Friday, August 9, 2013

জাতীয়তাবাদ ও ইসলাম

ইসলামের ইতিহাসে তাওহীদের দিকে মানুষকে আহবানের ক্ষেত্রে বিভিন্নমুখী আনুগত্যের সমস্যার সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে নবুওয়াত পূর্ণ হয়ে গেলে ইসলাম আর কোন একটি নির্দিষ্ট মানব সম্প্রদায় বা গোষ্ঠী, কিংবা জনপদের জন্য সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং বিশ্ব মানবতার মুক্তির জন্যে সারা পৃথিবীর সব জাতি ও সব মানুষের জন্য এক ও অভিন্ন বিধান আল কুর’আন নাযিল করা হয়েছে, আর এই এক বিশ্ব, এক জাতি গঠন করতে গিয়ে সবার প্রথমে, একেবারে প্রথম যুগে ইসলামকে মুখোমুখি হতে হয়েছে প্রাক-ইসলামী যুগের সমাজ ব্যবস্থার চলমান প্রেতাত্মা “আসাবিয়াহ” (গোত্রবাদ) এর।

আসাবিয়াহ বর্তমানে জাতীয়তাবাদে রূপ নিয়েছে, এটা এমন একটি আদর্শ যা গোত্র, দল বা জাতির প্রতি “নিঃশর্ত ও বন্ধনহীন” আনুগত্য দাবী করে। এই চূড়ান্ত আনুগত্য ও নানা জাতিতে বিভেদ সৃষ্টি এই দুটি বিষয়ের কারণেই জাতীয়তাবাদ ইসলামের সাথে একটি সাংঘর্ষিক মতবাদ বলে প্রমাণিত হয়েছে। আসাবিয়াহ হলো গোত্রের প্রতি চূড়ান্ত আনুগত্য, আর জাতীয়তাবাদ হলো জাতির প্রতি চূড়ান্ত আনুগত্য। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে, ষষ্ঠ শতাব্দীর আরবদের মূলমন্ত্র ছিল “নিজের ভাই (গোত্রসদস্য) এর পক্ষ নাও, তা সে ন্যায় করুক আর অন্যায় করুক”। একইভাবে বর্তমান শতাব্দীর জাতীয়তাবাদী মূলমন্ত্রের কাছাকাছি কেউ আসতে পারবে কি যেটা বলে, “আমার জাতি; ন্যায় করুক বা অন্যায় !”

ইসলাম তীব্রভাবে আসাবিয়াহ’র ধারণাকে নিন্দা করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস অনুযায়ী, “যে আসাবিয়াহ’র জন্য যুদ্ধ করে বা এর প্রতি মানুষকে উত্তেজিত করে সে আমার দলের অন্তর্ভুক্ত না” (মুসলিম, ইমারাহ ৫৭)। গোত্রের পরিবর্তে ইসলাম নিজেই একটা আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু, একটা প্রধান একত্রীকরণ শক্তি, সামষ্টিক সুসংঘবদ্ধতার প্রাথমিক ভিত্তি। সেজন্য কুর’আন অনুযায়ী মুসলিমরা একে অপরের ভাই ভাই ব্যতীত অন্য কিছু নয় (৪৯;১০) এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুসলিমরা অন্যের মুকাবিলায় “একহস্ত” (আবু দাউদ, জিহাদ ১৪৭)

অতএব, গোত্রপ্রীতির কারণে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারটি স্পষ্টভাবে নিষেধ, আবু দাউদে বর্ণিত হাদীসে আল্লাহ্‌র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “সে আমাদের দলভুক্ত নয় যে আসাবিয়াহ’র দিকে ডাক দেয়, (ন্যাশনালিজম বা জাতিয়তাবাদ), বা আসাবিয়াহর কারণে লড়াই করে কিংবা আসাবিয়াহর কারণে মৃত্যুবরণ করে”। আরেকটী হাদীসে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাতীয়তাবাদ এবং বর্ণবাদ  সম্পর্কে বলেন, “এগুলো ত্যাগ কর, এগুলো তো পঁচে গেছে” [মুসলিম ও বুখারি]

No comments:

Post a Comment