‘বিশ্বভ্রাতৃত্ব’ এর
দ্বারা উদ্দেশ্য ইহুদী ভ্রাতৃত্ব কিংবা তাদের সহযোগী-সমর্থক। ইহুদী বিরোধী কোন
জাতি-গোষ্ঠী বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের আওতাভুক্ত নয়। বরং তারা মানবীয় ভ্রাতৃত্বের
বহির্ভূত, যারা কিনা মানবতার জন্য হুমকি। ভিন্ন শব্দে ‘আন্তর্জাতিক প্রতিপক্ষ’।
তাই যখন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, “অমুক ভূখণ্ডের বর্তমানের
পরিস্থিতিতে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব উদ্বিগ্ন”, তখন একথার দ্বারা উদ্দেশ্য হয়, এসব অঞ্চলে
ইহুদী স্বার্থ হুমকির সম্মুখীন, সে জন্য ইহুদী ভ্রাতৃত্ব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
‘বিশ্ব
নিরাপত্তা’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য এমন একটি জগত, যেখানে ইহুদীদের পরিকল্পনার
বিস্তৃততর ইসরাইলের প্রতিষ্ঠা ও হাইকেলে সুলাইমানির নির্মাণে কোন শক্তি
প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে না। এই নিরাপত্তা অর্জনেরই লক্ষ্যে খোরাসানকে (বর্তমান
আফগানিস্তান) রক্তের সাগরে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই নিরাপত্তার সন্ধানেই ইরাকের
নিস্পাপ শিশুদের জীবনগুলোকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই সেই শান্তি মিশন, যার গতি এখন
ভারতীয় উপমহাদেশের দিকে মোড় নিয়েছে এবং এখানকার মুসলিম ভূখণ্ডগুলোকে বাধ্য করছে,
যেন তারা নিজেদেরকে মূর্তিপূজারীদের সম্মুখে নত করে দিয়ে তাদের আত্মমর্যাদা ও
ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত মূর্তিপূজারীদের উপর ছেড়ে দেয়।
একটি
প্রশ্নের উত্তর আমাদেরকে খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে যে, শুধু মুসলিম ভূখণ্ডগুলোকেই
নিরস্ত্র করা হচ্ছে কেন? অথচ ইহুদি/খ্রিস্টান/মূর্তিপূজারী ভূখণ্ডগুলোকে সবদিক
থেকে অস্ত্রসজ্জিত করা হচ্ছে? উত্তর হল, ইহুদি/খ্রিস্টান/মূর্তিপূজারী ভূখণ্ডগুলো
অস্ত্রসজ্জিত হওয়া ‘বিশ্ব নিরাপত্তা’ এর জন্য জরুরী আর মুসলিম ভূখণ্ডগুলোর
অস্ত্রসমৃদ্ধ থাকা ‘বিশ্বশান্তি’ এর জন্য হুমকি।
এছাড়াও
আরও বহু পরিভাষা আছে, যেগুলো ইহুদীরা বিশেষ অর্থে ব্যবহার করে থাকে। যেমন-
ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবাধিকার, বিশ্বশান্তি, সন্ত্রাসবাদ, সুবিচার, সমঅধিকার, লিঙ্গবৈষম্য,
নারী স্বাধীনতা ইত্যাদি। এসব পরিভাষার মর্ম বুঝতে আমাদেরকে ইহুদীদের পরিকল্পনাসমূহ
জানতে হবে। অন্যথায়, কিয়ামত পর্যন্ত আমরা শান্তি, নিরাপত্তা ও জাতীয় পরিভাষাসমূহের
কান্না কাঁদতেই থাকব।
যতক্ষণ
পর্যন্ত আমরা ইহুদী পরিভাষাগুলো না বুঝব, ততক্ষন পর্যন্ত আমাদের বুঝে আসবে না যে,
ইহুদী মদদপুষ্ট পশ্চিমা শক্তিগুলো তাদের কাছে ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের স্তুপ তৈরি করে
চলেছে আর মুসলিম শক্তিগুলোর হাত থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নিচ্ছে। পূর্ব তিমুরকে বিশ্বের
সবচেয়ে বড় মুসলিম অধ্যুষিত ভূখণ্ড ইন্দোনেশিয়া থেকে আলাদা করে খৃষ্টানপ্রধান
স্বাধীন ভূখণ্ডে পরিণত করা হচ্ছে আর ফিলিস্তিন কাশ্মীর আরাকানের ক্ষেত্রে ইহুদী আর
মূর্তিপূজারীদের মদদ দিচ্ছে। একজন ইহুদীর মৃত্যুতে সমগ্র বিশ্ব মিডিয়া চিৎকার করে
উঠছে আর মুসলিম উম্মাহর রক্ত দ্বারা নদী সাগরকে লাল করা হলেও কারও মানবাধিকারের
কথা মনে পড়ে না।
‘জাতিগত
বন্ধুত্ব’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল মুসলিম ভূখণ্ডগুলোর ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী
অমুসলিম রাষ্ট্রের উপর পূর্ণ আস্থা আনিয়ে ভৌগলিক নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্বহীন
করে তোলা। সুতরাং এখন আর তোমার আধুনিক অস্ত্রের কোন দরকার নেই। কাজেই এখন থেকে
তুমি তোমার অর্থনীতিতে উন্নতি সাধনের প্রতি মনোনিবেশ করো এবং রাষ্ট্রকে অস্ত্রমুক্ত
করে সেনাবাহিনীকে ‘পুতুল’ বানিয়ে রাখো। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে জাতিগত
প্রেম-বন্ধুত্ব আর সাংস্কৃতিক বিনিময়ের রাগ প্রচারের উদ্দেশ্য এছাড়া আর কিছুই নয়
যে, আমাদের মুসলিম যুবকদেরকে এই সকল অমুসলিমদের চুলের বেণীর বন্দি বানিয়ে দেওয়া।
কোন
কোন মুসলিম ভূখণ্ডের তথাকথিত সুশীল সমাজ বলছে, আরব দেশগুলো যখন ইসরাইলকে মেনে
নিয়েছে, তখন আমরা কেন ফিলিস্তিনের ব্যাথায় কাতর হব যে, তাদেরকে আমাদের শত্রু
বানিয়ে রাখব? এরা দেশের সেই মুনাফিক শ্রেণী, যারা প্রতি যুগে নিজ ভূখণ্ড আর ধর্মের
কপালে লাঞ্ছনার তিলক এঁটে দিয়েছে, ডলারের বাজারে নিজেদের মান সম্ভ্রম, আত্মমর্যাদা
ও বিবেক বুদ্ধি নিলাম করেছে।
এই
স্পর্শকাতর পরিস্থিতিকে সামনে রেখে ভূখণ্ড ও ধর্মের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত
প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষাকে দৃঢ় করার কাজে আরও আন্তরিক ও সচেতন হওয়া
দরকার এবং বন্ধু নির্ণয়ের কাজটি নিজ ভূখণ্ড ও ধর্মের স্বার্থকে সামনে রেখে করা
দরকার – অন্য কারও স্বার্থকে সামনে রেখে নয়। কারণ, বীরোচিত ইতিহাসের ধারক ও
আত্মমর্যাদাসম্পন্ন এই মুসলিম জাতি সব সময় আপন রব এবং নিজ তরবারিধারী বাহুর উপরই
ভরসা রাখে।
No comments:
Post a Comment