Sunday, April 26, 2015

কেন কালো পতাকাবাহীরা বৃহত্তর হিন্দুস্তানের অন্তর্গত পাকিস্তানে রোমান মহাজোটের পদলেহনকারী সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত?

আসুন জেনে নেই, হাদিসে বর্ণিত বৃহত্তর হিন্দুস্তানের অন্তর্গত পাকিস্তানে রোমান মহাজোটের পদলেহনকারী সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যক্ষ ও পরক্ষ ভূমিকার সামনে রোমান মহাজোটের নেতৃত্বদানকারী যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন হামলা করে কতজন মুসলিমকে শহীদ করেছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের সকল হামলাঃ ২০০৪ - জানুয়ারী ২০১৫
মোট হামলা (ওবামা প্রশাসনের অধীনে) ঃ ৩৬২
যুক্তরাষ্ট্রের মোট হামলা (২০০৪ থেকে) ঃ ৪১৩
মোট মৃতের সংখ্যা: ২৪৩৮ - ৩৯৪২
মোট বেসামরিক মৃতের সংখ্যা: ৪১৬ - ৯৫৯
মোট শিশু মৃতের সংখ্যা: ১৬৮ - ২০৪
মোট আহত সংখ্যা: ১১৪২ 


উৎসঃ The Bureau of Investigative Journalism (http://www.thebureauinvestigates.com/…/almost-2500-killed-…/)

আপনিই বলুন, কালো পতাকাবাহীদের জন্য আটলান্টিক সাগর পাড়ি দেওয়া জরুরী নাকি বৃহত্তর হিন্দুস্তানের অন্তর্গত পাকিস্তানে রোমান মহাজোটের পদলেহনকারী সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ বেশি জরুরী। 

আমরা যারা এই উম্মতের তথা মুসলিম বিশ্বের চলমান ঘটনাবলী খুব সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছি এবং "২০১৪ থেকে ২০১৮ থেকে ২০২১ থেকে ২০২৫" টাইম লাইন পার করছি, নিঃসন্দেহে রোমান মহাজোটের নেতৃত্বদানকারী যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন হামলায় বৃহত্তর হিন্দুস্তানের অন্তর্গত পাকিস্তানে রোমান মহাজোটের পদলেহনকারী সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যক্ষ ও পরক্ষ ভূমিকা এবং তাদের বিরুদ্ধে কালো পতাকাবাহীদের বর্তমান তৎপরতা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।

Wednesday, April 22, 2015

নিউইয়র্ক টাইমসঃ খিলাফতের দাবীদার কালো পতাকাবাহীদের মনস্তত্ত্বের সন্ধানে রোমান মহাজোটের নেতৃত্বদানকারী যুক্তরাষ্ট্র

বর্তমানে খিলাফতের দাবীদার কালো পতাকাবাহীরা রোমান মহাজোটের নেতৃত্বদানকারী যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া কালো পতাকাবাহীরা এখন শুধু ইরাক ও সিরিয়ার জন্যই হুমকি নয়; বরং তাদের ক্রমবর্ধমান অগ্রযাত্রা দূরপ্রাচ্য ইউরোপ ছাড়িয়ে কানাডা পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে বলে মনে করা হচ্ছে। অপরদিকে কালো পতাকাবাহীদের দমনে শুধু সামরিক হামলা যে পর্যাপ্ত নয় অনেক ক্ষেত্রে তা প্রমাণিত সত্য। তাই এই কালো পতাকাবাহীদের দমনে তাদের মনস্তাত্ত্বিক আচরণ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দেশটির স্পেশাল অপারেশন ফোর্সের কমান্ডার মেজর জেনারেল মিকায়েল কে. নাগাতাকে। তার প্রধান লক্ষ্য কালো পতাকাবাহীরা কিভাবে এতো বিপজ্জনক একটি শক্তিতে পরিণত হলো তা খুঁজে বের করা।

কালো পতাকাবাহীদের দমনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর- পেন্টাগন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা গোয়েন্দা এজেন্সিগুলো থেকে নতুন কোনো আইডিয়া আসছে না। এই হতাশা শুধু নাগাতার নয়; বরং একই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন সরকারি অনেক কর্মকর্তাও। এমনকি একই দীর্ঘশ্বাস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ শীর্ষ সামরিক উপদেষ্টাদেরও। কালো পতাকাবাহীদের দমনে এরই মধ্যে দেশটি শত শত কোটি ডলার ব্যয় করেছে। কয়েক মাস ধরে চালিয়ে যাচ্ছেকালো পতাকাবাহী বিরোধী বিমান হামলা। তবুও যেন তাদের সব পদক্ষেপই ব্যর্থ হচ্ছে। জেনারেল নাগাতা বলেন, আমরা তাদের কার্যক্রম বুঝতে পারছি না। আর যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা তাদের না বুঝবো, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের পরাজিত করতে পারব না। নাগাতা চার মাস ধরে সামরিক বলয়ের বাইরে থেকে কালো পতাকাবাহীদের শক্তির উৎস খুঁজছেন। এ সময় তিনি সহযোগিতা নিয়েছেন বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপকসহ বেসামরিক বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের। তিনি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন, কিভাবে কালো পতাকাবাহীরা একটি অঞ্চলের জনগণের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা শুধু কালো পতাকাবাহী যোদ্ধাদের সংখ্যা বা অস্ত্রের ক্ষমতার ওপরই নির্ভর করে না। কিন্তু তা কিসের ওপর নির্ভর করে, তা খুঁজে পেতে তিনি তাদের মনস্তাত্ত্বিক কৌশল; যেমন- জনগণ, ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা, অর্থনীতি ইত্যাদি বিশ্লেষণের চেষ্টা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের কিছু সামরিক কর্মকর্তার সম্মেলনের সারাংশ জনসম্মুখে আসার পর আইএস নিয়ে তাদের এমন দুশ্চিন্তার খবর প্রথমবারের মতো প্রকাশ পেয়েছে। ওই সারাংশ থেকে আরো জানা গেছে, সামরিক বিশেষজ্ঞরাকালো পতাকাবাহীদের নিয়ে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের কোন্দলের বিষয়বস্তুকালো পতাকাবাহীদের মূল লক্ষ্য কী, তা নিয়ে। একদল বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য- আদর্শিক, কিন্তু বাকিরা বলছেন, ভৌগোলিক। জেনারেল নাগাতা এই মতবিরোধকে আরো উস্কে দিচ্ছেন; এই বিতর্ক নিয়ে তারা যেন সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়, তিনি তার তাগিদ দেন। তিনি জানান, এমন বিতর্ক থেকেই বোঝা যায়, কালো পতাকাবাহীদেরকে বোঝা কত কঠিন একটি কাজ। জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির সাবেক প্রধান এবং তিন তারকাপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল মিকাইল টি. ফ্লিনও একই রকম প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। বিভিন্ন ব্যবসায়ী, শিক্ষক এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে করা তার ওই প্রতিবেদন চলতি মাসে প্রকাশ পাওয়ার কথা রয়েছে।

ওবামার সন্ত্রাসবাদবিরোধী ও স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা উপদেষ্টা লিসা মোনাকো বলেন, এখন সউদি আরব, জর্ডান, লেবানন এবং লিবিয়ায় শাখা বিস্তার করতে চাইছে কালো পতাকাবাহীরা। এটা খুব বড় উদ্বেগের বিষয়। প্রতিমাসে প্রায় এক হাজার বিদেশি যোদ্ধা ইরাক ও সিরিয়ায় প্রবেশ করে, যাদের বেশির ভাগেরই উদ্দেশ্য কালো পতাকাবাহীদের সাথে যোগ দেয়া। সিআইএ ডিরেক্টর জন ও’ব্রেনান বলেন, অনেক দেশের আদর্শিক দুর্বলতার সুযোগে কালো পতাকাবাহীদের আদর্শ শক্তিশালী হচ্ছে। তাদের এই কার্যক্রমকে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। উল্লেখ্য, জেনারেল নাগাতা ৩২ বছর সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সেনেগাল, বলকান উপদ্বীপ ও ইরাকে কাজ করেছেন।

নাগাতা সম্পর্কে অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল স্ট্যানলি ম্যাকক্রিস্টাল বলেন, তিনি অসম্ভব চাপের মধ্যে কাজ করতে ভালোবাসেন। গত বছর জুলাই মাসেই কালো পতাকাবাহীদের ওপর গবেষণার জন্য নাগাতা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে নতুন একটি থিঙ্কট্যাঙ্ক গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, কোন্ কারণেকালো পতাকাবাহীরা খুব আকর্ষণীয়? যে আকর্ষণের কারণে সেখানকার মুসলিমরা বিশেষ করে যুবকরা কালো পতাকাবাহীদের সাথে যোগ দিচ্ছে? আর এই আকর্ষণের জোরেই তাদের এই সুবিশাল অর্থ ও অস্ত্র ভান্ডার। তিনি আরো বলেন, আমার মনে হয়, কালো পতাকাবাহীদের সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক শক্তি আমি অনুধাবন করতে পারব।


আমরা যারা এই উম্মতের তথা মুসলিম বিশ্বের চলমান ঘটনাবলী খুব সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছি এবং "২০১৪ থেকে ২০১৮ থেকে ২০২১ থেকে ২০২৫" টাইম লাইন পার করছি, নিঃসন্দেহে কালো পতাকাবাহীদের মনস্তত্ত্বের সন্ধানে রোমান মহাজোটের নেতৃত্বদানকারী যুক্তরাষ্ট্রের এই তৎপরতা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।

কারণ, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ থেকে বলেন, একদা আমরা নবী করীম সাঃ এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উনি বলতে ছিলেনঃ

"ঐ দিক থেকে একটি দল আসবে, হাত দিয়ে তিনি পূর্ব দিকে ইশারা করলেন - তারা কালো পতাকাবাহী হবে। তারা পূর্ণ ইসলামী শাসনের (খিলাফতের) দাবী জানাবে। কিন্তু তাদেরকে দেওয়া হবে না। দুই বার বা তিনবার এভাবে দাবী জানাবে। কিন্তু তখনকার শাসকগণ তা গ্রহণ করবে না। অতঃপর তারা (কালো পতাকাবাহীরা) যুদ্ধ করে জয়ী হবে এবং তাদেরকে শাসনভার প্রদান করা হবে। কিন্তু তারা (কালো পতাকাবাহীরা)  তা গ্রহণ করবে না। শেষপর্যন্ত তারা  (কালো পতাকাবাহীরা) ইসলামী শাসন ব্যবস্থার (খিলাফতের) দায়িত্ব আমার পরিবারস্থ একজন লোকের (ইমাম মাহদির) হাতে সোপর্দ করে দিবে। সে জমিনকে ন্যায় এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে ভরে দিবে, ঠিক যেমন ইতিপূর্বে অন্যায় অত্যাচারের মাধ্যমে ভরে দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ঐ সময় জীবিত থাকো, তবে অবশ্যই তাদের দলে এসে শরীক হয়ে যেও – যদিও বরফের উপর কনুইয়ে ভর দিয়ে আসতে হয় "।

(আবু আমর উদ্দানীঃ ৫৪৭, মুহাক্কিক আবু আব্দুল্লাহ সাফেঈ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন)

হেজাজ বা মক্কা মদিনার 'পূর্ব দিক' বলতে ইরাক থেকে খোরাসান বা আফগানিস্তানকে বুঝায়। 

Sunday, April 19, 2015

========একটি পরামর্শমূলক বৈষয়িক আলোচনা==========

প্রশ্নকারীঃ ভাই, আসসালামু আলাইকুম। আমার একটা বিষয়ে প্রশ্ন আছে।

উত্তরদাতাঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। আপনি একটা বিষয়েই প্রশ্ন করবেন প্লিজ।

প্রশ্নকারীঃ আমি আমার একটি ফ্ল্যাট এবং আমার বন্ধু তার এক খণ্ড জমি বিক্রি করতে চাচ্ছি, কিন্তু বিক্রি বাজারে মন্দাভাব থাকায় মনের মতো দাম পাচ্ছি না, আমার কি করনীয়? আরও কিছুদিন অপেক্ষা করব? করলে কতদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত হবে?

উত্তরদাতাঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। আপনি এবং আপনার বন্ধু কি শেষ জামানার যুদ্ধ-বিগ্রহ বিষয়ক হাদিসে বর্ণিত নিচের কোনো ভূখণ্ডের অন্তর্গত?

১। মাগরিব (লিবিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়া, মউরোতানিয়া,সাহারা)
২। আল মিছর (মিশর)
৩।শাম ( সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন, প্যালেস্টাইন)
৪।জাজিরাতুল আরব (সৌদি আরব,বাহরাইন, ওমান, কাতার, আরব আমিরাত)
৫।ইয়েমেন
৬। আল আরাক (ইরাক ও কুয়েত)
৭। ফারিস (ইরান)
৮।বৃহত্তর খোরাসান (যার কেন্দ্রভূমি আফগানিস্তান, যার বিস্তৃতি উত্তর-পশ্চিম আফগানিস্তান - হেরাত, বালখ, কাবুল, গাজনি, কান্দাহার দিয়ে বিস্তৃত, উত্তর ও দক্ষিন-পূর্ব উজবেকিস্তান -সামারকান্দ, বুখারা, সেহরিসাবজ, আমু নদী ও সীর নদীর মধ্যাঞ্চল দিয়ে বিস্তৃত, উত্তর-পূর্ব ইরান - নিশাপুর, তুশ, মাসহাদ, গুরগান, দামাঘান দিয়ে বিস্তৃত, দক্ষিন তুর্কমেনিস্তান -মেরি প্রদেশ – মার্ভ, সানজান, দক্ষিন কাজিকিস্তান, উত্তর ও পশ্চিম পাকিস্তান -মালাকান্দ, সোয়াত, দীর ও চিত্রাল, উত্তর পশ্চিম তাজিকিস্তান - সুগ্ধ প্রদেশের খোজান্দ, পাঞ্জাকেন্ত দিয়ে বিস্তৃত
৯। হিন্দ (পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল,ভুটান)
১০। কনস্ট্যান্টিনোপল (তুরস্ক)
১১। খাজার সাম্রাজ্য (রাশিয়া)
১২। আধুনিক রোমান সাম্রাজ্য (মূল ইউরোপ,কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র)

প্রশ্নকারীঃ আমি ও আমার বন্ধু হিন্দের অন্তর্গত বাংলাদেশে অবস্থান করছি।

উত্তরদাতাঃ বিক্রির বর্তমান চেষ্টা অব্যাহত রাখা উচিত এবং চাহিদার কিছুটা কাছাকাছি পেলেও বিক্রি করাই উত্তম। তবে ২০১৮ সালের মধ্যে (অর্থাৎ ২০১৯ সালের পূর্বে) বিক্রি করা সর্বত্তম।

প্রশ্নকারীঃ যদি এর পরেও অপেক্ষা করি?

উত্তরদাতাঃ ইনশাল্লাহ, বিশ্ব ও হিন্দ (পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল,ভুটান) এর চলমান সময় এবং আনে ওয়ালা পরিস্থিতি ২০১৯ সাল নাগাদ এই উত্তরের যথার্থতা উপব্ধিতে সাহায্য করবে।

প্রশ্নকারীঃ জাজাকাল্লাহ খাইর।

Sunday, April 12, 2015

ধর্মান্ধঃ কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান?

এ আবার কেমন প্রশ্ন! ছোট বাচ্চাও তো জানে কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান। অন্ধ হল, যে চোখে দেখে না; যার দৃষ্টিশক্তি নেই। যার কাছে সূর্যের আলো আর অমাবশ্যার অন্ধকার সমান। যার কাছে আলো-আঁধার, কালো-সাদা সমান। আর যে চোখে দেখে সে চক্ষুষ্মান। তাহলে এ প্রশ্ন কেন, আর এর উত্তরই বা কী? এ অন্ধ তাহলে কোন্ অন্ধ?

হাঁ, প্রকৃত অন্ধ কে, এ প্রশ্নের উত্তর জেনে নিই সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে। যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে। তাকে দান করেছেন দৃষ্টিশক্তি ও চিন্তাশক্তি।  আল্লাহ বলছেন

"প্রকৃতপক্ষে চোখ অন্ধ হয় না, বরং অন্ধ হয় বক্ষস্থিত হৃদয়।" (সূরা হজ্ব ২২ : ৪৬)

তাহলে হৃদয়ও অন্ধ হয়! বরং যার হৃদয় অন্ধ সেই সবচেয়ে বড় অন্ধ। হৃদয় যদি অন্ধ না হয় তাহলে তো নবীকে চর্মচক্ষে না দেখেও একজন অন্ধ  হেদায়েতের আলো গ্রহণ করে সাহাবীর মর্যাদায় ধন্য হতে পারে। দৃষ্টির অন্ধত্ব আলোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। কত অন্ধ আছে, যে  হেদায়েতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে। কিন্তু যার হৃদয় অন্ধ; সূর্যের আলোতেও সে পথ খুঁজে পায় না!

"হে আমাদের রব! তুমি আমাদের যে হেদায়েত দান করেছ তারপর আর আমাদের অন্তরকে বক্র ও সত্যলংঘনপ্রবণ করো না। এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদেরকে বিশেষ রহমত দান কর। নিশ্চয় তুমিই মহাদাতা"। (সূরা আলে ইমরান ৩ : ৮)

যে এই পৃথিবীতে অন্ধ সে তো চিরঅন্ধ নয়। বরং চিরঅন্ধ হল, এই পৃথিবীতে যার দৃষ্টিশক্তি আছে কিন্তু তা দিয়ে সে আলো দেখতে পায় না। পার্থক্য করতে পারে না আলো-আঁধারের মাঝে, হক-বাতিলের মাঝে। আলোকে ভাবে অন্ধকার, আর মরিচিকাকে ভাবে পিপাসা নিবারণকারী শীতল পানি। এরা আল্লাহর নূর-কে অন্ধকার ভেবে (বরং আলো বলে জানার পরও) মুখ ফিরিয়ে নেয় আর ছোটে অন্য আলোর পিছে। আল্লাহ ওদের সম্পর্কেই বলছেন-

"আর যে আমার উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন হবে বড় সংকটময়। আর কিয়ামতের দিন আমি তাকে অন্ধ করে উঠাব। সে বলবে, হে রব! আমাকে যে অন্ধ করে ওঠালে? আমি তো দুনিয়ায় চক্ষুষ্মান ছিলাম! আল্লাহ বলবেন, এভাবেই তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। আজ সেভাবেই তোমাকে ভুলে যাওয়া হবে।" (সূরা ত্ব-হা ২০ : ১২৪-১২৬)

হাঁ, আজ যেমন তারা নিজেদের চক্ষুষ্মান, মহাজ্ঞানী বলে দাবি করছে আর যারা আল্লাহর যিকর ও আল্লাহর হেদায়েতের অনুসরণ করছে, যারা অন্য সকল আলো (আলো নামক অন্ধকার) ছেড়ে ইসলামের নূর-এর অনুসরণ করছে- তাদেরকে অন্ধ বলছে,ধর্মান্ধ বলছে, যারা মঙ্গলপ্রদীপে মঙ্গল খুঁজে ফিরছে, আর দ্বীনদারিকে বলছে, সেকেলে, পশ্চাৎপদ ও কুসংস্কার, কাল কিয়ামতের দিন তারা দেখতে পাবে কারা অন্ধ আর কারা চক্ষুষ্মান!

আজ যেমন তারা নিজেদের জ্ঞানী ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন বলে দাবি করে, কাল কিয়ামতের দিনও বলবে, আল্লাহ! আমাকে যে অন্ধ করে ওঠালে? আমি তো দুনিয়ায় দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ছিলাম (বরং দৃষ্টিশক্তিসম্পন্নদের সেরা ছিলাম)!!

ওরা আসলে দুনিয়াতেও অন্ধ; যদিও ওদের চোখ আছে। কারণ অন্ধ যেমন বুঝতে পারে না, কোনটা সাদা কোনটা কালো, তেমনি ওরাও চিনতে পারে না সাদা-কালো, আলো-আঁধার। আল্লাহ ওদেরকে দুনিয়াতেও অন্ধ বলেছেন-

"আর যে ব্যক্তি দুনিয়ায় অন্ধ হয়ে থেকেছে সে আখেরতেও অন্ধ ও অধিকতর পথভ্রষ্ট থাকবে।" (সূরা বনী ইসরাঈল ১৭ : ৭২)

আরেকটি বিষয় হল, (ওদের কথা থেকে যেমনটা মনে হয়) বাস্তবেই যদি ধর্মান্ধ বলে তারা এরকম বোঝাতে চায় যে, ধার্মিক ব্যক্তিরা ধর্মের কারণে মঙ্গলপ্রদীপ, মঙ্গল শোভাযাত্রা, প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ইত্যাদি সংস্কৃতি (হোক তা পৌত্তলিকদের ধর্মীয় বিষয়) গ্রহণ করছে না, এগুলো থেকে বারণ করছে- এগুলো হল, ধর্মান্ধতা; তাহলে তাদের প্রতি করুণাই করতে হয়। এগুলোর পর ধর্ম বলে আর কী থাকে?

ধর্মান্ধ শব্দের আরেকটি কপটতা হল, যাদেরকে ওরা ধর্মান্ধ বলছে তারা যেন অন্ধভাবে ধর্ম পালন করছে আর ওরা সঠিকভাবে ধর্ম পালন করছে (?!)

মাঝেমধ্যেই ওরা ওদের লেখা ও বক্তব্যে বা নাটক ও টকশোতে ধর্মান্ধ শব্দ ব্যবহার করছে এবং একরকম উপদেশের সুরে বলতে চাচ্ছে, ধর্ম সঠিকভাবে পালন করা দরকার। অথচ বাস্তবতা হল, ওদের কেউ নাস্তিক, কেউ ধর্মবিদ্বেষী।

আসলে ওরা আখেরাতে অবিশ্বাসী, প্রবৃত্তিপূজারী, সত্য প্রত্যাখ্যানকারী ও প্রকৃত অন্ধ। আল্লাহ ওদেরকে অন্ধ বলছেন আর ওরা যাদেরকে ধর্মান্ধ বলে গালি দিচ্ছে তাদের জ্ঞানী (চক্ষুষ্মান) বলছেন-

"আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, যে ব্যক্তি তা সত্য বলে বিশ্বাস করে আর যে অন্ধ তারা কি সমান? বস্তুত উপদেশ কেবল তারাই গ্রহণ করে, যারা জ্ঞানী।" -সূরা রাদ ১৩ : ১৯

সুতরাং আমরা দিল থেকে বলি

"রব হিসেবে আমি আল্লাহকে পেয়ে সন্তুষ্ট। দ্বীন হিসেবে ইসলাম পেয়ে সন্তুষ্ট। নবী হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পেয়ে আমি সন্তুষ্ট"। 

হে আল্লাহ! ঈমানকে আমাদের কাছে (সবচেয়ে) প্রিয় বানিয়ে দিন এবং ঈমানকে আমাদের অন্তরে সুশোভিত করে দিন। কুফ্র, পাপাচার ও নাফরমানীকে আমাদের কাছে ঘৃণার বিষয় বানিয়ে দিন আর আমাদের করুন সুপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। 

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ ফজলুল বারী

Saturday, April 11, 2015

বিশ্লেষণঃ কালো পতাকাবাহীদের জয়ী হবার বিষয়ে একটি হাদিস এবং ন্যাটো’র আদলে আরব ভুখন্ডগুলোর একটি জোট সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতি

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ থেকে বলেন, একদা আমরা নবী করীম সাঃ এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উনি বলতে ছিলেনঃ

"ঐ দিক থেকে একটি দল আসবে, হাত দিয়ে তিনি পূর্ব দিকে ইশারা করলেন - তারা কালো পতাকাবাহী হবে। তারা পূর্ণ ইসলামী শাসনের দাবী জানাবে। কিন্তু তাদেরকে দেওয়া হবে না। দুই বার বা তিনবার এভাবে দাবী জানাবে। কিন্তু তখনকার শাসকগণ তা গ্রহণ করবে না। অতঃপর তারা (কালো পতাকাবাহীরা) যুদ্ধ করে জয়ী হবে এবং তাদেরকে শাসনভার প্রদান করা হবে। কিন্তু তারা (কালো পতাকাবাহীরা)  তা গ্রহণ করবে না। শেষপর্যন্ত তারা  (কালো পতাকাবাহীরা) ইসলামী শাসন ব্যবস্থার দায়িত্ব আমার পরিবারস্থ একজন লোকের (ইমাম মাহদির) হাতে সোপর্দ করে দিবে। সে জমিনকে ন্যায় এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে ভরে দিবে, ঠিক যেমন ইতিপূর্বে অন্যায় অত্যাচারের মাধ্যমে ভরে দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ঐ সময় জীবিত থাকো, তবে অবশ্যই তাদের দলে এসে শরীক হয়ে যেও – যদিও বরফের উপর কনুইয়ে ভর দিয়ে আসতে হয় "। 

(আবু আমর উদ্দানীঃ ৫৪৭, মুহাক্কিক আবু আব্দুল্লাহ সাফেঈ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন) 

হেজাজ বা মক্কা মদিনার 'পূর্ব দিক' বলতে ইরাক থেকে খোরাসান বা আফগানিস্তানকে বুঝায়।


যেহেতু এই কালো পতাকাবাহী বাহিনী ইমাম মাহদির হাতে শাসন ভার অর্পণ করবে তাতে বুঝা যায় যে, এটি শেষ জামানার অংশ হিসাবে হতে হবে। আসুন, আমরা একটু মিলিয়ে নেই, হাদিসের ধারাবাহিকতায় আমরা কোন জামানায় বসবাস করছি। অন্যথায়, 'পূর্ব দিক' থেকে যে বাহিনীই কালো পতাকা নিয়ে বের হোক না কেন তার গুরুত্ব অনুধাবন করা যাবে না। 


হযরত হুজায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 


নবুওয়াত ব্যবস্থা তোমাদের মাঝে ততদিন থাকবে, যতদিন আল্লাহ তাআলা মঞ্জুর করেন। অতঃপর যখন ইচ্ছা, তখন তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। তারপর (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পর) তোমাদের মাঝে নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হবে এবং তা আল্লাহ তাআলা যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে (খুলাফায়ে রাশিদিন এর যুগ)অতঃপর তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। তারপর হানাহানির রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তা আল্লাহ তাআলার যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে (রাজতন্ত্র)অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় তার বিলুপ্তি ঘটবে। তারপর জবর দখল তথা আধিপত্য বিস্তারের রাজত্ব কায়েম হবে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় দুনিয়াতে কিছুকাল বিরাজমান থাকবে (নানা ভূখণ্ডে বর্তমান একনায়কতন্ত্র ও রকমারি বাদ ও তন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত স্বৈর শাসকগণ) তারপর যখন আল্লাহ ইচ্ছা করবেন, তখন এরও অবসান ঘটবে। অতঃপর নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত রাষ্ট্র-ব্যবস্থা কায়েম হবে। এ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ রইলেন”


(মুসনাদে আহমদঃ ৪/২৭৩)




উপরের হাদিসের প্রেক্ষিতে আমরা যে যুগের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি, তা হচ্ছে অন্যায়, অবিচার ও ফেতনা ফ্যাসাদ ছড়িয়ে পড়ার যুগ। আল্লাহ তা’আলার জমিনে সর্বোচ্চ শাসন ব্যাবস্থা (sovereignty) একমাত্র আল্লাহর হওয়া উচিৎ। যদি আল্লাহর জমিনে আল্লাহর কানুন ব্যতীত মানুষের তৈরি কোন কানুন বাস্তবায়নের অপচেস্টা চালানো হয়, তবে অবশ্যই জমিনে অন্যায় অবিচার ও ফেতনা ফ্যাসাদে ভরে যাবে। 


১৯২৪ সালে উসমানি খেলাফতের ভেঙ্গে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ ৫৭ টি ভূখণ্ডে বিভক্ত হয়ে বর্তমানে একনায়কতন্ত্র ও রকমারি বাদ ও তন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত স্বৈর শাসকদের দ্বারা শাসিত। ‘অতঃপর নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হবে’ - মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ উক্তিই প্রমাণ করে সারা বিশ্বে ইসলামী শাসন পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হবে। রাজত্বের লাগাম মুসলিমদের হস্তগত হবে। কখনো এর ব্যতিক্রম হবে না। কারণ, বিভিন্ন বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তা যথা সময়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। ইতিহাসে তার বহু প্রমাণ রয়েছে। এবং আমরা সেই রকমই একটি ‘ট্রাঞ্জিকশন ফেজ’ এ আছি। 


এবার আমরা খোরাসানের দিকে তাকাই। আশির দশকে খোরাসানের কেন্দ্রস্থল আফগানিস্তান সমাজতন্ত্র নামক পাগলা ঘোড়ার সওয়ার তৎকালীন পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বারা আক্রান্ত হয়। দীর্ঘ দশ বছরের (১৯৭৯ – ১৯৮৯) যুদ্ধের পর পরাশক্তি  সোভিয়েত ইউনিয়ন শুধু পরাজিতই হয়নি, কয়েক বছরের মাথায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে আমু নদীর ওপারে অবস্থিত মধ্য এশিয়ার দেশগুলো যাকে ইসলামের পরিভাষায় ‘মা-আরউন্নহর’ বা ‘নদীর ওপার’ বলা হয়, সে সব দেশঃ উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান,কাজিকিস্তান এর অন্তর্ভুক্ত যা কিনা বৃহত্তর খোরাসানের একটি অংশ, সমাজন্ত্রমুক্ত হয়ে স্বাধীনভূখণ্ডরূপে আত্মপ্রকাশ করে। যদিও এই যুদ্ধকে মুসলিম জাহান ধর্মযুদ্ধ হিসাবে গ্রহণ করে এবং ‘সে যেন উক্ত বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে যায় বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে হলেও’ এর উপর আমল করার মতোই সকল মুসলিম ভূখণ্ড হতে মুজাহিদরা আগমন করে। যদিও এদের কারও হাতেই কালো পতাকা ছিল না। 


১৯৮৯ সালে রাশিয়ানরা ফিরে গেলে তাদের দালালদেরকে কাবুল থেকে হটিয়ে ১৯৯২ সালে ইসলামিক স্টেট অফ আফগানিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে একটি রঙ্গিন পতাকা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনেকের মধ্যে পশ্চিমারা পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়। আর একে কেন্দ্র করে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয় এবং দেশের আইন শৃঙ্খলার ব্যপক বিপর্যয় দেখা যায়। একদিকে যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশের পুনর্গঠনের চ্যলেঞ্জ অন্যদিকে যুদ্ধ ফেরত নেতাদের ‘রকমারি বাদ আর তন্ত্র’ এর উপর ভিত্তি করে ক্ষমতার লড়াই। 


অবশেষে গ্রাম্য এক কওমি মদ্রাসার শিক্ষক গুটি কয়েক দরিদ্র ছাত্রদের নিয়ে শুরু হয় শুদ্ধি অভিযান। একের পর এক প্রদেশ তাদের নিয়ন্ত্রণে আসতে থাকে। অবশেষে ১৯৯৬ সালে কাবুলের নিয়ন্ত্রন নেওয়ার পর তারা দেশের আনুষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রনের ঘোষণা দেয়। জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত রঙ্গিন পতাকা হটিয়ে উড়িয়ে দেয় ইসলামিক ভূখণ্ডের সত্যিকার পতাকা ‘লিওয়া’ – সাদার ভিতরে কালো  রঙ্গের কালিমা খচিত।  আর সেনাবাহিনীর পতাকা হল ‘আর রায়া’ – কালোর ভিতরে সাদা রঙ্গের কালিমা খচিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও যুদ্ধের সময় কালো পতাকা ব্যবহার করতেন, যা ‘উকাবা’ নামে পরিচিত।


শুরু হল খোরাসানের কেন্দ্রস্থলে কালো পতাকাবাহী দলের যাত্রা। পশ্চিমা বিশ্ব তথা আধুনিক রোমান মহাজোট হারালো তাদের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রন। শুরু হল দাজ্জালি মিডিয়ার প্রচার যুদ্ধ। মিডিয়াতে দেখাতে লাগলো এই দলকে সন্ত্রাসী হিসাবে।  


পশ্চিমা মিডিয়ার বদৌলতে জানা গেল তাদের শাসন ব্যবস্থায় তাদের কঠোর অবস্থান। কিন্তু বিচার হয় কাফের, মুনাফিক আর ফাসেকদের হৃদয় কাঁপানো আইন – শরিয়াহ আইনে। শুরু হল চতুর্মূখী অপপ্রচার।  
আমরা জানি, ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে প্রথমবারের মতো কালো পতাকাবাহীরা যখন পূর্ণ ইসলামিক শাসনের দাবী জানিয়েছিল তখন পৃথিবীর কেউ তা মেনে নেয়নি। 

সময় গড়িয়ে এল ২০০১।


২০০১ এ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আধুনিক রোমান মহাজোটের স্থল ও আকাশ যোগে আক্রমণ। জোট ও তাদের মিত্রদের (জাতীয়তাবাদী) রঙ্গিন পতাকার সংখ্যা ২০১১ সালে এক পর্যায়ে ৪৯ এ এসে ঠেকলঃ আলবেনিয়া, আরমেনিয়া, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, আজারবাইজান, বাহরাইন, বেলজিয়াম, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, বুলগেরিয়া, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, এল সালভাদর, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জর্জিয়া, জার্মানি, গ্রীস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জর্ডান, রিপাবলিক অব কোরিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবারগ, মালয়েশিয়া, মঙ্গোলিয়া, মন্তেনিগ্রো, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়া রিপাবলিক অফ মেসিডোনিয়া, টোঙ্গা, তুর্কি, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র  

কালো পতাকা বাহীদেরকে হটিয়ে বসানো হল পুতুল শাসক। কালো পতাকাবাহীরা শাসনভার ছেড়ে দিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লো। 



২০০১ এ খোরাসান আক্রমণের পর থেকে আধুনিক রোমান মহাজোটের নেতৃত্বদানকারী ভূখণ্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসক নেতা জর্জ বুশ হেজাজের পূর্ব দিকের আরেক ভূখণ্ড ইরাক আক্রমণের জন্য নানারূপ অজুহাত খুঁজতে থাকে। দুই বছর যাবত পশ্চিমা দাজ্জালি মিডিয়া ও বিশ্বের বিভিন্ন ভূখণ্ডের দালাল মিডিয়ার মাধ্যমে সারা ইরাককে বিশ্বে নিউক্লিয়ার বোমা তৈরিকারী এবং সন্ত্রাসের মদদদাতা হিসাবে প্রচার করে মিডিয়া যুদ্ধ করতে থাকে।

অবশেষে একক সিদ্ধান্তে তথাকথিত গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠান জাতি সংঘের তোয়াক্কা না করে ২০০৩ সালের ২০ শে মার্চ রাত ২:৩০ এ বাগদাদে বোমারু বিমান হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ড নামক বর্তমান কালের দুই পশ্চিমা কর্ণধার ইরাক আক্রমণ করে। এরপরের দিনই যুক্তরাষ্ট্র (১,৪৮,০০০ সৈন্য), ইংল্যান্ড (৪৫,০০০ সৈন্য), অস্ট্রেলিয়া (২,০০০ সৈন্য) ও পোল্যান্ড (১৯৪ জন সৈন্য) কুয়েত সীমানার নিকটবর্তী পদেশ বসরাতে পদাতিক অভিযান শুরু করে।  

পরবর্তীতে তাদের এই জোটের রঙ্গিন পতাকাবাহী ভূখণ্ডের সংখ্যা চল্লিশে গিয়ে পৌঁছেঃ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রুমানিয়া, এলসালভাদর, এস্তোনিয়া, বুলগেরিয়া, মালডোভা, আলবেনিয়া, ইউক্রেইন,  ডেনমার্ক, চেক রিপাবলিক, দক্ষিন কোরিয়া, জাপান,  টোঙ্গা,  আজারবাইজান, বসনিয়া-হারজেগোভিনা, মেসিডোনিয়া, লাটভিয়া, পোল্যান্ড, কাজাখস্তান,আরমেনিয়া,মংগোলিয়া, জর্জিয়া,  স্লোভাকিয়া,  লিথুনিয়া,  ইটালি,  নরওয়ে, হাঙ্গেরী, নেদারল্যান্ড, পর্তুগাল, নিউজিল্যান্ড, থাইল্যান্ড,  ফিলিপাইন্স,  হন্ডোরাস,  ডমিনিকান রিপাবলিক,  স্পেন,  নিকারাগুয়া,  আইসল্যান্ডঅষ্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুর। 

আল্লাহ যখন জমিনে কোন কিছু ঘটাতে চান, তখন উনি তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেনইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক যে শাসন ব্যবস্থা ইরাকের ভূখণ্ডে সম্ভব হয়নি জাতীয়তাবাদী সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী সাদ্দাম হোসেনের আমলে, তা পুনঃনির্মিত হল পশ্চিমাদের আগ্রাসনের পরে। ১৫ ই অক্টোবর ২০০৬ তে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাহ এর ইসালামপন্থীরা Islamic State of Iraq (ISI) গঠনের ঘোষণা দিল। তারা নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় আল আনবার প্রদেশ, নিনাওয়া প্রদেশ, কিরকুক প্রদেশ, সালাদিন প্রদেশের অধিকাংশ এবং বাবিল, দিয়ালা, বাগদাদ প্রদেশের একাংশে। আর বাকুবাকে রাজধানী ঘোষণা করে এবং মার্কিন জোটের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ করতে থাকে। এমনকি ২০১১ সালে জোট বাহিনীর প্রস্থানের পরও তারা আজ পর্যন্ত ইরাকের পুতুল সরকারের মোকাবিলা করছে। এই ভূখণ্ডটি পতাকা কালোর ভিতরে সাদা কালিমা খচিত, এরা জাতীয়তাবাদী কোন রঙ্গিন পতাকা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে।  

২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে সিরিয়াতে বনু কাল্ব গোত্রের অত্যাচারী শাসক বাশার আল আসাদ আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা’আর সাথে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এরপরে ২০১২ সালে এই Islamic State of Iraq (ISI) সেই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ পূর্বক সীমানা বাড়িয়ে সিরিয়ার আল রাক্কা, ইদলিব এবং আলেপ্পো প্রদেশে নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে এবং নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডের নতুন নাম দেয় Islamic State of Iraq and Sham (ISIS). তাদের নিজস্ব কোর্ট ভবন, পুলিশ প্রশাসন, সামরিক শাখা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুনর্বাসন বিভাগসহ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাঠামো আছে।

অতঃপর ২০১৪ সালে মসুল বিজয়ের মধ্য দিয়ে এই কালো পতাকাবাহীরা বিশ্বের বুকে খিলাফতের ঘোষণা দেয় যার আয়তন ২,৪০,০০০ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি।

১৯৯৬ সালে খোরাসান বা আফগানিস্তানের কালো পতাকাবাহীদের ১৮ বছর পর দুনিয়ার বুকে দ্বিতীয়বার পরিপূর্ণ ইসলামিক শাসনের দাবী।

শুরু হল দাজ্জালি মিডিয়ার আবার প্রচার যুদ্ধ। মিডিয়াতে কালো পতাকাবাহী এই দলকে দেখানো হচ্ছে সন্ত্রাসী হিসাবে।বরাবরের মতই দুনিয়ার কোন শাসক তা মেনে নিতে রাজি নয়।

২০১৪ সালের আগস্ট মাস থেকে চলছে ৬২ টি রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত মহাজোটের আক্রমণ। এদের একদল আকাশপথে আক্রমণ করছে, একদল প্রশিক্ষণ দিচ্ছে আর আরেক দল সরাসরি স্থল যুদ্ধে লিপ্ত। 
 
 এমন পরিস্থিতিতে ‘মধ্যপ্রাচ্যে সংকট চলছে’ এটা আর কোনো খবর নয়। খবর হচ্ছে, একই সুঁতোয় গাঁথা এই সংকট মোকাবিলায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে।

আরব লীগ ইতোমধ্যে গত ২৯ শে মার্চ ২০১৫ তে  সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘ন্যাটো’র আদলে একটি সামরিক বাহিনী গড়ে তুলবে। প্রায় ৪০ হাজার সৈন্য সমৃদ্ধ এই অত্যাধুনিক বাহিনী যে কোনো সময় এই অঞ্চলে উদ্ভুত যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে। বিস্তারিতঃ http://www.theguardian.com/world/2015/mar/29/arab-leaders-agree-to-form-joint-military-force-to-combat-jihadis-in-region

আগামী কয়েক সপ্তাহ পরে অনুষ্ঠিতব্য আরব লীগের সম্মেলনেই আনুষ্ঠানিকভাবে এই বাহিনীর আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। বিভিন্ন আরব দেশের সৈন্যদের সমন্বয়েই গঠিত হবে বাহিনীটি।

পেশাগত সক্ষমতায় ন্যাটোর মতো অতটা শক্তিশালী না হলেও বিশ্বের সবচেয়ে সংকটাবর্তিত এলাকায় এমন একটি বাহিনীর উদ্ভব খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

প্রথম দিকে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেবে মিশর, জর্দান, সৌদি আরব, মরক্কো এবং সুদান। এর বাইরে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোরও প্রতিনিধিত্ব থাকবে। একজন সৌদি জেনারেলের কমান্ডে পরিচালিত বাহিনীটির সদরদপ্তর হবে মিশরে। একই সাথে এটির নিজস্ব অবকাঠামো এবং স্থায়ী কমান্ডিং সিস্টেম চালু করা হবে।

বর্তমানে যেভাবে আরব জোট গঠন করে ইয়েমেনে হুথিদের ওপর হামলা করা হচ্ছে ঠিক একইভাবে উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় যৌথ অভিযান চালানো হবে। ৪০ হাজার সদস্যের বাহিনীটিতে ৫ হাজার নৌ, ৫০০ থেকে ১ হাজার বিমান এবং বাকি প্রায় ৩৪ হাজার স্থলসেনা থাকবে। বিমান, সমুদ্র এবং স্থল বাহিনীর পাশাপাশি থাকবে স্পেশাল ফোর্সও।

বাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের খরচ বহন করবে ‘গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল’ (জিসিসি) আর সৈন্যদের বেতন-ভাতা দেবে বাহিনীতে যোগ দেয়া সংশ্লিষ্ট দেশগুলো।

বিগত কয়েক দশক ধরে সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় দেশগুলো যে পরিমাণ অস্ত্র এবং প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম কিনেছে, বিশেষ করে সমুদ্র ও স্থলপথের জন্য, তার সাথে মিশরীয় সেনাবাহিনী যোগ দিলে ‘আরব ন্যাটো’ যে কোনো ধরনের দুর্দমনীয় সামরিক অভিযান চালাতে সক্ষম হবে।

আমরা যারা এই উম্মতের তথা মুসলিম বিশ্বের চলমান ঘটনাবলী খুব সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছি এবং "২০১৪ থেকে ২০১৮ থেকে ২০২১ থেকে ২০২৫" টাইম লাইন পার করছি, নিঃসন্দেহে কালো পতাকাবাহীদের বিরুদ্ধে ন্যাটো’র আদলে আরব ভুখন্ডগুলোর এই সামরিক জোট বাহিনীটি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।