লেখকঃ মুহাম্মাদ ওমর জোয়ার্দার
অনেকে
স্বাধীনতা বলতে বোঝে যা ইচ্ছা তা করতে পারার সুযোগ। কিন্তু মানুষের সকল
ইচ্ছাই কি সঙ্গত বা মানুষ কি তার সকল ইচ্ছা পূরণ করতে পারে? কেউ করলে সে কি
মানুষ নামের উপযুক্ত থাকে?
চিন্তার
বিষয়ে যে একেবারে স্বাধীন সে তো পাগল, আর যে সঠিক নিয়মে চিন্তা করে সে
জ্ঞানী ও চিন্তাশীল। কাজকর্মে যে নিয়মের শৃঙ্খল মানে না সে তো উশৃঙ্খল।
মানুষ তাকে ঘৃণা করে আর যে নিয়ম মেনে চলে সে নিয়মানুবর্তী সমাজ তাকে সম্মান করে।
সামাজিক
শিষ্টাচার মেনে চললে মানুষ হয় ভদ্র, মেনে না চললে অভদ্র। মোটকথা চিন্তা
করলে দেখা যাবে, মানুষকে সর্বাবস্থায় নিয়মের অধীন থাকতে হয়। তাহলে তার
জীবন সুন্দর হয়, মানুষও তাকে ভালবাসে করে। পক্ষান্তরে নিয়ম-কানুনের শাসন
থেকে যে সম্পূর্ণ স্বাধীন হয়ে যায় সে নিজেকেও ধ্বংস করে, সমাজের জন্যও
অভিশাপ হয়ে দেখা দেয়।
আল্লাহ
তাআলা মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার জন্য যে পূর্ণাঙ্গ নিয়ম-কানুন
দান করেছেন তার নাম দ্বীন। চিন্তা- চেতনা এবং বোধ ও বিশ্বাস থেকে শুরু করে
মানব-জীবনের সকল বিষয়ের নিয়ম ও আদর্শ ইসলামে রয়েছে। লক্ষ করার বিষয় এই
যে, কুরআন মজীদে দ্বীনের আহকামকে বলা হয়েছে, ‘হুদূদুল্লাহ’ বা আল্লাহর
সীমারেখা। ‘সীমারেখা’ শব্দটিই সংযম ও শৃঙ্খলার অর্থ বহন
করে। সুতরাং একজন মুমিন-মুসলমান কখনো অসংযমী ও উচ্ছৃঙ্খল হতে পারে না। তার
ধর্ম ও আদর্শই তাকে উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন থেকে বিরত রাখে। বস্ত্তত আল্লাহর
সীমারেখার মধ্যে যে থাকে সেই প্রকৃত মানুষ এবং আল্লাহর প্রকৃত বান্দা।
পক্ষান্তরে যারা স্বাধীনতার নামে আল্লাহর নিয়ম-কানুন থেকে বের হয়ে যায়
তারা শুধু মনুষ্যত্বের সীমা থেকেই বের হয় না, নফস ও শয়তানের হাতে এমনভাবে
বন্দি হয় যে, তার দুনিয়া ও আখিরাত দুটোই বরবাদ হয়ে যায়। দেখুন, যে এক
আল্লাহকে মনিব মানে সে মেম্বার, চেয়ারম্যান, ওসি-ডিসি, জজ-কমিশনার, এসপি,
মেয়র, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এককথায় সকল মানুষের মানসিক গোলামী থেকে
মুক্ত। পক্ষান্তরে আল্লাহর
গোলামী ও আবদিয়াত থেকে স্বাধীন হলে সে কোটি মাবুদের গোলামীতে বন্দী।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অসংখ্য মাবুদ উত্তম, না এক মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ?’
আল্লাহর
হুকুম পর্দা করা। যে নারী এই হুকুমের অধীন সে নফস ও শয়তানের তাবেদারী
থেকে মুক্ত। তেমনি অসংখ্য মানুষের লোলুপ দৃষ্টি ও নির্যাতন; ইভটিজিং,
ধর্ষণ, আত্মহত্যা, অপহরণ ইত্যাদি থেকেও মুক্ত। পক্ষান্তরে যে এ বিধান থেকে
স্বাধীন সে শুধু নিজের নফস ও শয়তানের হাতেই বন্দি নয়, অসংখ্য পুরুষের
খাহেশাতের কাছেও বন্দি।
আল্লাহর
হুকুম মদ পান না করা। কিন্তু নফস ও শয়তানের তাবেদারি করে যে এই হুকুমের
নাফরমানি করে সে অসংখ্য লাঞ্ছনা ও অপমানের নিগড়ে বন্দি। সে মানুষের মার
খাবে, বৌকে মা বলবে, ডাস্টবিনের খাবার খাবে, কুকুরের পাশে ঘুমাবে, মোটকথা,
অসংখ্য লাঞ্ছনায় সে জর্জরিত হবে। পক্ষান্তরে যে আল্লাহর হুকুম মেনে চলে সে
এই সকল লাঞ্ছনা থেকে মুক্ত ও স্বাধীন।
আল্লাহর
হুকুম নবীর তরীকামতো চলা। যে এই হুকুম মেনে চলবে সে অসংখ্য তরীকার অধীনতা
থেকে মুক্ত। পক্ষান্তরে নবীর তরীকায় না চলবে সে চলবে ইহুদী-খৃস্টানের
তরীকায়, হিন্দু ও পৌত্তলিকদের তরীকায়, নাস্তিক-মুরতাদদের
তরীকায়; কখনো এই তরীকায় কখনো ঐ তরীকায়, এভাবে অসংখ্য গোমরাহীর
গোলকধাঁধাঁয় তার অমূল্য জীবন নিঃশেষ হবে, দুনিয়ার পবিত্র জীবন ও আখিরাতের
মুক্তি তার ভাগ্যে জুটবে না। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন। আমীন।
No comments:
Post a Comment