Sunday, January 5, 2014

*হুজুগে মুসলিম, দাজ্জালি মিডিয়া এবং ISIS সহ সিরিয়ার মুজাহিদদের নিয়ে ফিতনা*

লিখেছেনঃ আবু মুসা (একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম)

ডিসক্লেইমারঃ খুব একটা ভাল মন নিয়ে এই লেখা হচ্ছে না। তাই অনেক কঠিন ভাষার ব্যবহার আছে। কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আগে থেকেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

প্রারম্ভিকাঃ
সবাইকেই একটা প্রশ্ন করি।
আপনার মা যে আপনারই মা, সেটা না হয় হাসপাতালের ডাক্তার বা আপনার নানি বা দাদী কিংবা আপনার বাবা যারা জন্মের সময় আপনার মায়ের কাছে ছিল তারা সরাসরি সাক্ষী দিতে পারবে। কিন্তু আপনি যে আসলেই আপনার বাপেরই সন্তান এই সাক্ষী কি আপনার মা ছাড়া কেউ দিতে পারবে? ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারবেন তবে সাক্ষী কিন্তু আপনার মা ছাড়া আর কেউ নেই। এই অবস্থা পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু এতে কি বাবা যখন আমাদেরকে শাসন করে তখন আমরা সন্দিহান হয়ে মাকে জিজ্ঞাসা করি, মা, আমি আসলেই এই বাবার সন্তান কিনা? এই প্রশ্ন করতে হয় না কারণ আল্লাহ্‌ সুবাহানাতায়ালা মানুষের মধ্যে এই প্রশ্নের অবতারণা যাতে না হয় সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কারণ সবাই ধরেই নিয়েছে বিয়ের মাধ্যমে আমাদের জন্ম তাই আমার বাবা অন্যজন হবার কোন কারণই নেই। সবচেয়ে বড় কথা এটা নিয়ে কেউ কখনও চিন্তাও করবে না কারণ এই নিয়ে চিন্তা করা মানেই হল নিজের মাকে ব্যাভিচারিনি বলা যেটা কেউ করবে না।

যারা মুজাহিদদের নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়া কিংবা আরবিয় দাজ্জালিয় মিডিয়ার ইনফরমেশনের ভিত্তিতে ন্যূনতম প্রশ্ন তুলে তাদের কাছে আগে সবিনয়ে নিজের বাবার ব্যাপারটা নিশ্চিত হবার জন্য অনুরুধ করব কারণ এটা অনেক সহজ। মুজাহিদদের ব্যাপারে তথ্য যাচাই বাছাই করার জন্য আপনাকে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হবে।

রিভিউঃ

আলজেরিয়াতে যখন ইসলামের উত্থান হতে লাগল, তখন এখনকার মিশরের মত অনেক মানুষ মেরে কুফফার আর মুনাফিকরা ইসলামের অগ্রযাত্রাকে সাময়িকভাবে ঠেকিয়ে ছিল। আর প্রচার করেছিল মোডারেট ইসলাম, জঙ্গি ইসলামের (আসল ইসলাম) চেয়ে ভাল। অনেক মুসলিম দেশের মুসলিমরাই এটা মেনে নিয়েছিল। ১৯৯২ সালে ইসলামিক স্যাল্ভেশন ফ্রন্ট ইলেকশনে জিতলে সেটাকে ধ্বংস করা হয় আর্মির মাধ্যমে এবং মুহাম্মাদ বউদিয়াফ ২৯ বছর পরবাসে থেকে দেশে ফিরে ইলেকশনে জিতেন কিন্তু তা তার মৃত্যুর কারণ হয়। এর পর সাধারণ মুসলিম নিধন হয়েছে মশা নিধনের মত। আর গরু খাওয়া মোডারেট মুসলিমরাও ভাবল তারাই আসল ইসলামের ধ্বজাধারী। সুতরাং জঙ্গি ধমনের ফিতনা ছড়িয়ে পরে অন্যসব মুসলিম দেশেও। এই ফিতনাতে অনেকদিন পর্যন্ত প্রকাশ্য জিহাদকে থামিয়ে রাখতে পেরেছিল কুফফার ও মুনাফিকরা।

সুতরাং এরই ধারাবাহিকতায় আফগানিস্থানের জিহাদকে বেশীর ভাগ মুসলিমরা রাশিয়ার সাথে আর দশটা যুদ্ধের মতই মনে করেছিল। জিহাদ শব্দটা তো হারিয়ে যেতে বসেছিল। সেই ধারণা আরও পাকাপোক্ত করতে মিডিয়া ছড়িয়ে দিল এই বার্তা যে আফগানিস্থানের তালিবানরা আমেরিকার সাহায্যে যুদ্ধ করছে। এতে পাকিস্তান ও সহায়তা করছে। কিন্তু এই ঘোর কাটে যখন রাশিয়ার সাথে যুদ্ধের পর ৯/১১ এর ছুতা দিয়ে আমেরিকা আফগানিস্থান আক্রমণ করে বসে।

যাদের মধ্যে একটু একটু ঈমানী বুঝ ছিল, তারাও পশ্চিমা মিডিয়ার সাথে একমত পোষণ করতে লাগল যে তালিবানরা সন্ত্রাসী। কিন্তু তারা ইসলামকে তালিবানদের থেকে আলাদা করতে চাইল এই বলে যে কারা এই তালিবানদের তৈরি করেছে? আমেরিকাই তো রাশিয়ার সাথে যুদ্ধের সময় এদের তৈরি করেছে। এইভাবে দোষ আমেরিকার উপর দিলেও অনেক মুসলিমই এটা মনে মনে মেনে নিয়েছিল যে তালিবানরা আসলেই সন্ত্রাসী। সেই সাথে আল কায়দাও।

কিন্তু কিছুদিন আগে সিআই এর অফিসার মাইকেল শেউর তার বই “মারচিং টুঁয়ার্ড হেলঃ আমেরিকা এবং ইসলাম আফটার ইরাক” তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে তারা অনেক চেষ্টা করেও শেখ ওসামার সাথে সহযোগিতার জন্য দেখা করতে পারেননি কারণ শেখ ওসামা আমেরিকাকে কখনই বিশ্বাস করতেন না। সুতরাং হালুয়া রুটি আলেম আর গরু খাওয়া মুসলিমদের এত দিনের ধারণা অবশেষে মাঠে মারা গেল। এই বইতে উনি স্পষ্ট করে লিখেছেন, তালিবান ও আল কায়দা কখনই আমেরিকার অস্রের উপর নির্ভর করেনি। তারা যেখান থেকে কিনতে পেরেছে সেখান থেকেই কিনেছে। মোডারেট মুসলিমদের একটা অংশ এবার হুঁশ ফিরে পেল এবং বুঝতে পারল, পশ্চিমা কুফফার আর দেশীয় মুনাফিকদের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলিমদেরকে যুদ্ধের জিহাদ থেকে দূরে রাখা।

কিন্তু আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে যখন জিহাদের আসল রুপ প্রকাশ পেতে লাগল, তখন তারা কুয়েতে ফোরকান নাম দিয়ে নতুন একটা কোরআন চালিয়ে দিয়েছিল যেখান থেকে কিতাল অর্থে জিহাদ শব্দটি ডিলিট করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ্‌ যেখানে নিজেই কোরআনের রক্ষক সেখানে কুফফার ও মুনাফিকরা ব্যর্থ হতে বাধ্য। খুব দ্রুতই তা আলেম এবং হুফফাজদের কাছে ধরা পড়ে।

সুতরাং কুফফারদের অন্যতম প্রধান ভয় হল জিহাদকে। এটাকে তারা যেভাবেই হোক মুসলিমদের কাছ থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিল। এটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল কিন্তু তারা এর বাস্তবায়ন করেছে শয়তানের মত ধীরে ধীরে, মুসলিমদের শিরায় শিরায় এবং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই এরা অনেকটা সফলই হয়েছিল।

এর ফিতনার স্বীকার আমি নিজেই। ৯/১১ নিয়ে পর্যাপ্ত নলেজের অভাবে যখনই কোন নন মুসলিম এই নিয়ে প্রশ্ন করত তখনই বলতাম ইসলামে সন্ত্রাসের কোন স্থান নেই। কিন্তু এতে আমি কত বড় অন্যায়ই করেছি। এই কথার মানে হল, ৯/১১ যারা ঘটিয়েছে তারা মুসলিম হলেও আসল ইসলাম তারা মানে নাই। মনের অজান্তেই স্বীকার করে নিয়েছিলাম যে আল কায়দাই ৯/১১ ঘটিয়েছে। কিন্তু ঘুম ভাঙল ২০০৭ এ মাস্টার্সের একটা কোর্সে আমার কোর্সমেট ছিল একজন সাদা ব্রিটিশ যার নাম ডীন। ও আমাকে একদিন জিজ্ঞাসা করলো, ৯/১১ কি আসলেই মুসলিমরা করেছে? আমি তো অবাক এই প্রশ্ন শোনে। কারণ এতদিন পর্যন্ত শোনেছি কেন মুসলিমরা ৯/১১ করেছে? যাই হোক ওকে বললাম আমি জানি না কারণ আমার কাছে কোন প্রমাণ নাই। সে তখন গ্লবালাইজেশন কোর্সে এটা নিয়ে রিসার্চ শুরু করলো এবং একই সাথে আমিও শুরু করলাম। অদ্ভুত একটা ব্যাপার হল, এই প্রথম এই ব্যাপারটা নিয়ে সাইন্টিফিক এভিদেন্সের ভিত্তিতে বুঝলাম, এটা কত বড় ইনসাইড জব। এই ব্যাপারটা নিয়ে লিখতে গেলে একটা বই লেখা যাবে। যারা এই বিষয়ে একটু বিস্তারিত জানতে চান, তারা দয়া করে প্রফেসর স্তিভেন জোন্সের লেকচারগুলো দেখতে পারেন। এই রিসার্চের পর মনে মনে ভাবলাম, একজন মুসলিম হয়েও কত সহজেই না আমি আরেকজন মুসলিম ভাইকে জঙ্গি ভেবেছিলাম আর স্তিভেন জোন্স অমুসলিম হয়েও কেন সত্য সন্ধান করতে গিয়ে চাকুরি হারালেন। নাউজুবিল্লাহ। আল্লাহ্‌র কাছে এবং ঐ ভাইদের কাছে ক্ষমা চাই।

ব্যাক্তিগত বিষয় টেনে আনা ঠিক না কিন্তু শুধুমাত্র ফিতনার গভীরতা সম্পর্কে বুঝাতে এর অবতারণা। আসল কথা হল, কুফফারদের প্রধান অস্র হল মুসলিমদের মধ্যে ফিতনা সৃষ্টি করে বিভেদ তৈরি করা যাতে এরা কখনই সমন্বিত হতে না পারে। এটা সব কুফফার ও মুনাফিকরাই জানে যে যতদিন মুসলিমদেরকে ভাগ করে রাখা যাবে ততদিন মুসলিমদের দিয়েই মুসলিম নিধন করা যাবে আর মালহামায় মুসলিমদের সংখ্যা কমে আসলে তাদের জিততে সুবিধা হবে। আর সেই লক্ষ্যে এরা কতই না চেষ্টা করে যাচ্ছে। এমন কি বাচ্চা কম নেয়ার জন্য ফ্রি কন্ত্রাসেপ্তিভ পর্যন্ত দেয়। কিন্তু হায়, আল্লাহ্‌র প্ল্যান নিখুঁত। মুসলিমদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে এবং সেটা কুফফারদের দেশেও। আজকে যারা সিরিয়াতে আছে এদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ হল সাদা চামড়ার রিভারটেড মুসলিম।

প্রধান অংশঃ
ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড শাম (আইএসআইএস) নিয়ে একই রকম ফিতনা এখন শুরু হয়েছে। আসুন, এই ব্যাপারটা আমরা ধারাবাহিকভাবে বুঝার চেষ্টা করিঃ

তিউনিসিয়াসহ প্রত্যেকটি আরব ও আফ্রিকান মুসলিম দেশেই প্যালেস্টাইনে ইহুদীদের অত্যাচারে তাদের সরকারের নীরবতা নতুন করে জাগিয়ে তুলেছিল ইসলামিক রিভাইভাল। এটা কুফফাররা বুঝে গিয়েছিল বেশীর ভাগ মুসলিমদের বুঝার আগেই। যার কারণে এরা নতুন করে ফিতনা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে যায়। এর শুরু হয় আরব স্প্রিং নামে, গনতন্ত্রের বিষাক্ত ইনজেকশন খাইয়ে। আরবের অনেক আলেমই গাদ্দাফিকে খারাপ শাসক হিসাবে উল্লেখ করে লেকচার দিয়েছেন। আর এই সুযোগটা কুফফার ও মুনাফিকরা কাজে লাগায়। এদের এতদিনের বন্ধু গাদ্দাফিকে ওরা মেরে ফেলে এবং হালুয়া রুটি মুসলিমদের বুঝাতে সক্ষম হয় যে তারা শান্তিপূর্ণ ইসলামের পক্ষে। কিন্তু ভেজাল বেঁধে যায় যখন দেখা গেল, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিশরসহ অন্যান্য দেশে আসল মুসলিমরা ক্ষমতায় যেতে লাগল। ততদিনে হাওয়া গিয়ে বিলাদ আল শামে লেগে গেছে। তাই কুফফাররা বুঝল গনতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলামের উত্থানকে ঠেকানো যাবে না। তাই তারা এইসব মুসলিম দেশের আর্মির সাথে আঁতাত করে মুসলিম সরকার পতনে মরিয়া হয়ে পড়ল। এতে যোগ দিল আরব দেশগুলোর তাগুত সরকারগুলো। এর সবচেয়ে কাছের উদাহরণ মিশরের ডঃ মুরসিকে অপসারণ এবং ভয়ানক মুসলিম নিধন।

কিন্তু ততদিনে সিরিয়ায় সরকার বিরোধীরা অনেক এগিয়ে গেছে। তাই পশ্চিমা কুফফাররা না পেরে সেকুলার নামধারী মুসলিমদেরকে ক্ষমতায় আনতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কিন্তু এর পিছনে যে বিশ্ব জিহাদের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে, সেটা বুঝতে মনে হয় কুফফারদের একটু দেরী হয়ে গিয়েছিল। তাই, অনেক রেড লাইন দিয়েও পশ্চিমারা কিন্তু গাদ্দাফির মত বাশারকে সরায়নি। ওরা অস্র, অর্থ সব কিছু দিয়েই সেকুলার ফ্রি সিরিয়ান আর্মিকে সাহায্য করলো কিন্তু ফলাফল উল্টা, জিহাদই আপার হ্যান্ড পেতে লাগল। আর এর কারণে, এখন পশ্চিমারা সিদ্ধান্ত নিল, আসাদই ভাল কারণ অন্যথায় এই জিহাদকে ঠেকানো যাবে না।

কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে। বিলাদ আল শাম আসলেই বিশ্ব জিহাদের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। খোদ আমেরিকার পেন্টাগন এই কথা স্বীকার করেছে। সুতরাং এখন কুফফার ও তাদের মুনাফিক সঙ্গীগণ নুতন ফিতনা ছড়াতে ব্যস্ত।

শক্তিশালী ফিতনা ছড়ানোর জন্য ওরা যেটা করলো, সেটা হল সেকুলার ফ্রি সিরিয়ান আর্মির একজনের আসাদের সৈন্যকে হত্যা করার পর তার কলজা খাওয়ার দৃশ্য প্রচার করে বিশ্বের মুসলিমদের বুঝাতে শুরু করে এই বর্বর লোকগুলো জিহাদ করছে। এটা দেখে অনেকেই আসল মুজাহিদদের সম্পর্কে ভুল ধারণা করে বসল। কিছুটা হলেও সফল হলও দাজ্জালিয় ফিতনা।

কিন্তু আসল মুজাহিদরা যখন একের পর এক জয় ছিনিয়ে আনতে লাগল তখন এই ফিতনার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেল। সমগ্র বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা দেখতে লাগল মুজাহিদদের সাহসিক জিহাদ আর মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা শহীদদের হাসিমাখা মুখ। এতে মানুষ আরও উদ্বুদ্ধ হতে লাগল এবং সমগ্র বিশ্বের মুসলিমদের মধ্যে আবার আশার সঞ্চার হতে লাগল যে ইসলামের বিজয় আবার আসছে।

ঠিক এই মুহূর্তেই কুফফার ও মুনাফিকরা নিয়ে আসল “যৌন জিহাদ” এর নতুন ফিতনা থিউরি। আমাদের দেশের পতিতাতের (প্রথম) আলোতেও তা কয়েক ধাপে ছাপা হতে শুরু করে। মুহূর্তেই মুজাহিদদের সম্পর্কে আবার মুসলিমরা খারাপ ধারণা করতে শুরু করে। এই ফিতনায় অনেকেই আক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু যখন আসল ব্যাপার বের হতে থাকল, যে মুজাহিদ ভাই যেই মুজাহিদ বোনের হাত ধরে ছিল তারা স্বামী স্ত্রী তখন মুসলিমরা এই ফিতনা থেকে থেকে বের হওয়া শুরু করলো। কিন্তু মিডিয়াতে কিছু সিরিয়ান ও অন্যান্য দেশের বিচকে যখন ইন্টার্ভিউ নেয়া শুরু করলো যারা এই নতুন আবিষ্কৃত “যৌন জিহাদ” এর স্বীকার তখন এই ফিতনা আবার মাথাচারা দিয়ে উঠল। উনারা হিজাব পরে এসে অনেককেই ধোঁকা দিতে পারলেন কিন্তু সবাইকে না। কারণ প্ল্যাক করা ব্রু আর রঙিন হিজাব আর ড্রেসেই বুঝা গেছিল এই সব রাস্তার মেয়েদের টাকা দিয়ে নতুন করে ফিতনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমি এই নিউজ ক্লিপগুলো দেখেছি। আমার থুথু দিতেও ইচ্ছা করছিল না এদের উপর। এরা উপরে হিজাব পড়লেও ভিতরে ভিতরে এরা সি বীচের বিচদের মতই।

যাই হোক যখন এই ফিতনা বেশীদিন টিকে নাই, তখন তারা শুরু করলো নতুন ফিতনা। আর তা হল, জাহবাতুন্নুস্রাকে আলকায়দা আখ্যা দিয়ে এদের বিপক্ষে অন্য মুজাহিদ গ্রুপগুলোকে আলাদা করার চেষ্টা করলো। এটা বেশ কাজে লাগলও। যেহেতু শামে আসলেই মুজাহিদরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে জিহাদ করছিল তাই মানুষ অনেক দিন ধরেই অনেক সহজেই এই ফিতনায় আক্রান্ত হল। বাইরের অনেকেই নুসরাকে সন্ত্রাসী মনে করতে লাগল। কিন্তু ঐ যে আল্লাহ্‌র প্ল্যান নিখুঁত। যারা মাঠে আছে তারা এক বাক্যে স্বীকার করবে সাধারণ মানুষ কতটা নুসরাদের ভালবাসে এবং নুসরা কতটা পিউর হার্ট নিয়ে সেখানে যুদ্ধ করছে। এক ভাই যিনি নিজেই সেখানে গিয়েছেন গত নভেম্বরে, সেখান থেকে ফিরে বললেন, “রাস্তায় হঠাৎ করেই দেখলাম কিছু মানুষের মুখ মারাত্মক উজ্জ্বল, অবয়ব দেখে কি মনে হল জানিনা গাড়ি থেকে নেমে হ্যান্ডশেক করলাম, কোলাকুলি করলাম। জীবনে এমন চেহারা দেখি নাই। ড্রাইভ করেছে যে ভাই তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, উনারা কারা। উনি উত্তর দিলেন, উনারা জাবহাতুন্নুস্রা। আমার জীবনে কোন মানুষকে দেখে এতটা প্রশান্তি অনুভব করিনি। আমাকে অবাক করে দিয়ে ঐ ভাই বললেন যে, সিরিয়ার মানুষ নুস্রাকে অনেক বেশী ভালবাসে। উল্লেখ্য এই ড্রাইভ করা ভাই লিউ আল ইসলাম নামক অন্য একটি গ্রুপের, আল্লাহু আকবার”। তাই যখন নুস্রা একের পর এক বীরত্বপূর্ণ জয় ছিনিয়ে আনতে লাগল, তখন অন্য সব গ্রুপই তাদেরকে সানন্দে গ্রহণ করলো এবং জবনিকতাপাত হল আরও একটি ফিতনার।

এই জাবহাতুনুস্রার একটা বড় অংশ বাইয়াত দিয়েছে ডঃ আবু বকর আল বাগদাদি আল হুসাইনি আল কুরাইশির কাছে যিনি ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক এন্ড শামের আমীর যাকে উনারা আমির-উল-মু’মিনিন বলে ডাকেন। নুসরা জিহাদে সর্বস্ব নিয়োগ করলে একটি ইসলামিক রাষ্ট্রের আদলে স্কুল, আদালত, পুলিশ, ব্যবসাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে একটি রাষ্ট্রের গঠনে তারা মনোযোগ দেয়নি। এই কাজে পুরো মনোযোগ দিয়েছিল ISIS (আইএসআইএস)। উনারা সুন্নাহর আলোকে একটি পরিপূর্ণ খিলাফাত প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত হয়। সুতরাং এদের জিহাদ শুধুমাত্র বাশারকে সরানোর জন্য নয় বরং ইসলামিক খিলাফা প্রতিষ্ঠার জন্য। এই জন্য এরা যেসব অঞ্চল স্বাধীন করেছে সেখানেই ইসলামিক খিলাফা চালু করেছে। শুধু তাই নয় প্রাইভেট বিজিনেস বিকাশের জন্যও ব্যবস্থা নিতে থাকে। মোট কথা একটি ইসলামিক রাষ্ট্রে যা যা থাকার দরকার সবই উনারা করতে থাকেন।

এটা দেখে তো কুফফারদের ঘুম হারাম। যে খিলাফাতকে ওরা ১৯২৪ সালে কবর দিয়েছিল তা আবার নতুন করে শুরু হয়ে গেল। এবার তারা নতুন ফিতনা ছড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

আর এরই প্রথমটি ছিল যে নুসরা আর ISIS এর মধ্যে কোন মিল নাই। এরা একে অপরের রাইভাল। কিন্তু এতে এই দুই গ্রুপের মধ্যে কোন ফাটল ধরে নাই। কিন্তু এর মধ্যে ডঃ আইমানের একটা ভিডিও ক্লিপ আসে যেটাতে উনি শামে সব গ্রুপকে একটা লিডারশীপের আন্ডারে আসার নির্দেশ দেন। কিন্তু মিডিয়া এই কথাকে ঘুরিয়ে প্রচার করে এই বলে যে, ডঃ আইমান আইসিসকে শুধু ইরাকে থাকার আহ্বান জানান এবং শামে নুসরাকে থাকতে বলেন। যেহেতু আইসিস ডঃ আইমানের এই কথা শোনে নাই, তাই তাদেরকে আল কায়দা থেকে বহিস্কার করা হয়। এই ফিতনার কথা সবাইকে বেকুব বানাতে না পারলেও কিছু কিছু মানুষকে করেছিল। এমনকি এর মধ্যে মুজাহিদরাও রয়েছেন।

কিন্তু এই ফিতনা বেশীদিন টিকে নাই কারণ ISIS একের পর এক ভয়াবহ সব অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছিল ইরাক ও শামে। আইসিস তখন শামে জিহাদের পাশাপাশি দাওয়াতের কাজ পুরদমে চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই ব্রেড ফ্যাক্টরি তৈরি করলো। এতে দিনদিন আইসিসের প্রভাব বাড়তেই থাকল। এর মধ্যেই একটা অনাখাঙ্খিত ঘটনা ঘটে যায়। গুলাগুলির একপর্যায়ে আইসিস আহরার আল শামের একজনকে আটক করে। আসলে সে মুজাহিদ ছিল। কিন্তু ধরা পরার পর সে আইসিসকে আসাদের আর্মি মনে করে শিয়াদের মত দোয়া দুরুদ পড়তে শুরু করে। এতে আইসিসের মুজাহিদরা উনাকে শিয়া মনে করে মেরে ফেলে। এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ অনাখাঙ্খিত হলেও কুফফার ও মুনাফিকরা এটার চান্স নেয়। তারা আহরার আল শামের সাথে আইসিসের সমস্যা তৈরি করতে সক্ষম হয় এবং এতে পাল্টাপাল্টি আক্রমণের পর আইসিস আহরার আল শামের হেডকোয়ার্টার দখল করে নেয়।

এই ঘটনাটি কুফফারদের নতুন করে ফিতনা তৈরির সুযোগ করে দেয়। কিন্তু শামের আসল খবর হল মিডিয়াতে যতটা সিরিয়াসভাবে এই বিষয়টা এসেছে, মোটেও ব্যাপারটা ততটা সিরিয়াস নয়। এখনও সব গ্রুপই কাঁধে কাঁধ রেখে জিহাদ করে চলেছে শামে।

কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে শামে ফ্রি সিরিয়ান আর্মির ভাত না থাকলেও কিছু গ্রুপকে আরব দেশগুলো সাহায্য করে আসছিল যাদেরকে আরব শাসকরা ইসলামিক খিলাফাত প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে শুধুমাত্র সিরিয়াকে স্বাধীন করাকেই লক্ষ্য হিসাবে নিতে বলে। এদের মাধ্যমে কুফফার আর মুনাফিকরা নতুন করে ফিতনা তৈরিতে ব্যস্ত। এরই চেষ্টা হিসাবে আল জাজিরা সহ অন্যান্য মিডিয়াতে এখন বলা হচ্ছে ISIS এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে শামের অন্যান্য গ্রুপগুলো। আর এই ক্ষেত্রে আরেকটু হাত বাড়িয়ে এরা ইরাকেও ত্রাইবাল গ্রুপগুলো আইসিসের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষে যুদ্ধ করছে বলে প্রচার করছে।

অথচ এই সব আরব শেখের মিডিয়া এর আগে কখনই স্বীকার করেনি যে ইরাকে এই ISIS এর জন্য আমেরিকাকে ইরাক ছাড়তে হয়েছিল। এরা এটাও স্বীকার করেনি আসাদের বাহিনী সবচেয়ে বেশী ভয় পায় এইISIS কে। এটাও কখনও বলেনি ISIS এর আমীর ডঃ আবু বকর ইসলামিক একজন স্কলার যিনি কুরাইশ বংশের। অথচ যখন আরব শেখদের উস্তাদ আমেরিকা ডঃ আবু বকরের একটা ভুয়া ছবি দিয়ে তাকে ধরিয়ে দেবার জন্য মিলিয়ন ডলারের বাউনটি ঘোষণা করলো তখনই কেবল প্রথম উনাকে নিয়ে এরা রিপোর্ট করে। সুতরাং এদের এই ফিতনাসৃষ্টিকারী কাজকর্ম সম্পর্কে বিশ্বাসীদের খুব সতর্ক থাকতে হবে।

ISIS সম্পর্কে বলতে গেলে এই পোস্ট আরও বড় হয়ে যাবে। তাই সংক্ষেপে বলছি। এই ডঃ আবু বকরের কথা ২০০৮ সালে বলে গিয়েছিলেন ইমাম আওলাকি (রহঃ)। হাদিসে এসেছে ইমাম মাহদি আসার আগে সুন্নাহর আলোকে খিলাফাত প্রতিষ্ঠা হবে। হাদিসে সমগ্র পৃথিবীতে খিলাফাত প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়নি। আর ইমাম মাহদিও ইরাক আর শাম (সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন, প্যালেস্টাইন) নিয়েই ইসলামিক শরিয়ার আলোকে শাসন করবেন এবং দাজ্জালের সাথে জিহাদে নেতৃত্ব দিবেন যার চূড়ান্ত সময়ে ঈসা (আঃ) এসে দাজ্জালকে মারবেন। কুফফাররা এই সম্পর্কে অনেক সচেতন। তাই এই খিলাফা যাতে প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে সে জন্য তারা সব চেষ্টাই করবে। যদি আইসিসের এই খিলাফা সেই খিলাফার শুরু করে থাকে, তাহলে আমাদের জন্য সামনে অনেক বড় বড় ফিতনা অপেক্ষা করছে।

সুতরাং ২০১৪ সাল বিশ্বাসীদের জন্য ফিতনা মুক্ত থাকাটা খুব জরুরী কারণ ফিতনা মুক্ত থাকতে পারলেই কেবল বিশ্বাসীরা কুফফার ও মুনাফিকদের জন্য ২০১৪ যে দুঃস্বপ্ন বয়ে আনবে তা দেখে কিছুটা বিনোদন পেতে পারে। অন্যথায় ২০১৪ আমাদের জন্যও কষ্ট আর জুলুম বয়ে আনবে।

উপসংহারঃ

প্রারম্ভিকতার কথায় ফিরে আসি। বিশ্বাসীরা একে অন্যের জন্য আয়না কিন্তু কুফফার আর মুনাফিকদের জন্য মৃত্যুদূত। বিশ্বাসীরা এক উম্মাহ, একটি দেহের মত। এই দেহের যেখানেই ব্যথা হোক না কেন, সাড়া দেহই টের পায়। সুতরাং আমাদের উচিৎ নিজেদের জিজ্ঞাসা করা আমাদের এই ফিলিংস আছে কিনা। আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত সত্যিকারের বিশ্বাসী হতে পারব না যতক্ষণ না আমরা আমাদের অন্য বিশ্বাসী ভাইদের জন্য নিজেদের জন্য যা পছন্দ করি তা পছন্দ করি। সুতরাং নিজের বাপের পরিচয় নিয়ে যেমন আমরা সন্দিহান হয়ে মাকে এ নিয়ে প্রশ্ন করি না তেমনি আমাদের উচিৎ হবে না যারা জিহাদের মাঠে থেকে সব কিছু বিলিয়ে দিয়ে কেবল মাত্র আল্লাহ্‌কে সন্তুষ্ট করার জন্য জিহাদ করে চলেছে তাদের সম্পর্কে কুফফার ও মুনাফিক মিডিয়ার প্ররোচনায় কোন রকম খারাপ ধারণা করা। করলে, এর খেসারত আমাদের নিজেদেরকেই দিতে হবে।

উম্মাহর এই রিভাইভালে আল্লাহ্‌ আমাদেরকে ফিতনামুক্ত রাখুন। আমীন

1 comment:

  1. কিছুদিন আগে সিআই এর অফিসার মাইকেল শেউর তার বই “মারচিং টুঁয়ার্ড হেলঃ আমেরিকা এবং ইসলাম আফটার ইরাক” তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে তারা অনেক চেষ্টা করেও শেখ ওসামার সাথে সহযোগিতার জন্য দেখা করতে পারেননি কারণ শেখ ওসামা আমেরিকাকে কখনই বিশ্বাস করতেন না।

    এই কথার কোন প্রমান আছে? এই ব্যাক্তি কে এত বিশ্বাসের কারন কি????

    ReplyDelete