হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন,
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যতক্ষন না হেজাজ থেকে
একটি আগুন প্রজ্বলিত হয়ে বসরার উটগুলোর ঘাড়কে আলোকিত করে দিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত
কিয়ামত হবে না”। (বুখারী খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১০৫৪; মুসলিম খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৯৩)
এই হাদিসে যে আগুনের কথা বলা হয়েছে,
আল্লামা ইবনে কাছীর (রহঃ) ও অন্যান্য অইতিহাসিকগণের অভিমত হল, সেই আগুন
আত্মপ্রকাশের ঘটনা ঘটে গেছে। এই আগুন ৬৫০ হিজরির জুমাদাস সানি মাসের এক শুক্রবার
পবিত্র মদিনার কোন এক উপত্যকা থেকে আত্মপ্রকাশ করেছিল এবং প্রায় এক মাস পর্যন্ত
বহাল ছিল।
বর্ণনাকারীগণ তার ধরণ এই লিখেছেন যে, হঠাৎ
হেজাজের দিক থেকে এই আগুন আত্মপ্রকাশ করেছিল এবং মনে হচ্ছিল, সেটি আগুনের পূর্ণ
একটি নগরী এবং তাতে দুর্গ বুরূজ সবই আছে। তার দৈর্ঘ্য ছিল চার ফরসখ আর প্রস্থ চার
মাইল। আগুনের ধারা যে পাহাড় পর্যন্ত পৌঁছে যেত, তাকে সিসা ও মোমের মত গলিয়ে দিত।
তার শিখার মধ্যে বিজলীর গর্জন ও সমুদ্রের তরঙ্গমালার মত জোশ ছিল। মনে হচ্ছিল, যেন
তার মধ্য থেকে লাল ও নীল বর্ণের সমুদ্র বেরিয়ে আসছে। উক্ত আগুন এই রুপে মদিনা
পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ছিল, তার শিখামালার দিক থেকে যে
বায়ু মদিনার দিকে আসছিল, তা ঠান্ডা ছিল।
আলেমগণ লিখেছেন, এই আগুনের গ্রাস মদিনার
সবগুলো বন-বাদাড়কে আলোকিত করে তুলেছিল। এমনকি হারামে নববী ও মদিনার সবগুলো বাড়ি
ঘরে সূর্যের মতো আলো ছড়িয়ে গিয়েছিল। মানুষ রাতের বেলায় সেই আলোতে কাজ আঞ্জাম দিত
এবং সেই দিনগুলোতে উক্ত অঞ্চলের উপর সূর্য ও চাঁদের আলো ম্লান হয়ে গিয়েছিল। মক্কার
কিছু মানুষ সাক্ষ্য প্রদান করেছেন, ঐ সময় তারা ইয়ামামা ও বসরায় ছিলেন। ওখানেও তারা
সেই আগুন প্রত্যক্ষ করেছেন।
এই আগুনের বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি ছিল
এই যে, এই আগুন পাথরকে পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে দিয়েছিল, কিন্তু গাছগাছালির উপর তার
কোনো প্রভাব পড়েনি। বর্ণিত আছে, বনে অনেক বড় একটি পাথর ছিল, যার অর্ধেক মদিনার
হারামের সীমানার মধ্যে ছিল আর অর্ধেক ছিল হারামের বাইরে। আগুন হারামের বাইরের
অংশটুকু পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে দিল, কিন্তু যে অংশটি হারামের সীমানার মধ্যে ছিল, সেটি
পূর্বের মতোই ঠাণ্ডা ও অক্ষত পড়ে থাকল। পাথরের আধা অংশ সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকল।
বসরার অধিবাসীরা সাক্ষ্য প্রদান করেছে,
সেই রাতে আমরা হেজাজ থেকে আত্মপ্রকাশ করা আগুনের আলোতে বসরার উটগুলোর ঘাড়গুলোকে
আলোকিত দেখেছি।
(তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধঃ মাহদি ও দাজ্জাল, মূলঃ মাওলানা আসেম ওমর, অনুবাদঃ মাওলানা মুহাম্মাদ মুহিউদ্দিন)
No comments:
Post a Comment