Wednesday, October 2, 2013

দাজ্জাল ও মিডিয়াযুদ্ধ

খলীফা আব্দুল হামিদ দ্বিতীয় (১৮৪২-১৯১৮, ইসলামী খেলাফতের ৯৯ তম খলীফা এবং তুরস্কের উসমানিয়্যা সাম্রাজ্যের ৩৪ তম সুলতান) পশ্চিমা মিডিয়াগুলো সম্পর্কে একটা মন্তব্য করেছিলেন। তা হল, ‘এগুলো শয়তানের সন্তান’। কিন্তু তিনি যদি এ যুগের মানুষ হতেন, তাহলে একে ‘দাজ্জালের চোখ ও কণ্ঠ’ নাম দিতেন। 

দাজ্জাল আরবি ‘দাজলুন’ থেকে ব্যুৎপন্ন। ‘দাজলুন’ অর্থ আচ্ছাদিত করা। দাজ্জাল অর্থ অনেক আচ্ছাদনকারী। দাজ্জালকে এজন্য দাজ্জাল বলা হয় যে, সে নিজের মিথ্যা ও প্রতারণার মাধ্যমে সত্যকে ঢেকে ফেলবে। প্রতারণার মাধ্যমে সে বড় বড় লোকদেরকে বিভ্রান্ত করে ফেলবে। তার ধোঁকা ও প্রতারণার ফাঁদে পড়ে মানুষ দেখতে না দেখতে ঈমান থেকে হাত ধুয়ে বসবে। 

পুরো ইলেকট্রনিক মিডিয়া (স্যাটেলাইট ও ইন্টারনেট) ও প্রিন্ট মিডিয়া জগতকে কয়েকভাগে ভাগ করা যায়।

১) সংবাদ মাধ্যম (নিউজচ্যানেল, ছাপানো নিউজ পেপার, অনলাইন নিউজ পেপার) 
২) বিনোদন মাধ্যম (কমার্শিয়াল চ্যানেল, চলচ্চিত্র ও নাট্য শিল্প সংস্থা)
৩) যোগাযোগ মাধ্যম (সহজলভ্য ইন্টারনেট ও সুলভ মূল্যে মাল্টিমিডিয়া মোবাইল ফোন ও নিম্নকলরেট)
৪) প্রচার মাধ্যম (বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল, নিউজ পেপার ও বিলবোর্ডের অ্যাড)

সংবাদ মাধ্যমঃ পশ্চিমা প্রচার মাধ্যমগুলোর কর্মধারাও অনেকটা এরকম। তারা যে বাস্তবতাকে পৃথিবীর দৃষ্টি থেকে লুকানো প্রয়োজন বোধ করছে, তার গাঁয়ে তারা সংশয় ও সন্দেহের এমন চাদর জড়িয়ে দেয় যে, মানুষ তার তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয় না। পক্ষান্তরে যে বিষয়টিকে তারা প্রমাণিত করার ইচ্ছা করে, মিথ্যার হাজারো সুদর্শন গেলাফ চড়িয়ে তাকে সপ্রমাণিত করে ছাড়ে। যেমন- তারা যদি আজ সংবাদ প্রচার করে, সমগ্র অস্ট্রেলিয়া সমুদ্রে ডুবে গেছে, তা হলে এই ‘পশ্চিমা মিডিয়ায় আস্থাশীল বিশ্ব’ এর জন্য সংবাদটি বিশ্বাস না করে উপায় থাকবে না।

আর বর্তমানে এই পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম ও সংস্থাগুলো সারা বিশ্বে নিজেদের অবস্থান এমনভাবে গত এক শতকে পাকা করে নিয়েছে যে, বিশ্বের প্রতিটি  ভূখণ্ডেই স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোও এই পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম ও সংস্থাগুলোর সংবাদের উপর ভিত্তি করেই আন্তর্জাতিক সব সংবাদ প্রচার করে। ফলে যখন কোন ভূখণ্ডে একটি ঘটনা ঘটে, স্থানীয়ভাবে ওই ভূখণ্ডে ঐ ঘটনা সম্পর্কে যে সংবাদই প্রচার হোক না কেন, বিশ্ব সেটাই জানবে যা কিনা এই পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম ও সংস্থাগুলো প্রচার করবে। 

সুতরাং, দাজ্জাল যখন সশরীরে এসে নিজের খোদাই দাবি করবে, এই ইহুদি-খ্রিস্টানদের নিয়ন্ত্রণাধীন এই পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম ও সংস্থাগুলো সারা বিশ্বে সগৌরবে তা প্রচার করবে এবং এক শ্রেণীর দুর্বল ঈমানের মুসলমান নামের দাবিদার প্রথম ধাক্কাতেই তা বিশ্বাস করে ঈমান হারিয়ে ফেলবে। 

বিনোদন মাধ্যমঃ সকল প্রকার বিনোদন চাই তা সিনেমাই হোক বা নাটকের মতো স্বল্প দৈর্ঘ্য সিনেমাই হোক, এক কথায় এগুলোর গুরু হল হলিউড - সরাসরিই হোক বা ঘুরিয়ে পেচিয়েই হোক। হলিউডকে ইবলিসের মতবাদের দুর্গ আখ্যায়িত করাই অধিক সঙ্গত। দাজ্জালি ব্যবস্থাপনার পথকে সুগম করার জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি অনেক বড় ভূমিকা পালন করছে। এমন একটি বস্তু, যার অস্তিত্ব জগতে নাই, তাকে বাস্তবতার রূপ দিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করা এবং মডার্ন চরিত্রের মানুষদের মস্তিষ্কে বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে এর কোন বিকল্প নেই। এই প্রতিষ্ঠানটি ইহুদীদের প্রস্তুতকৃত পরিকল্পনাসমূহের পক্ষে জনমত তৈরি করছে। বিশেষ করে ইদানিং বিভিন্ন সিনেমায় দেখানোর চেষ্টা করছে, সারা বিশ্বে প্রচুর গণ্ডগোল, অশান্তি আর বেইনসাফী। আর এগুলোর উপশমে/পরিত্রাণে হাজির হচ্ছেন এক মহানায়ক। কখনও মানুষ রূপে বা ভিনগ্রহ থেকে এলিয়েন রূপে। আর কার্টুন সমূহে তো আছেই সুপারম্যান, ব্যাটম্যান আর বেন টেন নামে প্রবল শক্তির অধিকারী একজন যে কোন বিপদ হতে মুক্তিদাতা। আর এর পাশাপাশি ব্যভিচার আর অশ্লীলতাকে বিশ্বব্যপী শিল্পের রূপ দেওয়ার ব্যাপারে এই হলিউডেরই সহদোর মূর্তিপূজারীদের বলিউডের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বিষয়টি এখন আর খোলাসা করে বলার কিছু নেই। আক্ষেপের বিষয় হল, বিভিন্ন ভূখণ্ডের বুদ্ধিজীবী নামধারীরা এই সকল মিডিয়ার নর্তকী-গায়িকার আঙুলের ইশারায় পুতুলের মতো নাচছে। কিন্তু তারপরও প্রগতিবাদী ও মুক্তচিন্তার বাহক ভাবছে। অথচ বাস্তবতা হল, তাদের বিবেক বুদ্ধি সেই কবে হলিউড আর নিজ ভূখণ্ডে হলিউডের শাগরেদ কমার্শিয়াল চ্যানেল, চলচ্চিত্র ও নাট্য শিল্প সংস্থার কাছে নিলাম হয়ে গেছে। 

যোগাযোগ মাধ্যমঃ এই খাতে সহজলভ্য ইন্টারনেট ও সুলভ মূল্যে মাল্টিমিডিয়া মোবাইল ফোন ও নিম্নকলরেট একটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে এবং রাখবে। ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ এর কনসেপ্টকে মাথায় রেখে বিশ্বের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যেখানে তাতক্ষনিকভাবে প্রতিটি সংবাদ পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। যদিও প্রথমে মানুষের দৈনন্দিন কাজের সুবিধার্থে এই তারহীন ফোনব্যাবস্থার শুরু আর মার্কিন সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল কাজে ব্যবহারের জন্য ইন্টারনেটের আবিস্কার। কিন্তু কালের বিবর্তনে আর প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সুযোগে বানিজ্যিকভাবে এই সকল প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গিয়ে সহজলভ্যতা ও কলরেটকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে এখন তা প্রয়োজনীয়তাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এখন এগুলো অবদান রাখতে শুরু করেছে যুবক যুবতীর অবৈধ সম্পর্কে টিকিয়ে রাখতেমাল্টিমিডিয়া সেটে ফোনে কথা বলার সুবিধার পাশাপাশি ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এখন এখন আর প্রয়োজনীয় ইমেইল যোগাযোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন তা গান, মুভি আর ফেসবুক চ্যাটিং এর ভিন্ন বিশ্ব। খুব কম সংখ্যক ব্যক্তিই পারছেন শরীয়তের সীমার ভিতরে থেকে এই সব প্রযুক্তি ব্যাবহার করতে। দুর্বল ঈমানের যুবক যুবতীরা ঘরে বসে কোন নড়াচড়া ছাড়াই দাঁড়িয়ে, বসে কিংবা শুয়ে গড়ে তুলছে পাপের পাহাড়।   

প্রচার মাধ্যমঃ এই মিডিয়া জগতকে প্রচার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করতে গিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার পণ্যের প্রচার করতে গিয়ে আবারও যেন মনের অজান্তেই শয়তানের দাসে পরিণত হয়েছে। বিলবোর্ডসহ নিউজ পেপার ও বিভিন্ন চ্যানেলে অ্যাড দিতে গিয়ে যেন নারীকে পণ্যের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। ব্যভিচার আর অশ্লীলতাকে পুঁজি করে তৈরি করছে অ্যাড। স্বল্প সময়ের এই এক একটি অ্যাড এ ঈমান-আকিদা ও শরীয়তের বিধান তথা ধর্মীয় শিক্ষার সাথে সাংঘর্সিক অনেক কথাই থাকে যা মনের অজান্তে কোমল মতি শিশুদের মনে ঢুকে যায় এবং সেগুলোকেই সত্য ও সঠিক বলে ধরে নেয়। যার ফলে পরে তার জন্য ধর্মীয় শিক্ষাকে গ্রহণ করা বা মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, এমন কি কখনও কখনও চ্যালেঞ্জ করে ঈমানহারা হয়ে পড়ে।

No comments:

Post a Comment