Thursday, July 18, 2013

শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার স্ট্যান্ডার্ড

শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান - এই জাতীয় কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি । এখন দেখি শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা সম্মন্ধে আল্লাহ ও তার রাসুল কি বলেছেন :

" হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক মর্যাদাবান যে সর্বাধিক তাকওয়া অবলম্বন করে । নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। " (কুরআন ৪৯:১৩)

"সেই ব্যাক্তি আল্লাহর দরবারে অধিকতর সন্মান ও মর্যাদার অধিকারী, যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া অবলম্বন করে, সকল বিষয়ে আল্লাহর কথা অধিক খেয়াল রাখে। ইসলামে জাতি, শ্রেণীভেদ ও বর্ণ বৈষম্য নেই। আরবের উপর কোন আজমের, আজমের উপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তেমনি সাদার উপর কালোর বা কালোর উপর সাদার শ্রেষ্ঠত্ব নেই। মর্যাদার ভিত্তি হল কেবল তাক্‌ওয়া।" (সহিহ বুখারী, বিদায় হজ্জের ভাষণ থেকে)

এ থেকে দেখা যায় যে তাকওয়াই হলো শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি ।

এখন দেখা যাক তাকওয়া কি :

তাকওয়ার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে একবার হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাদি আল্লাহু তা’আলা আন্হু বিশিষ্ট সাহাবী হযরত উবায় ইবেন কা’ব রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুকে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি পাল্টা জিজ্ঞাসা করলেন: আপনি কি কখনও কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করেছেন? হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাদি. বললেন: হ্যাঁ। হযরত উবায় ইবেন কা’ব আবার জিজ্ঞাসা করলেন: আপনি সেই কণ্টকাকীর্ণ পথ কিভাবে অতিক্রম করেছিলেন? হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাদি. বললেন: আমি সেই কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করেছিলাম অতি সাবধানতা অবলম্বন করে দ্রুতগতিতে। তখন হযরত উবায় ইবেন কা’ব রাদি আল্লাহু তা’আলা আন্হু বললেন: এটাই তাকওয়া।

তাকওয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ হল: রক্ষা করা, সাবধানতা অবলম্বন করা। শরিয়তের পরিভাষায় তাকওয়া বলা হয়: আল্লাহর শাস্তি ও অসন্তষ্টির কার্যকারণগুলো থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করা।

সুতরাং, যত বাঙালি ছিল তাদের মধ্যে যদি কারো তাকওয়া সবচেযে বেশি থেকে থাকে তাহলেই উনি শ্রেষ্ঠ বাঙালি, নাহলে নয় । এ জাতির যত সন্তান আছে তাদের মধ্যে যদি কোনো এক দল লোকের তাকওয়া সবচেয়ে বেশি হয় তবেই তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, নাহলে নয় ।

কিসের ভিত্তিতে তাদের কে শ্রেষ্ঠ বলা হয় ? নিশ্চয়ই তাকওয়ার ভিত্তিতে নয় । তাদের কে শ্রেষ্ঠ বলা হয় বাঙালি জাতির প্রতি তাদের অবদানের ভিত্তিতে । তাহলে কি আমরা শ্রেষ্ঠত্ব পরিমাপের জন্য আল্লাহ রসুল প্রদত্ত স্ট্যান্ডার্ড এর বাইরে কোনো স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করছি ?

আমরা যদি "দেশ ও জাতির প্রতি অবদান" কে আমাদের শ্রেষ্ঠত্বের স্ট্যান্ডার্ড ধরে সেই স্ট্যান্ডার্ড অনুযাই আমাদের জীবন পরিচালনা করি তাহলে আমরা এই জীবনে এই দেশে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার অধিকারী হব । আর যদি আল্লাহ ও তার রাসুল এর দেয়া স্ট্যান্ডার্ড "তাকওয়া" কে স্ট্যান্ডার্ড ধরে জীবন পরিচালনা করি তাহলে আমরা ইনশাআল্লাহ হয়ত এই জীবনে এবং অবশ্যই পরবর্তী জীবনে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার অধিকারী হব ।

"পার্থিব জীবন ক্রীড়া ও কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। পরকালের আবাস পরহেযগারদের জন্যে শ্রেষ্টতর। তোমরা কি বুঝ না ?" (কুরআন ৬:৩২)

" প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়।" (কুরআন ৩:১৮৫)

তাই আল্লাহ, তার রাসুল (সাঃ) এবং পরকালে বিশ্বাসী হিসাবে এই দুনিয়াবি শ্রেষ্ঠত্বের পেছনে ছুটবো নাকি আল্লাহর সংজ্ঞায়িত স্থায়ী
শ্রেষ্ঠত্বের পেছনে ছুটবো, সিদ্ধান্ত আপনার ? আর তা নেওয়া দরকার এখনই......। 

 আলোচকঃ মাশুক রহমান, কম্পিউটার প্রকৌশলী

No comments:

Post a Comment