Thursday, October 3, 2013

দাজ্জালি শক্তির মিডিয়া যুদ্ধ ও সাংবাদিকদের দায়িত্ব



যেমনটি বলা হয়েছে, দাজ্জালের ফেতনায় বাস্তবতার চেয়ে মিথ্যা ও প্রতারণা বেশি থাকবে এবং সেই মিথ্যা-প্রতারনাকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার উপায় হবে মিডিয়া। তাই যে সব সাংবাদিক নিজেদেরকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত মনে করেন এবং নিজেদেরকে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ রাখতে ইচ্ছা করেন, তারা সর্বাবস্থায় দাজ্জালি শক্তিগুলোর মিথ্যা ও প্রতারণার বিরুদ্ধে নিজেদের কলম ও জবানকে ব্যবহার করুন। সারা বিশ্বের কুফরি মিডিয়া ইসলামের বিরুদ্ধে বিষ উদগীরন করছে এবং নিজেদের ভুল ব্যবস্থাপনাকে শান্তি ও সুবিচারের আয়োজন হিসাবে প্রমাণিত করতে চাচ্ছে। এমতাবস্থায় মুসলমান সাংবাদিক ভাইয়েরা কি শুধু এই অজুহাতে আপন ধর্মের উপহাস-মশকারা সহ্য করে নিতে পারে যে, আমি যদি ইসলামের পক্ষে লিখি, তাহলে আমার চাকরি চলে যাবে? এর অর্থ কি এই নয় যে, দাজ্জাল এসে বলবে, আমার কথা মেনে নাও; আমার কথা মেনে নাও; অন্যথায় তোমার রিজিক কেড়ে নেওয়া হবে?

এটি কোন সংগঠনের যুদ্ধ নয়। না কোন রাষ্ট্রের, না বিশেষ কোন গোষ্ঠীর। বরং এটি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত ও ইবলিসের গোলামদের মধ্যকার লড়াই। বিশেষ কোন বিভাগে নয় – এই যুদ্ধ চলছে মানবজীবনের সব কটি অঙ্গনে। তাই ইবলিসের গোলামরা সেই কাজগুলোই করছে, যেগুলো তারা জীবনভর করে আসছে। কিন্তু মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত কা’ব ইবনে আশরাফের উত্তরসূরিদেরকে আপন নবীর দ্বীন-ধর্ম নিয়ে তামাশা করতে দেখে কিভাবে নীরব থাকবে? 

নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচার-মাধ্যমের গুরুত্বকে কখনো অবহেলা করেননি, বরং মিডিয়াযুদ্ধের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সে যুগের প্রচলিত প্রচার মাধ্যমকে সময় সুযোগ মতো পূর্ণাঙ্গরূপে ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন ইসলামপূর্ব যুগে কাবার দেয়ালকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করা হতো কাফেররা বিভিন্ন কুৎসামূলক কথা রটনা করত তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামরাসূলের কবিখ্যাত হযরত হাস্সান বিন সাবেত রা.কে বলতেন, ‘হে হাস্সান! আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে জবাব দাও আল্লাহ রূহুল কুদস (জিবরাইল) দ্বারা তোমাকে সাহায্য করবেননির্দেশ পালনার্থে হযরত হাস্সান বিন সাবেত রা. নিজের ইলহামী কাসীদার সাহায্যে কাফের-মুশরিক ইসলামের শত্রুদের এমন দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতেন যে, তাদের কয়েক পুরুষ পর্যন্ত তারা একথা ভুলতে পারত না এক বর্ণনায় আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য মিম্বর স্থাপন করেছিলেন, যে মিম্বরে দাঁড়িয়ে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ হতে জবাব দিতেন একবার আরবের এক গোত্র নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাব্য বক্তৃতায় মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ করে বসল রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন তিনিরাসূলের কবিখ্যাত হযরত হাস্সান বিন সাবেত রা. এবংখতীবে রাসূলখ্যাত সাম্মাস বিন কায়েস রা.কে মোকাবিলার জন্য নির্বাচন করলেন দুজনই কবিতা আবৃত্তি বাকশৈলীর চিত্তাকর্ষক প্রদর্শনী করলেন মুসলমান কবি বক্তার শ্রেষ্ঠত্ব সবাই স্বীকার করে নিল উমরাতুল কাযার সময় যখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরামের হালতে তাঁর প্রতি প্রাণ উৎসর্গকারী সাহাবায়ে কেরামকে সঙ্গে নিয়ে মক্কা মুকাররমায় প্রবেশ করছিলেন তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে সামনে চলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা বীরত্বের সঙ্গে কিছু কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন ওই পংক্তিগুলোতে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদব সম্মানের প্রসঙ্গ যেমন ছিল তেমনি কাফেরদের প্রতি ধমকিও ছিল ওমর রা. তাঁকে বারণ করার চেষ্টা করলেন নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে ওমর! তাঁকে কবিতা আবৃত্তি করতে দাও এটা ওই লোকদের ওপর তীর ছুঁড়ে মারার চেয়েও বেশি কার্যকরীদুশমনের নাকের ডগায় পৌঁছে তাদেরকে ভীত-সন্ত্রস- করে তোলার এর চেয়ে সুন্দর পদ্ধতি আর কী হতে পারে! কেননা হুদাইবিয়ার চুক্তিপত্রেঅস্ত্র প্রদর্শনীরওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল, কিন্তুকবিতা আবৃত্তিরওপর কোনো বাধা ছিল না

প্রচারণার প্রচলিত সহজলভ্য পদ্ধতি ব্যবহারের পাশাপাশি নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামইহুদী প্রচার-মাধ্যমএর প্রতিরোধের প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব দিতেন কাব ইবনে আশরাফ ইহূদী প্রোপাগান্ডার এক শক্তিশালী ভিত ছিল তার যেমন অঢেল সম্পদ ছিল তেমনি সে ছিল একজন কবি নারীদের অবাধ স্বেচ্ছাচারী স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাকে গণ্য করা যায় কবিতায় মুসলিম নারীদের নাম ধরে ধরে কুৎসা রটাত রিসালাতের প্রতি কটূক্তিকারীদের আশ্রয়স্থল সাহায্যকারীও ছিল সে বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তা দান এবং মক্কার কাফেরদেরকে সংঘবদ্ধ করার জন্য মক্কা মুকাররমা চষে বেড়াত কাফেরদের সমাবেশে আল্লাহ তার রাসূলের প্রতি কটূক্তি করে কবিতা পাঠ করে শোনাত নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে হযরত মুহাম্মদ ইবনে সালামা রা. ওই অভিশপ্তকে খতম করেন এবং চিরদিনের জন্য তার মুখ বন্ধ করে দেন

ইহূদী আবু রাফেকুফুরী সাংবাদিকতার’ (এটাকে যদি সাংবাদিকতা বলা হয়) সবচেয়ে বড় আর্থিক সহায়তাকারী ছিল ইসলামের বিরুদ্ধে পানির মতো পয়সা ব্যয় করতো অসৎ উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কবিদের সেবায় দিরহাম-দিনারের থলি পৌঁছে দিত সে কবিরা যেন জীবন-জীবিকার দিক থেকে সম্পূর্ণ দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে ইসলাম মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিডিয়াযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারে এর সব ব্যবস্তা সে করে দিত দীনী জযবায় উজ্জীবিত কয়েকজন নও মুসলিম তাকেও তার চিরস্থায়ী ঠিকানা জাহান্নামে পাঠিয়ে দেন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সংবাদ পেলেন অত্যন্ত আনন্দ প্রকাশ করলেন এবং ওই ভয়াবহ শত্রুকে যারা জাহান্নামে পাঠিয়েছেন তাদের কামিয়াবীর জন্য দুআ করেছেন

শেষোক্ত দুটি ঘটনার ক্ষেত্রে ইসলামবিরোধী প্রোপাগাণ্ডা ছাড়াও ছিল ইসলামবিরোধী অব্যাহত ষড়যন্ত্র এবং শান্তিপূর্ণ সহানস্থানের চুক্তি ভঙ্গের মতো অমার্জনীয় কিছু উপাদান উপলক্ষ্য তাছাড়াও এসব ঘটনার কারণ হেকমত বিভিন্ন ধরনের হতে পারে কিন্তু আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে একথা বলতে পারি, ওই যুগে প্রচলিত মিডিয়াকে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের উপকার ফায়দার জন্য পূর্ণাঙ্গরূপে ব্যবহার করেছেন মিডিয়া আগ্রাসন ইসলামবিরোধী প্রোপাগাণ্ডার বিষয়টিকে তিনি সামান্যও এড়িয়ে যাননি বা উপেক্ষা করেননি আধুনিক প্রযুক্তি যখন থেকে প্রচার মাধ্যমে উৎকর্ষ সাধন করে এবং বক্তৃতা কবিতা আবৃত্তির পাশাপাশি সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশনের ভূমিকা যুক্ত হয় তখন থেকে মিডিয়ায় এক বিপ্লব সংঘটিত হয়ে যায় ঘরের কোণেকোণে পর্যন্ত দুশমনদের অনুপ্রবেশ ঘটে এতে মহিলা শিশুদের মানসিকতা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় মিডিয়ায় ইসলাম মুসলমানদের দুশমনদের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম হয় বর্তমানে প্রায় পুরো মিডিয়া জগৎটা পশ্চিমা পদলেহী এবং ইহূদী-খৃষ্টানদের এজেন্টে ছেয়ে গেছে নগ্নতা অশ্লীলতাকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে মানবিক মূল্যবোধের ধারণাটাই তারা পাল্টে দিয়েছে মিথ্যাকে সত্য এবং বাতিলকে হক বানিয়ে পেশ করা হচ্ছে

বাণিজ্যিক রেডিও-টেলিভিশনগুলো সংবাদের শুরুতে এবং সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় অথবা সম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় কুরআনের কোনো আয়াত অথবা হাদীসে নববীর তরজমা প্রচার বা প্রকাশ করে সাধারণ মানুষের মনে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, পুরো সংবাদ অথবা পুরো প্রোগ্রামে ইসলামের স্পিরিট ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে ইসলামের লেভেল লাগিয়ে দেওয়ার পর চাই উগ্র বিনোদনের পৃষ্ঠাসহ অনেক কিছু ইসলামের খাতায় সংযুক্ত হয়ে যায় মিডিয়ায় ইসলাম মানবিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে একতরফা যুদ্ধ চলছে সাংস্কৃতিক দুর্বৃত্তরা ভদ্রতা মানবিকতার চেহারা ঢেকে অশ্লীলতা নির্লজ্জতার প্রবাহে ভেসে যাচ্ছে মানবতাবিধ্বংসী কালচারে আজ ছেয়ে যাচ্ছে চারদিক

অতএব, হে কলম সৈনিকগণ, দাজ্জালি শক্তিগুলো মিডিয়ার ফুঁৎকারে ইসলামের প্রদীপকে নিভিয়ে দিতে চায়। আর আপনি একদিকে ইসলামের অনুসারী, অপরদিকে একজন মিডিয়াকর্মী। এক্ষেত্রে আপনি ইসলামের আমানতদার। আপনার কলমের উত্তাপ যেন ইস্লাম-প্রদীপের আলোকে প্রজ্জলিত রাখে, সেক্ষেত্রে আপনার দায়িত্ব পালন করতে হবে। আপনি বিশ্বাস রাখুন, আপনার রব আপনার জন্য এই জগতের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত জগত তৈরি করে রেখেছেন।

No comments:

Post a Comment