Sunday, January 5, 2014

ইয়েমেন থেকে মার্কিন দালাল সউদি ও অন্যান্য আরব দেশগুলোর শাসকঃ ২০১৪ নিয়ে কে ভয়ে আছে?

আফগানিস্তান আক্রমনের ছুতা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল ৯/১১ কে আর ইরাক আক্রমনের ছুতা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল পারমাণবিক বোমাকে। কন্সিপিরেসি থিওরির মানুষজন আফগানিস্তান নিয়ে কিছু আবিষ্কার করতে না পারলেও অবশেষে তেলের পাইপলাইনকে অর্থনৈতিক কারণ হিসাবে দাঁড় করায় আফগানিস্তান আক্রমনের কারণ হিসাবে। আর ইরাকের তেলকে দাঁড় করায় ইরাক আক্রমনের কারণ হিসাবে। যদিও এই কারণগুলো আসল কারণ নয় তথাপি কন্সপিরেসি থিওরির লোকজন ধন্যবাদ পাবার যোগ্য কারণ ওর অন্তত চিন্তা করছে কি কারণে আমেরিকা এই দুই জায়গায় আক্রমন করেছে। আমাদের মুসলিম দেশের সরকারদের মত তালেবান আর জিহাদের ভয়ে অস্থির হয়ে অন্তত জনসম্মুখে কাপড় ভিজায় নাই আর আমেরিকার সুরে কথা বলে নাই।

কিন্তু ইয়েমেনে আক্রমনের কি কারণ? এইবার কন্সিপিরেসি থিওরিও কাজ করছে না। আমেরিকাও সরাসরি বলেছিল, যে তারা আলকায়দাকে তাড়ানোর জন্য ইয়েমেন আক্রমণ করছে। এইবার কিন্তু আলকায়দার কথা স্বীকার করে নিল। কি অবস্থা? এরা আল কায়দাকে আফগানিস্তান থেকে আকাশে পাঠানোর জন্য এক যুগ ধরে যুদ্ধ করলো আর এখন দেখা গেল আল কায়দা গিয়ে হাজির হয়েছে ইয়েমেনে। শুধু তাই নয়, আল কায়দা এখন আমেরিকায় গিয়েও হাজির হয়েছে। ভয়ঙ্কর সব ব্যাপার সেপার। এইগুলো নিয়ে লিখতে গেলেও উপন্যাস হয়ে যাবে। এখানে আপাতত ইয়েমেনেই সীমাবদ্ধ থাকা যাক।

কেন ইয়েমেন আক্রমণ? এরা তো তাদের প্রতিবেশী সউদি কিংবা ওমান কাউকেই আক্রমণ করেনি। বরং এই দেশটি ছিল সমাজতন্ত্রের মোহে আচ্ছন্ন। কিন্তু এখানেও আমেরিকা মুসলিমদের অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিল ইয়েমেনের কি গুরুত্ব ইসলামিক পুনরুত্থানে।

যে ওসামা বিন লাদেনের পিছনে ছোটতে ছোটতে ওদের প্রায় অক্কা পাবার দশা, উনার পূর্ব পুরুষরা ইয়েমেন থেকে মাইগ্রেট করা। ওসামার বাবা ছোট বেলায় যে স্বপ্ন বার বার দেখে স্কলারের শরণাপন্ন হয়েছিলেন, সেই স্বপ্ন ছিল কাল পতাকা বহনের এবং এর নেতৃত্ব দেয়ার। এটা ১০০% সত্য প্রমাণ করা সম্ভব নয় কারণটা সবারই জানার কথা। কিন্তু যেই সোর্স থেকে এই ইনফরমেশন তাকে মিথ্যা প্রমাণ না করতে পারলে, গ্রহণ করাটাই আমার কাছে শ্রেয়।

রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর হাদিস থেকে এটা স্পষ্ট, ইয়েমেন ইমাম মাহদির আগমনকে সাহায্য করবে।

হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন বলেন,

“তারপর একজন ঘোষণাকারী প্রাচ্যে (পূর্বে, অর্থাৎ তৎকালীন খোরাসান, হিন্দুস্তানসহ বিশ্ব মানচিত্র অনুযায়ী মক্কা-মদিনার পূর্বদিকে অবস্থিত সকল ভূখণ্ডগুলোতে অবস্থানরত সকল মুসলিমদের জন্য) ঘোষণা দিবে, ওহে লোকসকল, তোমরা সিরিয়ায় ঢুকে পড়ো। কারণ, সেটি মুসলমানদের আশ্রয়স্থল এবং তোমাদের নেতাও (ইমাম মাহদি) সেখানে অবস্থান করছেন। সেদিন মুসলমানদের উত্তম সম্পদ হবে সেই সব বাহন, যেগুলোকে আরোহণ করে তারা সিরিয়া প্রবেশ করবে। আর সেই সব খচ্চর, যেগুলোতে চড়ে তারা রওনা হবে। তারা সিরিয়া পৌঁছে যাবে। তোমাদের ইমাম ইয়েমেনবাসীদের নিকট বার্তা পৌছবেন, তোমরা আমাকে সাহায্য দাও। তখন সত্তর হাজার ইয়েমেনবাসী আদেন (ইয়েমেনের একটি প্রদেশ) এর তাগড়া উটের পিঠে আরোহণ করে বন্ধ তরবারিগুলো ঝুলিয়ে আসবে এবং বলবে, আমরা আল্লাহর সাচ্চা বান্দা। না আমরা প্রতিদান-পুরস্কারের প্রত্যাশী, না জীবিকার সন্ধানে এসেছি। এমনকি তারা আন্তাকিয়ার আমাকে (বর্তমান মানচিত্র অনুযায়ী ‘আন্তাকিয়া’ দক্ষিন তুরস্কের সীমান্তবর্তী এলাকা যা সিরিয়ার আলেপ্পোর সাথে সীমানা ভাগাভাগি করছে এবং ‘আমাক’ সিরিয়ার এই আলেপ্পোর একটি অংশ, আরবীতে আলেপ্পোকে ‘হালাব’ বলা হয়) মাহদির নিকট চলে আসবে। তারা অন্যান্য মুসলমানদের সাথে যুক্ত হয়ে রোমানদের (খ্রিস্টানদের) বিরুদ্ধে ঘোরতর যুদ্ধ (মালহামার অংশ) লড়বে। এই যুদ্ধে ত্রিশ হাজার মুসলমান শহীদ হয়ে যাবে।

কোন রোমান (খৃষ্টান) এই ঘোষণা শুনতে পাবে না। তোমরা (মুসলিমরা) পায়ে পায়ে এগিয়ে চলবে। সে সময় তোমরা আল্লাহপাকের শ্রেষ্ঠতম বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হবে”।

(আসসুনানুল ওয়ারিদাতুল ফিল ফিতান, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১১০)

সর্বনাশ এর চেয়ে ৯/১১ এবং পারমাণবিক বোমা আর কি হতে পারে। সঙ্ঘত কারনেই আমেরিকা সেখানে আক্রমণ করেছে। সঙ্গে নিয়েছে বিশ্বাসঘাতক মুসলিম নামধারী সরকারকে। আর সউদি আরব এতেও শান্তি না পেয়ে ইয়েমেন ও সউদি সীমান্তে প্রায় ২০০০ কিলোমিটার বর্ডার উঁচু ওয়াল নির্মাণে ব্যস্ত। বুঝাই যায় কেন ইয়েমেন টার্গেট। এর মধ্যে আবার আমেরিকান সিটিজেন ইমাম আওলাকি আমেরিকা ছেড়ে বাসা বেঁধেছেন এই গরীব এলাকায়। এই একজন আওলাকিকে মারতে আমেরিকার অনেক বছর কষ্ট করতে হয়েছে যদিও এর সরকার এবং প্রতিবেশী সবগুলো সরকার আমেরিকাকে সাহায্য করেছে এই ব্যাপারে।

কেন দক্ষিন ইয়েমেনের আদেন আবিয়ানে এত সব সরকারী, আমেরিকান ড্রোন আক্রমণ? কেন তাদেরকে এখনও নিঃশেষ করতে পারল না? আফসোস। এই আদ আদিয়ান থেকে বের হওয়া মাত্র ১২,০০০ বিশ্বাসী আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করতে সাহায্য করবে। এই ১২ হাজার সামলানো বোধ হয় আর হল না আমেরিকার।

আহমাদ থেকে বর্ণিত, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন যে রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“আদেন আবিয়ান (বর্তমানে দক্ষিন ইয়েমেনের দুটি প্রদেশ) থেকে বার হাজার সৈন্য (মুজাহিদ) বের হয়ে আসবে। তারা আল্লহ ও তার রাসুলের জন্য (দ্বীনের জন্য) বিজয় বয়ে আনবে। আমার এবং তাদের মধ্যে তারাই উত্তম।”

(আহমাদঃ ২৯১৮, ২০৭৯; তাবরানী, ১১০২৯ (১১/৫৬) )

আদেন আবিয়ানের কি অবস্থা? youtube এ
Sharia law in Yemen (Ansar Al-Sharia) - انصار شريعة এবং Meeting the fighters of Ansar al-Sharia in Yemen লিখে সার্চ দিয়ে ভিডিও দুইটি দেখলেই বুঝা যাবে। সেখানে পুরা ইসলামিক শরিয়া চালু। মানুষ নিজেই অকপটে বলছে তাদের অভিজ্ঞতার কথা।

২০১৪ সাল আমেরিকার জন্য দুঃস্বপ্ন ভয়ে আনবে। সাথে আনবে মার্কিন দালাল সউদি ও অন্যান্য আরব দেশগুলোর শাসকদের জন্যও।
সুতরাং কারা ২০১৪ সালে ইয়েমেন নিয়ে ভয়ে থাকবে তা মনে হয় আর বলার দরকার নেই।

No comments:

Post a Comment