আত্মকথনঃ ৩
২০০০
সালের প্রথম দিকের ঘটনা সম্ভবত। ২০ বছর বয়সী শরীরে মুক্তচিন্তা মিশ্রিত
বাধাহীন উত্তাল তরঙ্গপ্রবন রক্তের প্রবাহ। ক্যাম্পাসের দুই তৃতীয়াংশ
শিক্ষার্থীই মেয়ে। আর বিদেশী ছাত্রদের মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত আর পাকিস্তান
থেকে আগত আমরা কয়েকজন মিলে তৈরী করে ফেলেছি নিজেদের উপদল। ক্লাস বাদে
ক্যাম্পাসের ক্যাফেই হোক আর লাইব্রেরীই হোক একসাথে থাকতেই হবে, দুপুরের এবং
রাতের খাবার যতখানি সম্ভব এক সঙ্গে খেতে হবে, যত মনের খবর একসাথে আলোচনা
করতে হবে, না করলে পেটের ভাত হজম হবে না --- রাতে ঘুম হবে না। আজ ক্লাসে
কোন মেয়ে কি করল, কোন ছেলের সাথে নতুন কোন মেয়েকে দেখা যাচ্ছে, সেই ছেলেকে
আর কার সাথে দেখা গেছে আর কত কি! মজার ব্যাপার হল এই জাতীয় আলোচনা অনেক
সময়ই বাংলা হিন্দি আর উর্দুতে চলতো যাতে লোকাল ছাত্র বা ছাত্রীরা না বুঝতে
পারে। তো একবার এক লোকাল ইন্ডিয়ান মেয়েকে দেখে তার প্রশংসা করায় সবাই পেয়ে
বসলো আমাকে। বন্ধু সাজিদ তো বলেই বসলো, “এই মেয়ের বান্ধবীকে আমি চিনি,
পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমার”। তানিম বলল, “শোন, কাজ করতে আসা আমাদের
কয়েক বাংলাদেশী ভাইদের অপকর্মের কারণে এই দেশে মান সন্মানের যে ভরাডুবি
হয়েছে, শুধু শুধু ছ্যাকা খাওয়ার রাস্তা ক্লিয়ার কইরো না”। এরমধ্যে আমাদের
আরেক বন্ধু সাহজিন বলে বসলো, “আরও সমস্যা আছে...মেয়েটা তো হিন্দু। ইসলামে
তো হিন্দু মেয়ে বিয়ে করা যায় না”। আর যায় কই? মাথা মেজাজ তো মহাগরম হয়ে
গেল। আমি বললাম, “এটা ইসলামের কোথায় লিখা আছে?” বন্ধু ওয়াকিও সাহজিনকে
সমর্থন দিলো। ওয়াকি বলল, “কোথায় আছে দেখাতে পারবো না, কিন্তু জানি”। আমি
সরাসরি দৃঢ় চিত্তে বললাম, “আমি এটা মানি না”। এবং এর পক্ষে যাবতীয় বিজ্ঞ
আলেমের মতো যুক্তিতর্ক স্থাপন করলাম।
এমনিভাবে রকমারি খোশগল্প আর
পড়াশুনার মধ্য দিয়ে দেখতে দেখতে কেটে যেতে লাগল ২০০০ থেকে ২০০১। ২০০১ এর
মার্চ মাসের কোন এক বিশেষ ঘটনা (অন্য একদিন লিখব ইনশাল্লাহ) মুসলিম নামধারী
হিসাবে আমার ঈমান (নিজের ধর্মীয় অবস্থান) এবং ধর্মীয় জ্ঞানকে প্রশ্নবিদ্ধ
করে ফেলল নিজের কাছে। আমাদের মধ্যে নামজী বন্ধু ফুয়াদকে ফোন দিলাম, “তোমার
কাছে কি বাংলা অর্থসহ কোরআন শরীফ আছে”? ফুয়াদ উত্তর দিল, “তোমার মাথা ঠিক
আছে তো”?
যাই হোক শুরু করলাম ১ম সূরা থেকে আমার অর্থসহ কুরআন পড়া।
শুরু হলো নামমাত্র জুম্মার মুসলমান থেকে বুঝে শুনে ইসলামে ধর্মান্তর। সূরা
ফাতেহার অর্থ পড়েই নিজের সাথে মিল খুজে পেলাম না। সাহস নিয়ে শুরু করলাম ২য়
সূরা বাকারা। পড়তে পড়তে এসে ঠেকলাম নিচের আয়াতেঃ
“আর তোমরা
মুশরিক (মূর্তিপূজারী) নারীদেরকে বিয়ে করোনা, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ
করে। বরং মুসলমান ক্রীতদাসী মুশরিক (মূর্তিপূজারী) নারী অপেক্ষা উত্তম,
যদিও তাদেরকে (মূর্তিপূজারী নারীদেরকে) তোমাদের কাছে ভালো লাগে। এবং
তোমরা ( মুসলিম নারীরা) কোন মুশরিক (মূর্তিপূজারী) পুরুষের সঙ্গে বিবাহ
বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত সে ঈমান না আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাসও
একজন মুশরিক (মূর্তিপূজারী) পুরুষের তুলনায় অনেক ভাল, যদিও তোমরা তাদের
দেখে মোহিত হও। তারা দোযখের দিকে আহ্বান করে, আর আল্লাহ নিজের হুকুমের
মাধ্যমে আহ্বান করেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে। আর তিনি মানুষকে নিজের নির্দেশ
বাতলে দেন যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে”। (সূরা বাকারাঃ ২২১)
আর
সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেল আমার চিন্তাশক্তি। আর এগোতে পারছিলাম না পরের আয়াতে।
মনে পড়ে গেল গত বছরের সেই আড্ডার কথা। মনে পড়ে গেল আমার দৃঢ় চিত্তের সেই
চ্যালেঞ্জ.........সজ্ঞানে বলা সেই লাইন “আমি এটা মানি না”।
আমি
বুঝলাম ঈমান হারিয়ে ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছি অনেক আগেই কোরআনের আয়াতকে
অস্বীকার করে। এর মধ্যে মৃত্যু হলে এই আমিন বেগকে যদি পৃথিবীর সকল মুমিনরা
এক কাতারেও জানাজা দিয়ে মাটি দিত, কেয়ামতের ময়দানে উঠতে হতো ঈমানহারা হয়ে।
কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল দুচোখ। মনে পড়ে গেল তার আগে পড়ে আসা একই সূরার নিচের
আয়াতগুলো। যেন আমাকে উদ্দেশ্য করেই লেখা। আল্লাহই জানে আমি কি নিচের এই
আয়াতগুলো থেকে মুক্ত? .......
“আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়।
তারা আল্লাহ এবং ঈমানদারগণকে ধোঁকা দেয়। অথচ এতে তারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না অথচ তারা তা অনুভব করতে পারে না।
তাদের অন্তঃকরণ ব্যধিগ্রস্ত আর আল্লাহ তাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বস্তুতঃ তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আযাব, তাদের মিথ্যাচারের দরুন”।
(সূরা বাকারাঃ ৮,৯,১০)
assalamualaikum bhai....onek din thekei facebook e apnar post gula pori, ami apnar friend list eo asi. Ami PCC er ekjon ex-cadet.
ReplyDeleteApnar ei post ta pore oshadharon laglo...bhaia ektu kindly bolben ki je kokhon theke apnar islam er dike realization asha shuru kore...othoba amake kono boi suggest korte paren ki jeta amake ei dik e ante help korbe?.....
asolei bhai amra islam theke onek onek dure chole ashchi....
apanr blog er post guli chomotkar...aro post er jonno opekkhai roilam
Shams