Monday, September 23, 2013

দাজ্জালকে জয়ী করার লক্ষ্যে মাহদি বিরোধী সম্ভাব্য ইবলিসি চক্রান্তসমূহ



এটি ইবলিসের পুরনো রীতি যে, সে সত্যকে সংশয়যুক্ত বানানোর লক্ষ্যে নিজের তৈরি এজেন্টদেরকে সত্যের দাবিসহ মাঠে নামিয়ে দেয় এবং সত্যকে মিথ্যা বানানোর চেষ্টা চালায়। ইবলিসের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা এই হবে যে, হযরত মাহদির আগমনের পূর্বে সে একাধিক নকল মাহদি দাড় করিয়ে দিবে, যাতে কিছু লোক তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে সত্য থেকে দূরে সরে যায় এবং যখন আসল মাহদির আগমন ঘটবে, তখন মানুষ আপনা থেকেই সংশয়ের শিকার হয়ে পড়বে যে, কে বলবে, ইনি আসল মাহদি, না ভুয়া মাহদি। ‘বিভ্রান্তকারী নেতৃবৃন্দ বিষয়ক’ হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। এক্ষেত্রে ইবলিসের প্রচেস্টাসমূহ অনেকটা এরকম হতে পারেঃ 

১। মিথ্যা মাহদির দাবিদারদেরকে দাড় করাবে। তাদের মাঝে হযরত মাহদির গুণাবলী আছে বলে প্রচার করে মুসলমানদের ধোঁকা দেওয়া হবে। এই ভুয়া মাহদির দাবিদার একাধিক হবে। আর একথা বলার অবকাশ থাকে না যে, এই মাহদিদেরকে অপার বিদ্যা, সুদর্শন আকার গঠন ও একদল ভক্ত মুরীদসহ জনসন্মুখে উপস্থিত করা হবে এবং বড় বড় জুব্বা-কাবাওয়ালা মানুষ এই মিথ্যা মাহদিদেরকে আসল মাহদি বলে প্রমাণিত করতে সচেষ্ট হবে। ‘কাদিয়ানী’ সম্প্রদায়ের সৃষ্টিকারী গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেকে প্রথম ইমাম মাহদি, পরে মাসিহ এবং সবশেষে নবীই দাবি করে বসে। আর বর্তমানে এই কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রতি পশ্চিমাদের এবং উপমহাদেশে তাদের দালাল মিডিয়ার সমর্থন সম্পর্কে প্রায় সব সচেতন মুসলিমই ওয়াকিবহাল। ১৯৭৯ সালেও এক ব্যক্তি নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করে মক্কা শরীফের মধ্যে এক ফিতনার সৃষ্টি করেছিল। 

২। ইবলিসি শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হতে পারে যে, তারা আসল মাহদির অপেক্ষায় থাকবে এবং তার এজেন্ট ও প্রপোগান্ডার মাধ্যমে তাকে মিথ্যা প্রমাণিত করার চেষ্টা করবে। এর জন্য তারা প্রতিটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গের সেবা গ্রহণের চেষ্টা চালাবে, যেমনটি এযুগেও আমরা প্রত্যক্ষ করছি। বিষয়টি সহজে বুঝবার জন্য একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছি। 

যে কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির কিছু সমর্থক সহযোগী থাকে, আবার কিছু বিরুদ্ধবাদীও থাকে। আপনি যে কোন মতাদর্শের নেতাকে দেখুন, দেখবেন, কিছু লোক তার জন্য নিবেদিত প্রাণ আবার কিছু মানুষ তার ঘোর সমালোচক। এমনকি তাদের কাফেরদের এজেন্ট আখ্যায়িত করার লোকেরও অভাব হবে না। প্রত্যেক মতাদর্শের লোকেরা আপন আপন নেতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে থাকে। কেউ যদি তার নেতাকে জিজ্ঞেস করে, অমুক ব্যক্তির আজকাল খুব নামডাক শোনা যাচ্ছে। শুনেছি, তিনি অনেক বড় একজন আল্লাহর ওলী। অনেক ত্যাগী আলেম। তো হযরত তার ব্যাপারে আপনার মতামত কি? তার ব্যাপারে এই হযরত যে অভিমত ব্যক্ত করবেন, তার পুরো অঙ্গনে সেই অভিমতই অনুসৃত হবে। হযরত যদি বলে দেন, সরকারের লোক; তার থেকে দূরে থাকো, তাহলে দেখবেন, লোকটি যুগের আবদালই হোক না কেন, ফেরেশতারা তার চলার পথে পালক বিছিয়ে দিক না কেন, হজরতের ফতোয়ার পর তার গোটা ভক্তমহল তাকে “সরকারের দালাল” বলে আখ্যায়িত করবে। 

এটি এমন এক ব্যাধি, যাতে সমাজের সেই শ্রেণীটি বেশি আক্রান্ত, যার প্রতিজনের হাতে সত্যের পতাকা রয়েছে। বিস্ময়কর বিষয় হল, প্রতিজন সদস্যের পতাকা একজনেরটি অপরজনের থেকে ভিন্ন। তাছাড়া একই মতাদর্শের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যেকের দাবি, আমার পতাকাই সত্যের পতাকা। 

আহ, তারা যদি নিজ নিজ আমিত্তের পতাকাগুলোকে অবনমিত করে ফেলত, টা হলে আল্লাহর কসম, সত্যের পতাকা তাদেরই হাতে বিশ্বময় পতপত করে উড়ত। হায়, যদি তারা আপন মন মস্তিস্ক ও চিন্তা চেতনার সীমাবদ্ধ সীমান্তগুলোকে অসীম করে ফেলত, তাহলে আজ জল ও স্থল, মরু ও মহাশূন্য সব তাদের ধ্বনিতে মুখরিত থাকতো। যদি তারা একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে দালালির ফতোয়া আরোপের পরিবর্তে ইসলামের শত্রুদের প্রতি মনোনিবেশ করতো, তাহলে শুধু তাদেরই সারি থেকে কেন, সকল ক্ষেত্র থেকে শত্রুর এজেন্টরা নির্মূল হতো। দাজ্জালের এসব ভয়াবহ ধোঁকা ও প্রতারণার কথা ভেবে মুমিন জননী হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর মতো মহান ব্যক্তিগণও কেঁদে উঠতেন। মহানবীর সাহাবাগণও ক্রন্দন করতেন। 

এ ছিল তাদের পরকালের ভয়। অন্যথায় তাদের মতো ব্যক্তিত্বদের সমস্যার কিছু ছিল না। যে লোকটি আল্লাহর পক্ষ থেকে হিদায়াতপ্রাপ্ত, নূরে এলাহি দ্বারা যাকে পথ দেখানো হয়ে থাকে, তার আবার ভাবনা কিসের। চিন্তা তো থাকা দরকার গুনাহগারদের। কিন্তু আফসোস! আমরা কখনও ভেবে দেখার কষ্টটুকু পর্যন্ত স্বীকার করি না। আর এমনভাবে নিশ্চিন্তমনে জীবন অতিবাহিত করছি, যেন কোন ফিতনাই নাই।

1 comment: