Tuesday, September 24, 2013

হে বাংলাভাষী মুসলিম, আসুন ৭১ থেকে শিক্ষা নেই !

মুক্তিযুদ্ধের আগে পূর্ব পাকিস্তানে যে সকল বাঙালি ছিল তাদের মধ্যে কে রাজাকার আর কে মুক্তিযোদ্ধা সেটা বোঝার আসলেই কোনো উপায় ছিলনা । হ্যা কিছু কিছু লোকের কাজ কর্ম কথা বার্তায় পাকিস্তান প্রীতি বা বাঙালি প্রীতির সুস্পস্ট পক্ষপাত বোঝা যেত, কিন্তু বেশির আম জনতাই ছিল মাঝা মাঝি অবস্থানে, তারা রাজনীতির সাতেও ছিলনা পাচেও ছিলনা, নিজেদের মত করে জীবন যাপন করত ।

পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আইউব খান প্রোপাগান্ডা চালাইত দেশ খুব সুন্দর ভাবে চলতেসে, পূর্ব পাকিস্তানের উন্নতি পশ্চিম পাকিস্তানের মতই হচ্ছে, ওদিকে তত্কালীন আওয়ামিলিগ প্রচারণা চালাত পশ্চিম পাকিস্তানের অসম ও অন্যায় আচরণের । পাবলিক কম বেশি দুই পক্ষই শুনত, শুনে নিজের কাজে ব্যস্ত হত ।

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কিন্তু পাবলিক এই মাঝামাঝি অবস্থানে আর থাকতে পারেনি । তাদের মধ্যে বের হয়েছে সুস্পষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকার । যে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহন করতে পারেনি তাকেও একটা না একটা দিক বেছে নিতে হয়েছেই । কেউ তখন আর বলতে পারেনি আমি এসবের মধ্যে নাই আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেও না পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষেও না । যারা আগে সরকারী প্রোপাগান্ডা বেশি শুনত ও বিশাস করত তাদের কেউ হয়েছে রাজাকার, বাকি হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ।

যখন সংঘাত শুরু হয় তখন কেউ নিরপেক্ষ থাকতে পারেনা, একটা না একটা দল বেছে নিতেই হয় , সেই দলের জন্য স্থির থাকতেই হয় , ত্যাগ স্বীকার করতেই হয় ।

তেমনি ভাবে এখন মুসলিমদের মধ্যে মিশে আছে অনেক সত্যিকার মুসলমান, অনেক মুনাফিক-কাফির । তাদের ভেদাভেদ আপাত দৃষ্টিতে স্পষ্ট না । কিছু কিছু লোকের পক্ষপাতিত্ব অবশ্য ইসলামের দিকে বা কুফরের দিকে পরিষ্কার| কিন্তু আম জনতার পক্ষ এখনো পরিষ্কার না ।

এরকম পরিস্হিতিতে কি হয় জানেন ? আমি না বলে মহান আল্লাহ তা আলার আয়াতই শোনাই :

"আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং নিশ্চয় জেনে নেবেন যারা মুনাফেক।" (২৯:১১)

"মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে। যারা মন্দ কাজ করে, তারা কি মনে করে যে, তারা আমার হাত থেকে বেঁচে যাবে? তাদের ফয়সালা খুবই মন্দ।" (২৯:২-৪)

"নাপাককে পাক থেকে পৃথক করে দেয়া পর্যন্ত আল্লাহ এমন নন যে, ঈমানদারগণকে সে অবস্থাতেই রাখবেন যাতে তোমরা রয়েছ" (৩:১৭৯)

"তোমাদের কি এই ধারণা যে, তোমরা জান্নাতে চলে যাবে, অথচ সে লোকদের অবস্থা অতিক্রম করনি যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়েছে। তাদের উপর এসেছে বিপদ ও কষ্ট।" (২:২১৪)

"তোমরা কি মনে কর যে, তোমাদের ছেড়ে দেয়া হবে এমনি, যতক্ষণ না আল্লাহ জেনে নেবেন তোমাদের কে যুদ্ধ করেছে এবং কে আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মুসলমানদের ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছে। আর তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।" (৯:১৬)

এই বিষয়ে সব চেয়ে সুন্দর উদাহরণ হলো উহুদের যুদ্ধ । এর আগে মুনাফিক ও মুসলিম রা কি সুন্দর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাধ্যমে মিলে মিশে ছিল । মুনাফিক দের কেও সাহাবী ধরা হত । উহুদের যুদ্ধের জন্য বের হয়েও ঠিক ম্যদানে পৌঁছানোর আগ দিয়ে যখন ১০০০ জন সৈন্য থেকে ৩০০ জন মুনাফিক বের হয়ে গেল তখন বোঝা গেল কে মুনাফিক আর কে মুসলিম । এর পর খন্দক, তাবুকের যুদ্ধের সময়ও তাই হলো ।

মুসলিম-মুনাফিক আলাদা হয় সাধারনত সংঘাতের সময় । শান্তির সময় এরা মিলে মিশে থাকে । সংঘাত হলেই আলাদা হয়ে যায় - ঠিক যেমন মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার-মুক্তিযোদ্ধা আলাদা হয়েছিল । কেউই নিরপেক্ষ থাকতে আর পারেনা ।

দেখেন না মুসলিম বিশ্বে জায়গায় জায়গায় সংঘাত শুরু হয়েছে । ছোট বেলায় খালি ইমাম সাহেব ফিলিস্তিন আর কাশ্মীরের জন্য দুয়া করতেন । পরে করতেন চেচনিয়া, বসনিয়া নিয়ে । এখন তো মিশর,সিরিয়া, ইরাক, আরাকান, আফগানিস্তান, মালি, সোমালিয়া, চেচনিয়া আরো কত জায়গা নিয়ে করা হয় ।

এসব জায়গায় কিন্তু মুসলিম মুনাফিক আলাদা হয়ে গিয়েছে । কেউ কিন্তু on the fence নাই এখন । সবার পজিশন স্পষ্ট ।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস অনুযায়ী, ইমাম মাহদির নেতৃত্বে ইসলামের চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য ঈমান বনাম নিফাকের, তাওহীদ বনাম শিরক-কুফরের যে চূড়ান্ত সংঘাতের ভূখণ্ডগুলোর মধ্যে এই ভূখণ্ডটিও আছে, তাই একদিন ইমান-কুফরের সংঘাত বাংলাদেশেও হবে । ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে কিন্তু ওগুলা warm up ।

তাই আমি নিজে সহ আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ ইসলামি পড়াশোনা শুরু করেন । মিডিয়া উঠে পরে লেগেছে ইসলামের পিছনে এদের প্রোপাগান্ডা শোনা বন্ধ করেন । নিজের ঈমান, ইসলামি জ্ঞান ও আমল ঠিক করেন, এবং আল্লাহর কাছে দুয়া করেন । সংঘাত শুরু হওয়ার পর কিন্তু আপনি আর সময় পাবেন না । তখন কিন্তু সাথে সাথে একটি দিক কে আপনাকে সাপোর্ট করতেই হবে । তাই এখন যদি সকল মিডিয়ার ও শিক্ষা ব্যবস্থার এন্টি-ইসলামিক প্রোপাগান্ডা শুনে শুনে নিজের মগজ পূরণ করেন তখন কিন্তু ইসলামের দিকে যাওয়া মুস্কিল হয়ে যাবে । তাই টিভি পত্র পত্রিকা যত কম পড়ে বা যত কম সম্ভব বিশাস করে কুরআন, হাদিস, সিরাহ, ইসলামিক বই, লেকচার এগুলা বেশি বেশি পড়া শুরু করেন । আমি নিজেও তাই করার চেষ্ঠা করছি । 

সামনে খারাপ দিন আসছে, দিন বেশি নাই । তাই চলুন সময়ের সৎ ব্যবহার করি ।
লেখকঃ মাশুক রহমান, কম্পিউটার প্রকৌশলী

No comments:

Post a Comment