আল্লাহর সাহায্য কবে আসবে?
৭ ই মে, ২০১৩, দুপুরঃ ফেসবুকে আমার এক জুনিয়র ক্যাডেটের বাঁধভাঙ্গা প্রশ্ন
"বেগ ভাই, একটা প্রশ্ন করি?" "হ্যাঁ, কর" "আল্লাহর সাহায্য কবে আসবে?"
আমার বুঝতে বাকি রইলো না তার মনের অবস্থা।
"যেহেতু তোমার প্রশ্নটি কোরআনের আয়াতের সাথে হুবহু মিল, তাই আমার উত্তরও
কোরআনের আয়াতের মাধ্যমেই, 'নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে'।"
যাই হোক, মূল আয়াতটি নিম্নরূপ,
“তোমরা কি মনে করেছো যে, তোমরা অতি সহজেই জান্নাতে চলে যাবে? অথচ তোমরা
এখনো সেই লোকদের অবস্থা অতিক্রম করোনি যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়েছে।
তাদের উপর এসেছে বহু বিপদ মুসিবত ও দুঃখ কষ্ট। তাদেরকে অত্যাচারে নির্যাতনে
এমনভাবে জর্জরিত করে দেয়া হয়েছিল যে, শেষ পর্যন্ত তৎকালীন রাসূল এবং তাঁর
প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তারা আর্তনাদ করে বলে উঠেছিল আল্লাহর সাহায্য কখন
আসবে? তখন তাদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছিল, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে।”
(সূরা বাকারা ২১৪)
ঈমান আনলে আল্লাহর পরীক্ষা করেন। পরীক্ষা ছাড়া
পুরস্কার পাওয়া যায় না। জান্নাত নামক চিরস্থায়ী পুরস্কারের জন্যে তা
পরীক্ষা অনিবার্য। ঈমানের অনিবার্য দাবি পরকালে বিশ্বাস, ঈমানে মুফাসসালের
ঘোষণা অনুযায়ী ৭টি জিনিসের প্রতি ঈমান আনতে হয়। (১) আল্লাহ, (২) ফেরেশতাগণ
(আ.), (৩) কিতাবসমূহ, (৪) রসূলগণ, (৫) আখেরাত, (৬) ভাগ্যে ভালমন্দ যা
আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে অর্থাৎ তাকদির ও (৭) মৃত্যুর পরে পুনরুত্থান। ঈমান
অর্থ শুধু বিশ্বাস নয়, বরং অন্তরে বিশ্বাস, মুখে ঘোষণা এবং বাস্তবে কাজে
পরিণত করার নামই হচ্ছে ঈমান।
পবিত্র কোরআন মজিদে আল্লাহ পাক সূরা মাউনে দ্বীন অস্বীকারকারীদের পরিচয় বর্ণনা করেছেন :
“তুমি কি দেখেছো সেই ব্যক্তিকে যে পরকালের শুভ প্রতিফলন ও শাস্তিকে
অবিশ্বাস করে? এরাতো সেই লোক যে এতিমকে ধাক্কা দেয়, আর মিসকিনকে খাবার দিতে
উৎসাহিত করে না। পরন্তু ধ্বংস সেই নামাযীদের যারা নিজেদের নামাযের
ব্যাপারে অবজ্ঞা দেখায়। যারা লোক দেখানো কাজ করে। আর সাধারণ প্রয়োজনের
জিনিস লোকদের দেয়া থেকে বিরত থাকে।”
এখানে বাস্তব কর্মকাণ্ডে ঈমানদার এবং ঈমানহীন লোকদের পার্থক্য আল্লাহ বর্ণনা করেছেন।
“মুমিনদের যখন আল্লাহ ও রাসূলের পক্ষ থেকে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য
ডাকা হয় তখন তাদের মুখ থেকে মাত্র এ দু’টো কথাই উচ্চারিত হয় তাহলো-আমরা এ
নির্দেশ মনোযোগ দিয়ে শুনলাম ও জেনে নিলাম।” সূরা নূর-৫১
আল্লাহ মুমিনদেরকে পরীক্ষা করে নেন।
“মানুষ কি মনে করে যে, আমরা বিশ্বাস করি একথা বললেই ছাড়া পেয়ে যাবে এবং
তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তো তোমাদের পরীক্ষা করেছি যারা তাদের
পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নিবেন কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী।”
(সূরা আনকাবুত-২-৩)
“হে নবী, বলে দাও যে, যদি তোমাদের পিতা,
তোমাদের পুত্র, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন তোমাদের
সেই ধনমাল যা তোমরা উপার্জন করেছো, সেই ব্যবসা যার মন্দা হওয়াকে তোমরা ভয়
কর, আর সেই ঘর যাকে তোমরা খুবই পছন্দ কর- তোমাদের কাছে আল্লাহ, তার রাসূল ও
জেহাদ ফি সাবিলিল্লাহর চেয়ে প্রিয় হয় তাহলে তোমরা অপেক্ষা কর, যতক্ষণ না
আল্লাহ তার চূড়ান্ত ফয়সালা তোমাদের সামনে পেশ করবেন। আর আল্লাহ তো ফাসেক
লোকদের পছন্দ করেন না।” (সূরা তওবা-২৪)
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে,
“হযরত খাব্বাব ইবনে আরাত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : একদা আমরা নবী
করীম (সা.) এর নিকট (আমাদের দুঃখ-দুর্দশা ও অত্যাচার-নির্যাতন সম্পর্কে
অভিযোগ করলাম। তখন তিনি তার চাদরটিকে বালিশ বানিয়ে কাবা ঘরের ছায়ায় বিশ্রাম
নিচ্ছিলেন। আমরা তাকে বললাম : আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য
চান না? আপনি কি আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য দোয়া করেন না? তখন তিনি বললেন :
তোমাদের ওপর আর কি দুঃখ নির্যাতন এসেছে? তোমাদের পূর্বেকার ঈমানদার লোকদের
অবস্থা ছিল এই যে, তাদের কারো জন্য গর্ত খোড়া হতো এবং সে গর্তের মধ্যে তার
দেহের অর্ধেক পুতে তাকে দাঁড় করিয়ে তার মাথার ওপর করাত দিয়ে তাকে
দ্বিখণ্ডিত করে ফেলা হতো। কিন্তু এ অমানুষিক অত্যাচার তাকে তার দ্বীন থেকে
বিরত রাখতে পারতো না। আবার কারো শরীর থেকে লোহার চিরুনী দিয়ে আঁচড়িয়ে হাড়
থেকে গোশত আলাদা করে ফেলা হতো। কিন্তু এতেও তার দ্বীন থেকে ফিরাতে পারতো
না। আল্লাহর কসম, এ দ্বীন অবশ্যই পূর্ণতা লাভ করবে। তখন যেকোন উটারোহী লানআ
থেকে হাযারামাউত পর্যন্ত দীর্ঘ পথ নিরাপদে সফর করবে। আর এ দীর্ঘ সফরে সে
আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করবে না। এবং মালিক তার মেষ পালের ব্যাপারে নেকড়ে
ছাড়া আর কারো ভয় করবে না। কিন্তু তোমরা খুবই তাড়াহুড়া করছো।” (বুখারী)
“হযরত সুফিয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি রাসূল
(সা.)কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম; হে আল্লাহর রসুল (সা.): ইসলাম সম্পর্কে আমাকে
এমন একটি পূর্ণাঙ্গ হেদায়েত দেন যাতে এ সম্পর্কে আর কাউকে প্রশ্ন করার
প্রয়োজন না হয়। রাসূল (সা.) বলেন : বলো “আমানতুবিল্লাহ” অর্থাৎ আমি আল্লাহর
ওপর ঈমান আনলাম এবং তার ওপর সুদৃঢ় থাকো।” (মুসলিম)
মুসলমানদেরকে
আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে নবী রসূলের পথ অনুসরণ করে চলতে গেলে
জুলুম-নির্যাতনের শিকার হতে হয়। কিন্তু আল্লাহর দ্বীন আল্লাহর জমীনে
পরিপূর্ণভাবে কায়েম করা ছাড়া মানবতা, কল্যাণ, মুক্তি কিছুতেই সম্ভব নয়।
মানুষের মনগড়া মত ও পথ মানুষকে এক সমস্যা থেকে হাজারো সমস্যার দিকে ঠেলে
দেয়। কিন্তু স্বার্থান্ধ কায়েমী স্বার্থের ধারক বাহকগণ অন্ধভাবে সত্যের
পথের এ সৈনিকদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে স্তব্ধ করে দিতে চায়। কিন্তু আল্লাহর
শাশ্বত ঘোষণা : “সত্য এসেছে- মিথ্যা দূরীভূত হয়েছে। মিথ্যা দূরীভূত হবেই।"
সেজন্য যদি আরও ৪০ বছর লাগে, তবুও সেটা ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। শেষ জামানার
বিভিন্ন হাদীস বিশেষ করে আশ শাম ( বর্তমান সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন,
প্যালেস্টাইন), আদেন - আবিয়ান (বর্তমান দক্ষিন ইয়েমেন), আরাক (বর্তমান
ইরাক), মিসির (বর্তমান মিসর), খোরাসান (বর্তমান আফগানিস্তান), কন্সট্যান্টিনল (বর্তমান
ইস্তাম্বুল),আল হিন্দ (বর্তমান ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান) এঁর যুদ্ধ বিষয়ক
হাদীসগুলো পড়ে যখন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দিকে তাকাই ,তখন আমার কাছে ৪০ বছর
অনেক বেশি সময় মনে হয়।
No comments:
Post a Comment