা বললে
বোধ হয় সবটা বলা হয় না। ধীরে ধীরে এটি বাঙালী মুসলিম মানসে ব্রাহ্মণ্যবাদী
সংস্কৃতির প্রভুত্ব বিস্তারের এক বড় অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ, এখন পয়লা
বৈশাখ পান্তা-ইলিশে সীমাবদ্ধ নয়, এখন পৈতা-ধুতিতে এর ‘উত্তরণ’ ঘটছে।
ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে ধুতি-পায়জামা পরিধান এখন পয়লা বৈশাখের পরিচয়-চিহ্ন।
প্রথম কথায় ফিরে আসি। অর্থহীন কাজে লিপ্ত হওয়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।
আসুন, আমরা আমাদের ঈমানকে পুনরুজ্জীবিত করি এবং যে কোনো পর্যায়ে যা কিছু ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক তা বর্জন করি।
আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন
No comments:
Post a Comment