কখনও কখনও আমরা সময়ের বা কালের অভিযোগ করে থাকি।
(নিজের দায়িত্ব এড়ানোকে বৈধতা দেয়ার জন্য) আমরা বলে থাকি যে, আমরা সবচেয়ে খারাপ সময়ে বসবাস করছি, মুসলিম উম্মাহ্ আজ মারাত্মক দূর্বল, অসহায়, পরাজিত, বিচ্ছিন্ন, বিভক্ত। আহ! আমরা যদি সাহাবায়ে কিরামের যুগে জন্ম নিতাম!
কিংবা ইসলামের স্বর্ণালী যুগে থাকতাম! তাহলে কতইনা ভালো হতো। কত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাই না আমরা পালন
করতে পারতাম।
এমন অভিযোগ করা আমাদের জন্য কেনো মোটেই শোভনীয় নয়, কিছু যৌক্তিক কারণ নিচে তুলে ধরা হলো,
প্রথম কারণ: জনৈক তাবেঈ একজন সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আপনাদের মাঝে ছিলেন, তাঁর সাথে আপনারা কী রূপ আচরণ করতেন? কিভাবে তার সমাদর করতেন?” উত্তরে সাহাবী বললেন যে কিভাবে তারা রাসূলের সাথে উত্তম আচরণ করতেন এবং তিনি বললেন যে তারা আল্লাহর রাসূলের সমাদরের ব্যাপারে তাদের সামর্থের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করতেন। সাহাবীর কথা শুনে তাবেঈ বললেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমাদের জীবদ্দশায় পেলে তাঁকে কাঁধে তুলে রাখতাম।”
এখানে আমরা তাবেঈর কথা একটু বিশ্লেষণ করলেই বুঝতে পারবো। তিনি যেনো বলতে চাচ্ছেন যে, সাহাবায়ে কিরামগণ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারেন নি এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সময়ে যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তারা সাহাবীদের চেয়েও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আরো বেশি সমাদর করতেন ও মর্যাদা দিতে পারতেন।
তার কথার উত্তরে সাহাবী বললেন, সাহাবায়ে কিরামগণ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কেমন মর্যাদা দিতেন, কেমন ভালোবাসতেন, তাঁরা দীনের জন্য কেমন আত্মত্যাগ স্বীকার করেছেন তা এমন কোনো ব্যক্তির পক্ষে যথাযথভাবে বোঝা সম্ভব নয় যে সেই সময় উপস্থিত ছিলো না। তিনি আরো বললেন “কেউ জানে না, সে সময় জীবিত থাকলে সে কী করত; আমাদেরকে নিজের জন্মদাতা পিতা ও আপন ভাইদের বিপক্ষে যুদ্ধ করতে হয়েছে, যা কখনই সহজ কোন ব্যাপার ছিল না। আর এখন তোমাদের পিতা, মাতা, ভাই, পরিবার, পরিজন সবাই মুসলিম। আর তুমি কেবল ধারণা করছো যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের সময় বেঁচে থাকলে তোমরা তাঁকে আরো বেশি মর্যাদা দিতে। শোনো এমন কোনো কিছু (সম্মান বা দায়িত্ব) কামনা করো না, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য বরাদ্ধ করেন নি।
দ্বিতীয় কারণ : আমাদের বর্তমান সময় নিয়ে অভিযোগ করা উচিত নয়; বরং আমাদেরকে যে আল্লাহ তা‘আলা এই সময়ে পাঠিয়েছেন সেজন্য আমাদের উচিত আল্লাহর প্রতি আরো বেশি কৃতজ্ঞ হওয়া। কেনো আমাদের আরো বেশি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত? আসুন ভেবে দেখি!
আমরা জানি যে, গোটা মুসলিম উম্মাহর মাঝে সাহাবীগণের মর্যাদা হলো সবার উপরে। নবীদের পরে মানুষের পক্ষে সম্ভব সর্বোচ্চ আসনে তাঁরা অধিষ্ঠিত। তাদের পর রয়েছেন তাদের পরবর্তী প্রজন্ম তাবেঈগণ এবং রয়েছেন তাদের পরবর্তী প্রজন্ম তাবে-তাবেঈগণ।
সাহাবায়ে কিরামগণের মর্যাদা এতো বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো তাঁরাই সুমহান ইসলামের ভিত্তিমূল রচনা করেছেন। ইসলাম নামক প্রাসাদটিকে শূন্য থেকে অস্তিত্বে এনেছেন। তাঁদের জান ও মালের কুরবানীর উপরই নির্মিত হয়েছে ইসলামের প্রাসাদ। তাঁরা যখন কাজ করেছেন তখন ইসলামের কিছুই প্রতিষ্ঠিত ছিলো না। তাঁরা এই দ্বীনের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। তাঁদের পর যারাই এসেছেন তাদের সবার সামনে দ্বীনের প্রাসাদ নির্মিতই ছিলো, তারা হয়তো এই ভিত্তির সাথে এখানে ওখানে এক দু'টো উপাদান যোগ করেছেন অথবা কালের আবর্তনে দ্বীনের আসল প্রাসাদের গায়ে বিদআত নামক আগাছা, পরগাছা গজালে বা শেওলা ধরলে তা হয়তো কেটে-কুটে, ঝেড়ে-মুছে পরিস্কার করেছেন। কিন্তু দ্বীনের মূল প্রাসাদ তো সাহাবায়ে কিরামদের দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। অতএব সংস্কারক বা সৌন্দর্যবর্ধনকারী তো নিশ্চয়ই মূল প্রাসাদ নির্মাণকারীর সমান মর্যাদা পেতে পারে না।
মূল কথা হলো, সাহাবায়ে কিরাম রা. এর সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রাপ্তির কারণ হলো তাঁদের কাজটি ছিলো সবচেয়ে বেশি কঠিন কাজ এবং তাঁরা সেটি আঞ্জাম দেয়ার জন্য তাঁদের পক্ষে সম্ভব সর্বোচ্চ কুরবানী করেছেন।
পরিস্থিতির ব্যাপারে অভিযোগ না করে আমরা যদি সত্যিই কিছু করতে চাই তাহলে আমাদের উচিত সময়ের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করা। সময়ের দাবী উপলব্ধি করে আমাদের দায়িত্বটি সঠিকভাবে পালন করা।
কারণ উম্মাহর পরিস্থিতি অনুযায়ী একেক সময়ে একেক ধরণের কাজ সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়ায়। আর একারণেই দেখা যায় যে, তাবেঈগণ হয়তো গুরুত্বারোপ করেছেন এক বিষয়ের উপর তো তাবে তাবেঈনগণ গুরুত্বারোপ করেছেন অন্য এক বিষয়ের উপর। বিষয়টি আরো ভালো করে বোঝার জন্য আমরা কিছু উপমার দিকে লক্ষ্য করতে পারি।
ইমাম বুখারী রহ. : ইমাম বুখারী রহ. যদি একশ বছর পর এসে হাদীস সংঙ্কলনের সেই একই কাজ করতেন, তাহলে নিশ্চয়ই উম্মাহর মাঝে তাঁর সেই অবস্থান ও মর্যাদা তৈরী হতো না যে মর্যাদা উম্মতের মাঝে এখন তাঁর রয়েছে।
ইমাম শাফেয়ী বা ইমাম আবূ হানীফা রহ. এর আবির্ভাব যদি আরো এক শতাব্দী পর হতো এবং তাঁরা যদি ফিকহী বিষয়ে গবেষণার সেই একই কাজ করতেন তাহলেও আমাদের মাঝে বর্তমানে তাঁদের যে স্বতন্ত্র মর্যাদা রয়েছে তা কিন্তু থাকতো না। কারণ তাঁদের প্রত্যেকের সমকালীন প্রয়োজন ছিলো ভিন্ন ভিন্ন। আর এভাবে সময়ের ব্যবধানের কারণে যুগে যুগে প্রয়োজনের ভিন্নতা তৈরী হওয়াটাই স্বাভাবিক। আরেকটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন যে, ফিকাহ শাস্ত্রের চারজন ইমামেরই আবির্ভাব হয়েছে একই শতাব্দীতে এবং হাদীস শাস্ত্রের ছয়জন ইমাম তথা ছিহাহ সিত্তার ছয়জন স ংকলকের আবির্ভাবও একই শতাব্দির মধ্যে। এ থেকে বোঝা যায় যে, একটা সময় উম্মতের প্রয়োজন ছিলো ফিকহী মাসআলা-মাসায়েলের উপর গবেষণা তো আরেকটি যুগের প্রয়োজন ছিলো আল্লাহর রাসূলের হাদীসসমূহকে যাচাই বাছাই করে সংকলন ও সংরক্ষণের।
এ বিষয়ের উপর আমার এতো কথা বলার কারণ হলো, আমরা অনেক সময় আল্লাহর দীন ইসলামের বিজয়ের জন্য কাজ করতে চাই কিন্তু ইসলামের বিজয়ের জন্য আল্লাহ তা‘আলা কোন কাজটা করতে বলেছেন, কিভাবে করতে বলেছেন তা সঠিকভাবে জানা না থাকার কারণে আমরা আমাদের অর্থ, সময়, মেধা, শ্রম এমন কাজে ব্যয় করি, যা বাস্তব অর্থে দ্বীনের কোনো কাজেই আসে না। তাই আমরা যদি সত্যিই একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইখলাসের সাথে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করতে চাই, তাহলে আমাদেরকে আগে জানতে হবে, বর্তমান সময়ের জন্য কোন কাজটি সবচেয়ে বেশি জরুরী এবং আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে কোন কাজ করতে বলেছেন এবং বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আল্লাহর নির্দেশিত সেই কাজ কিভাবে সর্বোত্তম পন্থায় আঞ্জাম দেয়া যাবে।
আমরা দেখতে পাই যে, আমাদের কতিপয় দ্বীনী ভাই শুধু দা‘ওয়াতী কাজের উপর গুরুত্বারোপ করেন। আবার অন্য কিছু ভাইয়েরা রয়েছেন, যারা শুধু ইলম অর্জনের পথে লেগে থাকতে বলেন। আমরা স্বীকার করি যে, দাওয়ার কাজ করা ও ইলম অর্জন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং শুধু এ দু'টো কাজই নয়, বরং ইসলাম আমাদের যতো কাজের আদেশ দিয়েছে স্ব স্ব স্থানে তার প্রত্যেকটিরই গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু আমরা যদি আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করি যে বর্তমান সময়ে আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ কোনটি? তাহলে দেখতে পাবো যে আমাদের বর্তমান সময়টির সবচেয়ে বেশী মিল রয়েছে সরাসরি সাহাবায়ে কিরামদের সাথে। কারণ বিগত চৌদ্দশ বছরে আমরা জাহেলিয়াতের সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছে গেছি। বর্তমান মুসলিম উম্মাহর অধঃপতন এতো প্রান্তসীমায় এসে পৌঁছেছে যা বিগত চৌদ্দশত বছরের ইতিহাসে আর হয় নি।
আমরা যদিও আমাদের বর্তমান পরিস্থিতির ব্যাপারে
শুধু অভিযোগ করি আর আমাদের অবস্থা যদিও আক্ষরিক অর্থে হুবহু সাহাবায়ে কিরামের
সময়ের মতো নয়, তথাপিও সার্বিক বিচারে আমরা
দেখতে পাই যে, এই পরিস্থিতির সবচেয়ে বেশি মিল রয়েছে সাহাবায়ে
কিরামদের সময়ের সাথে। এই বক্তব্যের সমর্থনে যে বিষয়গুলো তুলে ধরা যেতে
পারে তা হলো:
ক. (মাক্কী জীবনে) সাহাবায়ে কিরাগণ যখন ইসলামের পথে এসেছেন তখন সমাজে মুসলমানদের কোনো নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত ছিলো না। ইসলামিক হুকুমতও ছিল না। আর বর্তমানের অবস্থাও অনুরূপ। অথচ মুসলমানদের এমন নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব ও ইসলামিক রাষ্ট্রবিহীন এমন দূরাবস্থা (১৯২৪ সনের পূর্বে) ১৪শত বছরের ইতিহাসে আর কখনো হয়নি।
খ. সাহাবায়ে কিরামদেরকে যেমন তাঁদের সময়ে তাঁদেরকে বেষ্টন করে রাখা গোটা আরব উপদ্বীপ, তৎকালীন দুই শক্তিশালী পরাশক্তি রোমান ও পারস্য সম্রাজ্যসহ বহুবিধ শক্তির মোকাবেলা করতে হয়েছে, বর্তমান সময়েও এই একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঘরের শত্রু, বাইরের শত্রু সবাই মিলে আজ ইসলামের বিজয়কে রোধ করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কোমর বেঁধে লেগেছে। এমন নাজুক পরিস্থিতি (১৯২৪ সনের পূর্ব পর্যন্ত) আমাদের অতীত ইতিহাসে আর কখনো আসেনি। ভালো হোক মন্দ হোক মুসলমানদের কোনো না কোনো নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত ছিলো। সত্যকে সাহায্য করার মতো একদল লোক সব সময়ই সমাজে পাওয়া যেতো।
ক. (মাক্কী জীবনে) সাহাবায়ে কিরাগণ যখন ইসলামের পথে এসেছেন তখন সমাজে মুসলমানদের কোনো নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত ছিলো না। ইসলামিক হুকুমতও ছিল না। আর বর্তমানের অবস্থাও অনুরূপ। অথচ মুসলমানদের এমন নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব ও ইসলামিক রাষ্ট্রবিহীন এমন দূরাবস্থা (১৯২৪ সনের পূর্বে) ১৪শত বছরের ইতিহাসে আর কখনো হয়নি।
খ. সাহাবায়ে কিরামদেরকে যেমন তাঁদের সময়ে তাঁদেরকে বেষ্টন করে রাখা গোটা আরব উপদ্বীপ, তৎকালীন দুই শক্তিশালী পরাশক্তি রোমান ও পারস্য সম্রাজ্যসহ বহুবিধ শক্তির মোকাবেলা করতে হয়েছে, বর্তমান সময়েও এই একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঘরের শত্রু, বাইরের শত্রু সবাই মিলে আজ ইসলামের বিজয়কে রোধ করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কোমর বেঁধে লেগেছে। এমন নাজুক পরিস্থিতি (১৯২৪ সনের পূর্ব পর্যন্ত) আমাদের অতীত ইতিহাসে আর কখনো আসেনি। ভালো হোক মন্দ হোক মুসলমানদের কোনো না কোনো নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত ছিলো। সত্যকে সাহায্য করার মতো একদল লোক সব সময়ই সমাজে পাওয়া যেতো।
অন্ততঃ পক্ষে খারাপ পরিস্থিতি থেকে নিজের দ্বীন-ঈমানকে হিফাজত করার জন্য হিজরত করে যাওয়ার মতো কোনো না কোনো স্থান পাওয়া যেতো। বর্তমান সময়ে গোটা বিশ্ব ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে আর এই পরিস্থিতির মিল একমাত্র সাহাবায়ে কিরামদের পরিস্থিতির সাথেই পাওয়া যায়। আর এজন্য এটা খুবই স্বাভাবিক যে, এই কঠিন পরিস্থিতিতে যাঁরা কাজ করবে তাঁদের প্রতিদানও বহুগুণ বেশি হবে। তাঁদেরকে নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা অনেক বেশি পরিমাণ আজর বা বিনিময় দান করবেন এবং তাঁদের মর্যাদা অনেক উঁচু স্তরে তুলে দিবেন। আমরা একথা বলছি না যে এদের বিনিময় সাহাবায়ে কিরামদের সমান হবে; তবে এটা বলছি যে এদের বিনিময় অনেক উঁচু দরজার হবে।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আমাদের আকীদা হলো, মর্যাদার দিক থেকে এই উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে প্রথম হলেন সাহাবায়ে কিরামগণ, তারপর তাবেঈন, তারপর তাবে তাবেঈন। কিন্তু আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সেই হাদীসটিকেও মনে রাখতে চাই, যে হাদীসে তিনি বলেছেন,
فَإِنّ مِنْ وَرَائِكُمْ أَيّاماً الصّبْرُ فِيهِنّ مِثْلُ الْقَبْضِ عَلَى الْجَمْرِ، لِلعَامِلِ فِيهِنّ مِثْلُ أَجْرِ خَمْسِينَ رَجُلاً يَعْمَلُونَ مِثْلَ عَمَلِكُمْ". قال عَبْدُ الله بنُ المُبَارَكِ: وَزَادَني غيرُ عُتْبَةَ قِيلَ: يَا رَسُولَ الله أجْرُ خَمْسِينَ رَجُلاً مِنّا أوْ مِنْهُمْ؟ قال: "لاَ، بَلْ أَجْرُ خَمْسِينَ رَجُلاً مِنْكُمْ". (قال أبو عيسى: هذا حديثٌ حسنٌ غريبٌ.)
অর্থ: “তোমাদের পর এমন একটি যুগ আসবে যখন ধৈর্য ধরে
দ্বীনের উপর কেবল টিকে থাকাটাই হাতে আগুনের অঙ্গার নিয়ে থাকার মতো কঠিন
হবে। সে সময়ে যারা (আল্লার দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য) কাজ করবে তাঁদেরকে
পঞ্চাশ জনের সমপরিমাণ বিনিময় দান করা হবে। জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া
রাসূলাল্লাহ তাঁদের সমসাময়িক পঞ্চাশজনের সমপরিমাণ বিনিময় নাকি আমাদের
পঞ্চাশজনের সমপরিমাণ বিনিময়?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমাদের পঞ্চাশজনের সমপরিমাণ।” (তিরমিযী, হাদীস নং ৩১৫৫)
অতএব তাঁদের সালাত হবে পঞ্চাশজন সাহাবীর সালাতের সমান। তাঁদের সিয়াম হবে পঞ্চাশজন সাহাবীর সিয়ামের সমপরিমাণ। কেনো এতো বেশি বিনিময় দেয়া হবে? কারণ সে সময়টি হবে ভীষণ সঙ্কটময়। এ সময়টি হবে অত্যন্ত জটিল ও কঠিন। এই কঠিন পরিস্থিতিতে সঠিক ঈমান ও সঠিক আমলের উপর থাকার কারণেই তাদের বিনিময় এতো বেশি দেয়া হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমাদের পঞ্চাশজনের সমপরিমাণ।” (তিরমিযী, হাদীস নং ৩১৫৫)
অতএব তাঁদের সালাত হবে পঞ্চাশজন সাহাবীর সালাতের সমান। তাঁদের সিয়াম হবে পঞ্চাশজন সাহাবীর সিয়ামের সমপরিমাণ। কেনো এতো বেশি বিনিময় দেয়া হবে? কারণ সে সময়টি হবে ভীষণ সঙ্কটময়। এ সময়টি হবে অত্যন্ত জটিল ও কঠিন। এই কঠিন পরিস্থিতিতে সঠিক ঈমান ও সঠিক আমলের উপর থাকার কারণেই তাদের বিনিময় এতো বেশি দেয়া হবে।
আমরা দেখতে পাই, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতের শেষ যামানায় এমন কিছু সৌভাগ্যবান মানুষের কথা আমাদেরকে জানিয়েছেন যাঁরা হবে তাঁর উম্মতের মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভূক্ত। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ (صلى) يَخْرُجُ مِنْ عَدَنِ أَبْيَنَ اثْنَا عَشَرَ أَلْفاً , يَنْصُرُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ هُمْ خَيْرُ مَنْ بَيْنِى وَبَيْنَهُمْ.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (দক্ষিণ ইয়েমেনের) আদনে আবইয়ান অঞ্চল থেকে বারো হাজারের
একটি বাহিনীর আবির্ভাব হবে, তাঁরা আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাহায্য করবে এবং আমার ও তাঁদের সময়ের মধ্যে
তাঁরাই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।” (মুসনাদে আহমাদ, মু’জামুল কাবীর, তারীখুল কাবীর)
লক্ষ্য করুন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি বলেছেন! তিনি বলেছেন যে তাঁরা আল্লাহর রাসূল ও তাঁদের সময়ের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হবে। সুতরাং আমরা ধরে নিতে পারি যে তাঁরা আল্লাহর রাসূলের পর থেকে যতো যুগ, যতো শতাব্দী পরে হবে, তাঁর মধ্যে তারাই হবে শ্রেষ্ঠ। বিগত শতকসমূহের মাঝে তাঁরাই উম্মতের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ। তাঁদের এই শ্রেষ্ঠত্বের কারণ কি? কারণ হলো তাদের সময়টি সাহাবায়ে কিরামদের সময়ের মতোই জটিল ও কঠিন হবে। তাঁদেরকেও সেই একই ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে, যা সাহাবায়ে কিরামদেরকে করতে হয়েছিলো।
লক্ষ্য করুন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি বলেছেন! তিনি বলেছেন যে তাঁরা আল্লাহর রাসূল ও তাঁদের সময়ের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হবে। সুতরাং আমরা ধরে নিতে পারি যে তাঁরা আল্লাহর রাসূলের পর থেকে যতো যুগ, যতো শতাব্দী পরে হবে, তাঁর মধ্যে তারাই হবে শ্রেষ্ঠ। বিগত শতকসমূহের মাঝে তাঁরাই উম্মতের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ। তাঁদের এই শ্রেষ্ঠত্বের কারণ কি? কারণ হলো তাদের সময়টি সাহাবায়ে কিরামদের সময়ের মতোই জটিল ও কঠিন হবে। তাঁদেরকেও সেই একই ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে, যা সাহাবায়ে কিরামদেরকে করতে হয়েছিলো।
সুতরাং আল্লাহর সন্তুষ্টির অর্জনের এই স্বর্ণালী সময় হাতে পেয়েও কেনো এতো অকারণ অভিযোগ?
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক সময় অর্থনীতিতে এমন (বুম) স্ফিতি তৈরী হয়। যারা সে সময় একটু বুদ্ধি করে তাদের ব্যবসা বাণিজ্য সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে, যারা একটু রিস্ক নেয়ার সাহস দেখাতে পারে, তারা হঠাৎ করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার মতো বিরাট বিত্তশালী ধনী হয়ে যায়। আবার যখন অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে আসে, বাজারে মন্দা সৃষ্টি হয় তখন অনেকে আফসোস করতে থাকে যে আহ! ঐ সময়ে আমি একটু বুঝতে পারতাম, যদি একটু রিস্ক নিতাম, যদি সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পারতাম, তাহলে আমিও তাদের মতো মিলিয়নার, বিলিয়নার হয়ে যেতাম। তখন মানুষ পরিতাপের সাথে ভাবে ও আশা করে, সুদিন ফিরে পেলে তারাও পূর্বসূরীগণের ন্যায় স্বচ্ছল হতে পারত।
হাসানাত ও আজর অর্জনের পরিমাণ বৃদ্ধির সম্পর্ক পরিস্থিতির সাথে। পরিস্থিতি যতো জটিল কঠিন হবে আজর ততো বেশি হবে। অতএব কেন এই সময় ও পরিস্থিতির ব্যাপারে অকারণ অভিযোগ? এটা তো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সব চেয়ে উত্তম সময়।
আমরা যেখানে এমন একটি সময়ের কথা বলছি, যখন বিজয় একান্ত নিকটবর্তী। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর করে যাওয়া ভবিষ্যতবাণী বাস্তবে প্রত্যক্ষ করছি- যাঁরা ইমাম মাহদীকে বিজয়ী করবেন, যাঁরা ঈসা আ. কে বিজয়ী করবেন। আমরা যদি মনে করি যে আমরা বহুল প্রতিক্ষিত, বহুল আকাঙ্খিত সেই সিদ্ধান্তকর সময় অতিক্রম করছি, আর তারপরও যদি আমরা বাস্তব ময়দানে কাজে অংশগ্রহণ না করি, যদি আমরা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করি, তাহলে আমাদের পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। অতএব জান্নাত ক্রয়ের এই স্বর্ণালী মুহূর্তে কিছুতেই আমাদের হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা উচিত নয় যখন অন্যরা জান্নাতের অনেক উঁচু মাকামগুলোতে নিজেদের জন্য বুকিং দিয়ে ফেলছে। আমাদের উচিত নয় শুধু অভিযোগ করে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করা।
হযরত সাওবান রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
ان الله وقد زوى لى الأرض فرأيت مشارقها ومغاربها وان أمتى سيبلغ ملكها مازوى لى منها.
অর্থ: “আল্লাহ আমার সামনে সমগ্র পৃথিবী তুলে ধরলেন, আমি
এর পূর্ব হতে পশ্চিমপ্রান্ত পর্যন্ত অবলোকন করেছি। (তোমরা শুনে
রাখো) নিশ্চিতভাবে আমার উম্মতের কর্তৃত্ব ততো দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে, যতো
দূর পর্যন্ত আমার সামনে তুলে ধরা হয়েছে।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস
নং ২৮৮৯। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২২২৯৪)
অতএব আমাদের বর্তমান অবস্থা যতো দূর্বলই হোক না কেন, সেদিন ইনশাআল্লাহ বেশি দূরে নয়, যেদিন এই ইসলামী জীবন ব্যবস্থা প্রতিটি নগর, মহানগর, দেশ মহাদেশের উপর এর প্রভাব বিস্তার করবে। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর পতাকা প্রতিটি নগর মহা-নগরীতে স্বমহিমায় পতপত করে উড়বে। পৃথিবীর এমন প্রতি ইঞ্চি জায়গার উপর আল্লাহর এই দ্বীন বিজয় লাভ করবে, যেখানে দিন-রাতের আলো-আঁধার পৌঁছে।
অতএব আমাদের বর্তমান অবস্থা যতো দূর্বলই হোক না কেন, সেদিন ইনশাআল্লাহ বেশি দূরে নয়, যেদিন এই ইসলামী জীবন ব্যবস্থা প্রতিটি নগর, মহানগর, দেশ মহাদেশের উপর এর প্রভাব বিস্তার করবে। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর পতাকা প্রতিটি নগর মহা-নগরীতে স্বমহিমায় পতপত করে উড়বে। পৃথিবীর এমন প্রতি ইঞ্চি জায়গার উপর আল্লাহর এই দ্বীন বিজয় লাভ করবে, যেখানে দিন-রাতের আলো-আঁধার পৌঁছে।
ইং শা আল্লাহ, একদিন অবশ্যই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর পতাকা সব জায়গায় উড়বে।
ReplyDelete