Saturday, April 11, 2015

বিশ্লেষণঃ কালো পতাকাবাহীদের জয়ী হবার বিষয়ে একটি হাদিস এবং ন্যাটো’র আদলে আরব ভুখন্ডগুলোর একটি জোট সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতি

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ থেকে বলেন, একদা আমরা নবী করীম সাঃ এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উনি বলতে ছিলেনঃ

"ঐ দিক থেকে একটি দল আসবে, হাত দিয়ে তিনি পূর্ব দিকে ইশারা করলেন - তারা কালো পতাকাবাহী হবে। তারা পূর্ণ ইসলামী শাসনের দাবী জানাবে। কিন্তু তাদেরকে দেওয়া হবে না। দুই বার বা তিনবার এভাবে দাবী জানাবে। কিন্তু তখনকার শাসকগণ তা গ্রহণ করবে না। অতঃপর তারা (কালো পতাকাবাহীরা) যুদ্ধ করে জয়ী হবে এবং তাদেরকে শাসনভার প্রদান করা হবে। কিন্তু তারা (কালো পতাকাবাহীরা)  তা গ্রহণ করবে না। শেষপর্যন্ত তারা  (কালো পতাকাবাহীরা) ইসলামী শাসন ব্যবস্থার দায়িত্ব আমার পরিবারস্থ একজন লোকের (ইমাম মাহদির) হাতে সোপর্দ করে দিবে। সে জমিনকে ন্যায় এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে ভরে দিবে, ঠিক যেমন ইতিপূর্বে অন্যায় অত্যাচারের মাধ্যমে ভরে দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ঐ সময় জীবিত থাকো, তবে অবশ্যই তাদের দলে এসে শরীক হয়ে যেও – যদিও বরফের উপর কনুইয়ে ভর দিয়ে আসতে হয় "। 

(আবু আমর উদ্দানীঃ ৫৪৭, মুহাক্কিক আবু আব্দুল্লাহ সাফেঈ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন) 

হেজাজ বা মক্কা মদিনার 'পূর্ব দিক' বলতে ইরাক থেকে খোরাসান বা আফগানিস্তানকে বুঝায়।


যেহেতু এই কালো পতাকাবাহী বাহিনী ইমাম মাহদির হাতে শাসন ভার অর্পণ করবে তাতে বুঝা যায় যে, এটি শেষ জামানার অংশ হিসাবে হতে হবে। আসুন, আমরা একটু মিলিয়ে নেই, হাদিসের ধারাবাহিকতায় আমরা কোন জামানায় বসবাস করছি। অন্যথায়, 'পূর্ব দিক' থেকে যে বাহিনীই কালো পতাকা নিয়ে বের হোক না কেন তার গুরুত্ব অনুধাবন করা যাবে না। 


হযরত হুজায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 


নবুওয়াত ব্যবস্থা তোমাদের মাঝে ততদিন থাকবে, যতদিন আল্লাহ তাআলা মঞ্জুর করেন। অতঃপর যখন ইচ্ছা, তখন তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। তারপর (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পর) তোমাদের মাঝে নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হবে এবং তা আল্লাহ তাআলা যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে (খুলাফায়ে রাশিদিন এর যুগ)অতঃপর তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। তারপর হানাহানির রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তা আল্লাহ তাআলার যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে (রাজতন্ত্র)অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় তার বিলুপ্তি ঘটবে। তারপর জবর দখল তথা আধিপত্য বিস্তারের রাজত্ব কায়েম হবে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় দুনিয়াতে কিছুকাল বিরাজমান থাকবে (নানা ভূখণ্ডে বর্তমান একনায়কতন্ত্র ও রকমারি বাদ ও তন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত স্বৈর শাসকগণ) তারপর যখন আল্লাহ ইচ্ছা করবেন, তখন এরও অবসান ঘটবে। অতঃপর নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত রাষ্ট্র-ব্যবস্থা কায়েম হবে। এ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ রইলেন”


(মুসনাদে আহমদঃ ৪/২৭৩)




উপরের হাদিসের প্রেক্ষিতে আমরা যে যুগের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি, তা হচ্ছে অন্যায়, অবিচার ও ফেতনা ফ্যাসাদ ছড়িয়ে পড়ার যুগ। আল্লাহ তা’আলার জমিনে সর্বোচ্চ শাসন ব্যাবস্থা (sovereignty) একমাত্র আল্লাহর হওয়া উচিৎ। যদি আল্লাহর জমিনে আল্লাহর কানুন ব্যতীত মানুষের তৈরি কোন কানুন বাস্তবায়নের অপচেস্টা চালানো হয়, তবে অবশ্যই জমিনে অন্যায় অবিচার ও ফেতনা ফ্যাসাদে ভরে যাবে। 


১৯২৪ সালে উসমানি খেলাফতের ভেঙ্গে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ ৫৭ টি ভূখণ্ডে বিভক্ত হয়ে বর্তমানে একনায়কতন্ত্র ও রকমারি বাদ ও তন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত স্বৈর শাসকদের দ্বারা শাসিত। ‘অতঃপর নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হবে’ - মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ উক্তিই প্রমাণ করে সারা বিশ্বে ইসলামী শাসন পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হবে। রাজত্বের লাগাম মুসলিমদের হস্তগত হবে। কখনো এর ব্যতিক্রম হবে না। কারণ, বিভিন্ন বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তা যথা সময়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। ইতিহাসে তার বহু প্রমাণ রয়েছে। এবং আমরা সেই রকমই একটি ‘ট্রাঞ্জিকশন ফেজ’ এ আছি। 


এবার আমরা খোরাসানের দিকে তাকাই। আশির দশকে খোরাসানের কেন্দ্রস্থল আফগানিস্তান সমাজতন্ত্র নামক পাগলা ঘোড়ার সওয়ার তৎকালীন পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বারা আক্রান্ত হয়। দীর্ঘ দশ বছরের (১৯৭৯ – ১৯৮৯) যুদ্ধের পর পরাশক্তি  সোভিয়েত ইউনিয়ন শুধু পরাজিতই হয়নি, কয়েক বছরের মাথায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে আমু নদীর ওপারে অবস্থিত মধ্য এশিয়ার দেশগুলো যাকে ইসলামের পরিভাষায় ‘মা-আরউন্নহর’ বা ‘নদীর ওপার’ বলা হয়, সে সব দেশঃ উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান,কাজিকিস্তান এর অন্তর্ভুক্ত যা কিনা বৃহত্তর খোরাসানের একটি অংশ, সমাজন্ত্রমুক্ত হয়ে স্বাধীনভূখণ্ডরূপে আত্মপ্রকাশ করে। যদিও এই যুদ্ধকে মুসলিম জাহান ধর্মযুদ্ধ হিসাবে গ্রহণ করে এবং ‘সে যেন উক্ত বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে যায় বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে হলেও’ এর উপর আমল করার মতোই সকল মুসলিম ভূখণ্ড হতে মুজাহিদরা আগমন করে। যদিও এদের কারও হাতেই কালো পতাকা ছিল না। 


১৯৮৯ সালে রাশিয়ানরা ফিরে গেলে তাদের দালালদেরকে কাবুল থেকে হটিয়ে ১৯৯২ সালে ইসলামিক স্টেট অফ আফগানিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে একটি রঙ্গিন পতাকা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনেকের মধ্যে পশ্চিমারা পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়। আর একে কেন্দ্র করে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয় এবং দেশের আইন শৃঙ্খলার ব্যপক বিপর্যয় দেখা যায়। একদিকে যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশের পুনর্গঠনের চ্যলেঞ্জ অন্যদিকে যুদ্ধ ফেরত নেতাদের ‘রকমারি বাদ আর তন্ত্র’ এর উপর ভিত্তি করে ক্ষমতার লড়াই। 


অবশেষে গ্রাম্য এক কওমি মদ্রাসার শিক্ষক গুটি কয়েক দরিদ্র ছাত্রদের নিয়ে শুরু হয় শুদ্ধি অভিযান। একের পর এক প্রদেশ তাদের নিয়ন্ত্রণে আসতে থাকে। অবশেষে ১৯৯৬ সালে কাবুলের নিয়ন্ত্রন নেওয়ার পর তারা দেশের আনুষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রনের ঘোষণা দেয়। জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত রঙ্গিন পতাকা হটিয়ে উড়িয়ে দেয় ইসলামিক ভূখণ্ডের সত্যিকার পতাকা ‘লিওয়া’ – সাদার ভিতরে কালো  রঙ্গের কালিমা খচিত।  আর সেনাবাহিনীর পতাকা হল ‘আর রায়া’ – কালোর ভিতরে সাদা রঙ্গের কালিমা খচিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও যুদ্ধের সময় কালো পতাকা ব্যবহার করতেন, যা ‘উকাবা’ নামে পরিচিত।


শুরু হল খোরাসানের কেন্দ্রস্থলে কালো পতাকাবাহী দলের যাত্রা। পশ্চিমা বিশ্ব তথা আধুনিক রোমান মহাজোট হারালো তাদের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রন। শুরু হল দাজ্জালি মিডিয়ার প্রচার যুদ্ধ। মিডিয়াতে দেখাতে লাগলো এই দলকে সন্ত্রাসী হিসাবে।  


পশ্চিমা মিডিয়ার বদৌলতে জানা গেল তাদের শাসন ব্যবস্থায় তাদের কঠোর অবস্থান। কিন্তু বিচার হয় কাফের, মুনাফিক আর ফাসেকদের হৃদয় কাঁপানো আইন – শরিয়াহ আইনে। শুরু হল চতুর্মূখী অপপ্রচার।  
আমরা জানি, ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে প্রথমবারের মতো কালো পতাকাবাহীরা যখন পূর্ণ ইসলামিক শাসনের দাবী জানিয়েছিল তখন পৃথিবীর কেউ তা মেনে নেয়নি। 

সময় গড়িয়ে এল ২০০১।


২০০১ এ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আধুনিক রোমান মহাজোটের স্থল ও আকাশ যোগে আক্রমণ। জোট ও তাদের মিত্রদের (জাতীয়তাবাদী) রঙ্গিন পতাকার সংখ্যা ২০১১ সালে এক পর্যায়ে ৪৯ এ এসে ঠেকলঃ আলবেনিয়া, আরমেনিয়া, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, আজারবাইজান, বাহরাইন, বেলজিয়াম, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, বুলগেরিয়া, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, এল সালভাদর, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জর্জিয়া, জার্মানি, গ্রীস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জর্ডান, রিপাবলিক অব কোরিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবারগ, মালয়েশিয়া, মঙ্গোলিয়া, মন্তেনিগ্রো, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়া রিপাবলিক অফ মেসিডোনিয়া, টোঙ্গা, তুর্কি, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র  

কালো পতাকা বাহীদেরকে হটিয়ে বসানো হল পুতুল শাসক। কালো পতাকাবাহীরা শাসনভার ছেড়ে দিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লো। 



২০০১ এ খোরাসান আক্রমণের পর থেকে আধুনিক রোমান মহাজোটের নেতৃত্বদানকারী ভূখণ্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসক নেতা জর্জ বুশ হেজাজের পূর্ব দিকের আরেক ভূখণ্ড ইরাক আক্রমণের জন্য নানারূপ অজুহাত খুঁজতে থাকে। দুই বছর যাবত পশ্চিমা দাজ্জালি মিডিয়া ও বিশ্বের বিভিন্ন ভূখণ্ডের দালাল মিডিয়ার মাধ্যমে সারা ইরাককে বিশ্বে নিউক্লিয়ার বোমা তৈরিকারী এবং সন্ত্রাসের মদদদাতা হিসাবে প্রচার করে মিডিয়া যুদ্ধ করতে থাকে।

অবশেষে একক সিদ্ধান্তে তথাকথিত গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠান জাতি সংঘের তোয়াক্কা না করে ২০০৩ সালের ২০ শে মার্চ রাত ২:৩০ এ বাগদাদে বোমারু বিমান হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ড নামক বর্তমান কালের দুই পশ্চিমা কর্ণধার ইরাক আক্রমণ করে। এরপরের দিনই যুক্তরাষ্ট্র (১,৪৮,০০০ সৈন্য), ইংল্যান্ড (৪৫,০০০ সৈন্য), অস্ট্রেলিয়া (২,০০০ সৈন্য) ও পোল্যান্ড (১৯৪ জন সৈন্য) কুয়েত সীমানার নিকটবর্তী পদেশ বসরাতে পদাতিক অভিযান শুরু করে।  

পরবর্তীতে তাদের এই জোটের রঙ্গিন পতাকাবাহী ভূখণ্ডের সংখ্যা চল্লিশে গিয়ে পৌঁছেঃ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রুমানিয়া, এলসালভাদর, এস্তোনিয়া, বুলগেরিয়া, মালডোভা, আলবেনিয়া, ইউক্রেইন,  ডেনমার্ক, চেক রিপাবলিক, দক্ষিন কোরিয়া, জাপান,  টোঙ্গা,  আজারবাইজান, বসনিয়া-হারজেগোভিনা, মেসিডোনিয়া, লাটভিয়া, পোল্যান্ড, কাজাখস্তান,আরমেনিয়া,মংগোলিয়া, জর্জিয়া,  স্লোভাকিয়া,  লিথুনিয়া,  ইটালি,  নরওয়ে, হাঙ্গেরী, নেদারল্যান্ড, পর্তুগাল, নিউজিল্যান্ড, থাইল্যান্ড,  ফিলিপাইন্স,  হন্ডোরাস,  ডমিনিকান রিপাবলিক,  স্পেন,  নিকারাগুয়া,  আইসল্যান্ডঅষ্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুর। 

আল্লাহ যখন জমিনে কোন কিছু ঘটাতে চান, তখন উনি তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেনইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক যে শাসন ব্যবস্থা ইরাকের ভূখণ্ডে সম্ভব হয়নি জাতীয়তাবাদী সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী সাদ্দাম হোসেনের আমলে, তা পুনঃনির্মিত হল পশ্চিমাদের আগ্রাসনের পরে। ১৫ ই অক্টোবর ২০০৬ তে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাহ এর ইসালামপন্থীরা Islamic State of Iraq (ISI) গঠনের ঘোষণা দিল। তারা নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় আল আনবার প্রদেশ, নিনাওয়া প্রদেশ, কিরকুক প্রদেশ, সালাদিন প্রদেশের অধিকাংশ এবং বাবিল, দিয়ালা, বাগদাদ প্রদেশের একাংশে। আর বাকুবাকে রাজধানী ঘোষণা করে এবং মার্কিন জোটের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ করতে থাকে। এমনকি ২০১১ সালে জোট বাহিনীর প্রস্থানের পরও তারা আজ পর্যন্ত ইরাকের পুতুল সরকারের মোকাবিলা করছে। এই ভূখণ্ডটি পতাকা কালোর ভিতরে সাদা কালিমা খচিত, এরা জাতীয়তাবাদী কোন রঙ্গিন পতাকা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে।  

২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে সিরিয়াতে বনু কাল্ব গোত্রের অত্যাচারী শাসক বাশার আল আসাদ আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা’আর সাথে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এরপরে ২০১২ সালে এই Islamic State of Iraq (ISI) সেই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ পূর্বক সীমানা বাড়িয়ে সিরিয়ার আল রাক্কা, ইদলিব এবং আলেপ্পো প্রদেশে নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে এবং নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডের নতুন নাম দেয় Islamic State of Iraq and Sham (ISIS). তাদের নিজস্ব কোর্ট ভবন, পুলিশ প্রশাসন, সামরিক শাখা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুনর্বাসন বিভাগসহ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাঠামো আছে।

অতঃপর ২০১৪ সালে মসুল বিজয়ের মধ্য দিয়ে এই কালো পতাকাবাহীরা বিশ্বের বুকে খিলাফতের ঘোষণা দেয় যার আয়তন ২,৪০,০০০ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি।

১৯৯৬ সালে খোরাসান বা আফগানিস্তানের কালো পতাকাবাহীদের ১৮ বছর পর দুনিয়ার বুকে দ্বিতীয়বার পরিপূর্ণ ইসলামিক শাসনের দাবী।

শুরু হল দাজ্জালি মিডিয়ার আবার প্রচার যুদ্ধ। মিডিয়াতে কালো পতাকাবাহী এই দলকে দেখানো হচ্ছে সন্ত্রাসী হিসাবে।বরাবরের মতই দুনিয়ার কোন শাসক তা মেনে নিতে রাজি নয়।

২০১৪ সালের আগস্ট মাস থেকে চলছে ৬২ টি রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত মহাজোটের আক্রমণ। এদের একদল আকাশপথে আক্রমণ করছে, একদল প্রশিক্ষণ দিচ্ছে আর আরেক দল সরাসরি স্থল যুদ্ধে লিপ্ত। 
 
 এমন পরিস্থিতিতে ‘মধ্যপ্রাচ্যে সংকট চলছে’ এটা আর কোনো খবর নয়। খবর হচ্ছে, একই সুঁতোয় গাঁথা এই সংকট মোকাবিলায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে।

আরব লীগ ইতোমধ্যে গত ২৯ শে মার্চ ২০১৫ তে  সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘ন্যাটো’র আদলে একটি সামরিক বাহিনী গড়ে তুলবে। প্রায় ৪০ হাজার সৈন্য সমৃদ্ধ এই অত্যাধুনিক বাহিনী যে কোনো সময় এই অঞ্চলে উদ্ভুত যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে। বিস্তারিতঃ http://www.theguardian.com/world/2015/mar/29/arab-leaders-agree-to-form-joint-military-force-to-combat-jihadis-in-region

আগামী কয়েক সপ্তাহ পরে অনুষ্ঠিতব্য আরব লীগের সম্মেলনেই আনুষ্ঠানিকভাবে এই বাহিনীর আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। বিভিন্ন আরব দেশের সৈন্যদের সমন্বয়েই গঠিত হবে বাহিনীটি।

পেশাগত সক্ষমতায় ন্যাটোর মতো অতটা শক্তিশালী না হলেও বিশ্বের সবচেয়ে সংকটাবর্তিত এলাকায় এমন একটি বাহিনীর উদ্ভব খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

প্রথম দিকে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেবে মিশর, জর্দান, সৌদি আরব, মরক্কো এবং সুদান। এর বাইরে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোরও প্রতিনিধিত্ব থাকবে। একজন সৌদি জেনারেলের কমান্ডে পরিচালিত বাহিনীটির সদরদপ্তর হবে মিশরে। একই সাথে এটির নিজস্ব অবকাঠামো এবং স্থায়ী কমান্ডিং সিস্টেম চালু করা হবে।

বর্তমানে যেভাবে আরব জোট গঠন করে ইয়েমেনে হুথিদের ওপর হামলা করা হচ্ছে ঠিক একইভাবে উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় যৌথ অভিযান চালানো হবে। ৪০ হাজার সদস্যের বাহিনীটিতে ৫ হাজার নৌ, ৫০০ থেকে ১ হাজার বিমান এবং বাকি প্রায় ৩৪ হাজার স্থলসেনা থাকবে। বিমান, সমুদ্র এবং স্থল বাহিনীর পাশাপাশি থাকবে স্পেশাল ফোর্সও।

বাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের খরচ বহন করবে ‘গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল’ (জিসিসি) আর সৈন্যদের বেতন-ভাতা দেবে বাহিনীতে যোগ দেয়া সংশ্লিষ্ট দেশগুলো।

বিগত কয়েক দশক ধরে সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় দেশগুলো যে পরিমাণ অস্ত্র এবং প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম কিনেছে, বিশেষ করে সমুদ্র ও স্থলপথের জন্য, তার সাথে মিশরীয় সেনাবাহিনী যোগ দিলে ‘আরব ন্যাটো’ যে কোনো ধরনের দুর্দমনীয় সামরিক অভিযান চালাতে সক্ষম হবে।

আমরা যারা এই উম্মতের তথা মুসলিম বিশ্বের চলমান ঘটনাবলী খুব সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছি এবং "২০১৪ থেকে ২০১৮ থেকে ২০২১ থেকে ২০২৫" টাইম লাইন পার করছি, নিঃসন্দেহে কালো পতাকাবাহীদের বিরুদ্ধে ন্যাটো’র আদলে আরব ভুখন্ডগুলোর এই সামরিক জোট বাহিনীটি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।

3 comments:

  1. দরকারী তথ্য, ধন্যবাদ্!

    ReplyDelete
  2. ভাইয়া,,,এই খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলের সাথে কিভাবে যোগ দিবো।,,,,কোন তথ্য দিতে পারবেন আমায়??

    ReplyDelete