Sunday, August 11, 2013

একটি ভুল শ্লোগানঃ ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার

এই মুখরোচক শ্লোগানটি ইদানীং খুব শোনা যায়। একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী তোতাপাখির মতো তা আওড়ে থাকেন। সম্ভবত তারা বলতে চান, ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয়। অতএব সমাজ-ব্যবস্থা, বিচার-ব্যবস্থা ও রাষ্ট্র-ব্যবস্থার সাথে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। এই সেক্যুলার ধ্যান-ধারণা হয়তো মানব রচিত ধর্মের ক্ষেত্রে সত্য, কিন্তু আসমান-জমিনের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রদত্ত ধর্ম ইসলামের বেলায় তা সম্পূর্ণ অবাস্তব। এতে অনুপরিমাণ সন্দেহ নেই। এই বিষয়ে প্রত্যেক মুসলিমের পরিষ্কার ধারণা ও অটল ঈমান থাকা অপরিহার্য কর্তব্য। পূর্ণ কুরআন মজীদ এবং হাদীস ও সুন্নাহর মৌলিক গ্রন্থাবলী অধ্যয়ন করা সম্ভব না হলে বিষয় ভিত্তিক কুরআনের আয়াতের উপর লিখিত কোনো গ্রন্থর শিরোনামগুলোতে একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।

ইসলামী খেলাফত থাকা অবস্থায় সকল মুসলিম জনপদ ছিল একই কেন্দ্রের অধীন। তখন ইসলামী শাসন-ব্যবস্থা, বিচার-ব্যবস্থাসহ ইসলামের জীবন-ব্যবস্থার বাস্তব কাঠামো ছিল প্রত্যেক মানুষের সামনে দৃশ্যমান। কিন্তু একসময় আমাদের কৃতকর্মের কারণে ইসলামী খেলাফতের দুর্বলতার সুযোগে আল্লাহর দুশমনরা বিশাল মুসলিম সালতানাতকে টুকরা টুকরা করে ফেলে। মুসলিম জনপদগুলো রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত হয়ে গেলে মুসলমানরা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দেওয়া খেলাফত-ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।

দুঃখজনকভাবে বর্তমান সময়ে পৃথিবীর কোনো ভূ-খণ্ডেই পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামী খেলাফত-ব্যবস্থা চালু নেই। আর এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে মানুষের মন থেকে চিরতরে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ জীবন-ব্যবস্থার চিত্র মুছে দিতে আল্লাহর দুশমনরা এই সব অর্থহীন শ্লোগানের কৌশলী ব্যবহারে উদ্যোগী হয়েছে।

হযরত আবু উমামা বাহেলি (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

ইসলামের কড়াগুলো একটি একটি করে ভেঙ্গে যাবে। একটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর মানুষ তার পরেরটি আঁকড়ে ধরবে। তো সর্বপ্রথম যে কড়াটি ভাঙবে, সেটি হল ইসলামী শাসন। আর সর্বশেষটি হল নামাজ 
(সুআবুল ইমান খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৩৬; আল মুজামুল কাবীর খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৯৮; মাওয়ারিদুয যামআন খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৮৭)

অর্থাৎ মুসলিম জাতি অধঃপতনের ধারাবাহিকতায় সর্বপ্রথম যে বিষয়টি পরিত্যাগ করবে, সেটি হল ইসলামী শাসন। আল্লাহপাকের ঠিক করে দেওয়া যাবতীয় হক আদায় করা, যতসব ফরজ আদায় করা এবং ইসলামের দণ্ডবিধির অনুসরণ করা। এই সবগুলি বিষয় ইসলামী খেলাফতের অধীনে অত্যন্ত সুন্দর ও সুচারুরূপে বাস্তবায়িত হয়। কাজেই ইসলামী শাসননীতি অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।

মোটকথা, মুসলমানের জীবন থেকে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি হারিয়ে যাবে বলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, সেটি হল খেলাফত।

ঈমানের দুর্বলতা আর ইহুদী খ্রিষ্টানদের উস্কে দেওয়া আরব জাতীয়তাবাদের উত্থানের কারণে ১৯২৪ সালে তুরস্কের অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীন খেলাফত শাসনের বিলুপ্তির মাধ্যমে মুসলমানদের ইসলামী শাসননীতি খেলাফতের যা অবশিষ্ট ছিল তারও বিলুপ্তি ঘটে। যদিও সেই আরব জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে সমগ্র আরব জাতি এক রাষ্ট্র প্রধাণের অধীনে একটি ভূখণ্ডের পরিচয় দিয়ে বেশিদিন থাকতে পারেনি। ৬০ এর দশকের মাঝে ২২ টুকরায় ভাগ হয়েছে। পরাজিত হয়েছে জাতীয়তাবাদের দোহাই, জয়ী হয়েছে ক্ষমতা পিয়াসীদের একক পতাকা আর একক মসনদের স্বপ্ন। খেলাফত বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া মানে ইসলামের সুবিচারমূলক সুষম রাষ্ট্রব্যবস্থার বিলুপ্তি। 

অতএব এই পরিবর্তিত পরিস্হিতিতে সকল মুমিন-মুসলমানের মনে অনুশোচনা থাকতে হবে এবং জীবনের সকল অঙ্গনে ইসলামী জীবন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় শরীয়তসম্মত উপায়ে চেষ্টা-প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সর্বোপরি অটল বিশ্বাস রাখতে হবে যে, যদিও আমরা সাময়িকভাবে ইসলামী খেলাফতের রহমত থেকে বঞ্চিত, কিন্তু এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামেরও সুষ্ঠু, সুষম ও প্রতিযুগে কার্যকর একটি আদর্শ ব্যবস্থা রয়েছে, যা সর্বযুগে অশান্ত পৃথিবীর জন্য শান্তির একমাত্র চাবিকাঠি। আল্লাহ সকলকে হেফাযত করুন এবং পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামে দাখিল হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।

No comments:

Post a Comment