Monday, March 10, 2014

মূর্জিয়া ও আল কুফর

যেমন ভাবে আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কারো জন্য কুরবানী দেওয়া অথবা কোন মূর্তি অথবা চাঁদ বা সূর্যকে সিজদা দেওয়া কুফর বলে গণ্য হয় তেমনি ভাবে, দ্বীনের প্রতি পরিষ্কারভাবে বিদ্রূপাত্মক কিংবা উপহাসমূলক [Istihza] কোন মন্তব্য করা বা বক্তব্য দেওয়াও কুফর বলে গণ্য হবে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআ’হ এই ব্যাপারে একমত।

কোন ব্যক্তির কুফর সম্পর্কে সুন্নাহর কিতাবসমূহ থেকে আমরা যেসব প্রমাণাদি পাই তা সুস্পষ্ট। শুধুমাত্র ব্যক্তির কোন বক্তব্য বা মন্তব্য কিংবা কোন কাজ, কুফর বলে গণ্য হবার জন্য যথেষ্ট। এজন্য ফরজসমূহকে ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করা [Juhud] অথবা হারামকে হালাল দাবি করা [Istih’lal] আবশ্যক না।

যারা এর অন্যথা মনে করে তাঁদের বিশ্বাস ভ্রান্তিপূর্ণ। সাহাবা [রাঃ], তাবেঈন বা আহলুস সুন্নাহর ইমামরা- কেউই কখনো এরকম কোন দাবি করেননি।
আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন -
“আর যদি তুমি তাদের কাছে জিজ্ঞেস কর, তবে তারা বলবে, আমরা তো কথার কথা বলছিলাম এবং কৌতুক করছিলাম। আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর হুকুম আহকামের সাথে এবং তাঁর রসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে?ছলনা কর না, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ ঈমান প্রকাশ করার পর। তোমাদের মধ্যে কোন কোন লোককে যদি আমি ক্ষমা করে দেইও, তবে অবশ্য কিছু লোককে আযাবও দেব। কারণ, তারা ছিল গোনাহগার। ”
তাঁদের মুখনিঃসৃত বক্তব্যই এক্ষেত্রে কুফর হিসেবে গণ্য হবার জন্য যথেষ্ট ছিলো।

এবং আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আরো বলেন -
“তারা কসম খায় যে, আমরা বলিনি, অথচ নিঃসন্দেহে তারা বলেছে কুফরী বাক্য এবং মুসলমান হবার পর অস্বীকৃতিজ্ঞাপনকারী হয়েছে। আর তারা কামনা করেছিল এমন বস্তুর যা তারা প্রাপ্ত হয়নি। আর এসব তারই পরিণতি ছিল যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাদেরকে সম্পদশালী করে দিয়েছিলেন নিজের অনুগ্রহের মাধ্যমে। বস্তুতঃ এরা যদি তওবা করে নেয়, তবে তাদের জন্য মঙ্গল। আর যদি তা না মানে, তবে তাদের কে আযাব দেবেন আল্লাহ তা’আলা, বেদনাদায়ক আযাব দুনিয়া ও আখেরাতে। অতএব, বিশ্বচরাচরে তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী-সমর্থক নেই।”

সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন কাজ করে অথবা এমন কোন কথা বলে যা সুস্পষ্ট কুফর , তাহলে সে কুফরী করেছে – যদি না তা থেকে বিরতকারী কোনো বিবেচনা উপযোগী কারণ থাকে। যেমন বলপ্রয়োগের কারনে বাধ্যবাধকতা [Ikrah], ভুল ব্যাখ্যা করা [Ta’wil] অথবা আকস্মিক ভাবে কোন ভুল করা [khata], যেমন অজ্ঞানতাবশত বা মুখ ফসকে কিছু বলে ফেলা। যদি প্রকৃত পক্ষেই কুফর থেকে রক্ষাকারী কোনো কারণ থেকে থাকে তাহলে সে ব্যাপারটি বিবেচনায় আনা হবে।

সম্পূর্ণরূপে ফরয আমলসমূহকে [Jins al Amal] ছেড়ে দেওয়া পরিষ্কার কুফরের মধ্যে পড়ে। এখানে ব্যক্তির অন্তরে কি আছে সেটা বিবেচ্য হবে না। সম্পূর্ণভাবে ফরয আমলসমূহ ছেড়ে দেওয়া কুফর আকবর। এক্ষেত্রে যা অত্যাবশ্যকীয় তাঁর অনুপস্থিতিকে আমরা প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করবো – তবে একে হুকুমের পূর্বশর্ত বানাবো না। সুন্নাহর কিতাবসমূহ থেকে এটা পরিষ্কার যে হুকুম হলো ব্যক্তির কর্মের উপর ভিত্তি করে – তাঁর অন্তরে কি আছে তার উপর ভিত্তি করে না। কারণ কারো অন্তরে কি আছে এটা জানা হল আল্লাহ্‌র জন্য। কারণ তিনিই একমাত্র অন্তরের খবর জানেন।.

আল হাফিয ইবনে রাযাব [রহিঃ] ফাতহুল বারী ১/২৩ এ বর্ণনা করেছেন, সুফিয়ান ইবনে উয়াইনাহ বলেছেন-
“আল মুরজি’আ [মুরজি’আরা] মনে করতো হারাম কাজ করা যেই পর্যায়ের গুনাহ, ফরয আমলসমূহ সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা সেই একই পর্যায়ের গুনাহ।
কিন্তু এদুটো একই পর্যায়ের না।

কোনো হারাম কাজকে হালাল মনে না করে বা হালাল দাবি না করে ইচ্ছাকৃতভাবে করাটা অবাধ্যতার পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে কোন শরীয়ত সম্মত ওজর ছাড়া, জেনেশুনে ফরয আমলসমূহ ছেড়ে দেওয়া হলো কুফর।”

এর ব্যাখ্যা হিসেবে স্মরণ করুন আদম [আঃ] এবং ইবলীসের ঘটনা এবং আল ইয়াহুদের আলেমদের কথা যারা আল্লাহ্‌ কর্তৃক রাসূল[সাঃ] এর প্রেরিত হওয়াকে মুখে স্বীকার করেছিলো – কিন্তু সে অনুযায়ী আমল করেনি।

এবং হারব, ইশাক থেকে বর্ণনা করেছেন, ইসহাক বলেছেন -
“মুরজি’আরা এভাবে চরম সীমা অতিক্রমকারী কথা বলতে থাকলো, যার ফলে এক পর্যায়ে তাঁদের মধ্যে একজন বলা শুরু করলো -
‘যদি কোন ব্যক্তি ফরয সালাত, রমযানের সাওম,যাকাত, হজ এবং সকল ফরয আমল ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেয়, কিন্তু এই আমলগুলোর ফরয হওয়াকে অস্বীকার [Juhud] না করে – তবে আমরা তাঁর উপর তাকফীর করি না। কারণ সে একবার এই আমলসমূহকে ফরয হিসেবে স্বীকার করার পর তাঁর হিসাব আল্লাহ্‌র কাছে।‘

সুতরাং এরা হলো ওইসব লোক যাদের ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই – অর্থাৎ মুরজি’আ।”

আস সুন্নাহ, ৩/৫৮৬-তে আল খাল্লাল বর্ণনা করেছেন – (উবাইদ’আল্লাহ ইবনে হানবাল থেকে, যিনি বলেন আবি হানবাল ইবনে ইসহাক ইবনে হানবাল আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে আল হুমাইদী বলেছেন)-
“আমাকে জানানো হল যে এমন কিছু লোক আছে যারা বলে –
‘যদি কেউ সালাত, সাওম, যাকাত, হজকে ফরয বলে স্বীকার করে নেয়, কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এসবের কোনটাই পালন না করে – কিংবা যদি সে তাঁর পেছনদিকে ভর দিয়ে, কিবলার উল্টোমুখী হয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সালাত আদায় করে – তাহলে সে একজন মুমিন। যতক্ষণ পর্যন্ত সে এই আমলসমূহের ফরয হওয়াকে অস্বীকার না করে ততোক্ষণ সে মুমিন।‘
সুতরাং, আমি বললাম – এটা আল্লাহ্‌র উপর সুস্পষ্ট কুফর। এবং এটা আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর রাসূল [সাঃ] সুন্নাহ, এবং মুসলিমদের কাজের সম্পূর্ণই বিপরীত।”
আল্লাহ্‌ বলেন -
“তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম। ”

হানবাল বলেছেন -
“আমি আব্দুল্লাহকে বলতে শুনেছি যে – ‘যারা এরকম কোন কথা বললো তাঁরা আল্লাহ্‌র উপর অবিশ্বাস [কুফর] করেছে, এবং অস্বীকার করেছে আল্লাহ্‌র আদেশ সমূহকে, যা তিনি তাঁর রাসূল [সাঃ] –এর মাধ্যমে প্রেরণ করেছেন।”

এবং ইমাম আহমাদ ইবনে বাত্তাহ [রহিঃ] বলেছেন -
“যারা ইচ্ছাকৃত অস্বীকার [Juhud], অথবা অন্তর্নিহিত অবিশ্বাসের কারনে [Tak’thib], ফরয আমলসমূহের কোনটি পরিত্যাগ করেছে, যা আল্লাহ্‌ আযযা ওয়াজাল তাঁর কিতাবে অথবা তাঁর রাসূল[সাঃ]-এর সুন্নাহর মাধ্যমে আমাদের আদেশ করেছেন – সে একজন কাফির এবং তাঁর কাজ সুস্পষ্ট কুফর। আল্লাহ্‌ এবং শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাসী কোন বুদ্ধিমান মানুষ এতে কোন সন্দেহ করবে না।
এবং যদি কেউ মৌখিকভাবে ফরয আমলসমূহকে স্বীকার করার পর অবহেলা, আমোদ-প্রমোদে লিপ্ত থাকা অথবা মুরজি’আদের মতাদর্শ এবং মাযহাব অনুসরণ করার কারণে, সম্পূর্ণভাবে ফরয আমলসমূহ ছেড়ে দেয়- তাহলে সেই ব্যক্তি ঈমান পরিত্যাগকারী।
তাঁর অন্তরে বিন্দুমাত্র ঈমান নেই। সে হল সেইসব মুনাফিকদের দলভুক্ত যারা রাসূল [সাঃ] – এর সাথে নিফাক করেছিলো।

কুর’আনে এসব লোকের বৈশিষ্ট্য এবং তাঁদের শেষ পরিণতি কি তাঁর বর্ণনা দেওয়া আছে। এদের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। মুরজি’আদের ভ্রান্ত বিশ্বাস ও আকীদা থেকে আমরা আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি।”
[আল ইবানাহ, খন্ড ২/৭৬৪]

এবং পূর্ববর্তী [সালাফ] –দের ইমামগন মুরজি’আদের সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করে গেছেন। এবং মুরজি’আদের কথা এবং তাঁদের বিদ’আতের বিপদ সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন।

ইমাম আয যুহরী [রহিঃ] বলেছেন-
“আজ পর্যন্ত ইসলামে এমন কোন বিদ’আত উপস্থাপন করা হয়নি যা মানুষের জন্য মুরজি’আদের আকীদা [Al Irja] অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকর।
[আল ইবানাহ, খন্ড ২/৮৮৫]

শুরাইক বলেন -
“তাঁরা [আল মুরজি’আ] মানুষের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট। চরমপন্থী শিয়ারা [রাওয়াফিদ] শয়তানীর জন্য যথেষ্ট। কিন্তু মুরজি’আরা মিথ্যাচার করে আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে।”
[আস সুন্নাহ, খণ্ড ১/৩১২]

(শায়খ সুলায়মান আল আওয়ান এর বস্তুত, আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী নামক কিতাব থেকে সংগৃহীত)

No comments:

Post a Comment