খন্দক যুদ্ধ তখন শুরু হয়ে গেছে। মদীনার আউস গোত্রাধিপতি
সা’দ ইবন মুআ’জ (রাঃ) যুদ্ধ সাজে সজ্জিত হয়ে রণাঙ্গনে যাচ্ছেন। বনু হারেসার
দুর্গের পাশ দিয়ে যাবার সময় দুর্গের উপর উপবিষ্ঠ সা’দের মা বললেন, “বাছা তুমি তো
পিছনে পড়ে গেছ, যাও তাড়াতাড়ি।”
যুদ্ধকালে মারাত্মকভাবে তীরবিদ্ধ হলেন সা’দ ইবন মুআ’জ
(রাঃ)। যুদ্ধ ক্ষেত্রে থাকা তাঁর পক্ষে আর সম্ভব হলোনা। মহানবী (সা) তাঁকে
তাড়াতাড়ি মসজিদের সন্নিকটবর্তী এক তাঁবুতে নিয়ে এলেন। সা’দ ইবন মুআ’জ (রাঃ) আর
যুদ্ধে যেতে পারলেন না। তাঁর অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে লাগল। কিন্তু নিজের দিকে
তাঁর কোন খেয়াল নেই, তাঁর বড় চিন্তা, ইসলামের শত্রুর বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ করতে
পারছেন না। আর একটি চিন্তা তাঁর মঙ্কে আকুল করে তুলছিল, তিনি যদি এ আঘাতে মারা
যান, তাহলে ইসলাম বৈরী কুরাইশদের চরম শিক্ষা দেয়ার ঘোরতর যুদ্ধগুলোতে তিনি আর শরিক
থাকতে পারবেন না। সা’দ ইবন মুআ’জ (রাঃ) আল্লাহুর কাছে প্রার্থনা জানালেন,
“হে
আল্লাহ, কুরাইশদের সাথে যদি যুদ্ধ অবশিষ্ঠ থাকে তবে আমাকে জীবিত রাখুন। তাদের সাথে
যুদ্ধ করতে আমার খুব সাদ জাগে, কারণ, তারা আপনার রাসুলকে কষ্ট দিয়েছে, তাঁর প্রতি
মিথ্যা আরোপ করেছে এবং মক্কা থেকে বহিষ্কার করে দিয়েছে। আর যদি কোন যুদ্ধ না
থাকে,তবে এ আঘাতেই যেন আমার শাহাদাত লাভ হয়।”
খন্দক যুদ্ধের পর কুরাইশদের সাথে
প্রকৃত অরথে আর কোন যুদ্ধ সংগঠিত হয়নি। মক্কা বিজয়ের সময় ছোট খাট সংঘর্ষ ছাড়া বড়
রকমের কোন যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি।
খন্দক যুদ্ধ শেষ হলো, হযরত সা’দ ইবন মুআ’জ (রাঃ) আর সেরে
উঠলেন না। শাহাদাতের দিকে তিনি এগিয়ে চললেন। মসজিদে নববীর তাঁবুতেই তখন তিনি থাকেন। শাহাদাতের পরম
মুহূর্ত একদিন ঘনিয়ে এল তাঁর। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন হযরত মায়াজ। সংবাদ পেয়ে
মহানবী (সাঃ) ছুটে এসে মায়াযের মাথা কলে তুলে নিলেন। সৌম্য শান্ত, পরম ধৈর্যের
প্রতীক আবু বকর (রা) তাঁর মৃতদেহের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন, “আমার কোমর ভেংগে
গেছে।” মহানবী (সাঃ) আবু বকর (রাঃ) কেসান্তনা দিয়ে বললেন, এরূপ কথা বলা চলে না আবু
বকর।” সিংহ হৃদয় হযরত উমার (রাঃ) মায়াজের পাশে বসে অঝরে কাঁদছিলেন। সংবাদ শুনে সা’দ
ইবন মুআ’জ (রাঃ) এর মা ছুটে এলেন। তাঁর চোখে অশ্রু, কিন্তু মুখে তিনি বললেন, “বীরত্ব, ধৈর্য ও দৃড়তার মধ্য দিয়ে সা’দ
সৌভাগ্যশালী হয়েছে।”
No comments:
Post a Comment