উহুদ যুদ্ধ সমাগত। মদীনার জীর্ণ কুটিরে যুদ্ধ সাজে
সেজেছেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন হারাম (রাঃ)। হাসি যেন তাঁর মুখ থেকে উপচে
পড়ছে। যুদ্ধে বের হবার আগে তাঁর পুত্র যাবির (রাঃ) কে ডেকে বললেন, “পুত্র! আমার
অন্তর বলছে, এ যুদ্ধে আমি সর্বপ্রথম শাহাদাত বরন করব।” কথা বলার সময় তাঁর মুখে যে
হাসি,তা দেখে মনে হবে যেন তিনি ঈদের আনন্দে শামিল হতে যাচ্ছেন।
উহুদ যুদ্ধের কঠিন সময়। ভীষণ যুদ্ধ চলছে। হযরত
আব্দুল্লাহ (রাঃ) এর কথা সত্য হলো।তিনি উসামা ইবনে আওয়ার ইবন উবাই এর হাতে শাহাদাত
বরন করলেন। তাঁর রক্তাক্ত দেহ লুটিয়ে পড়লো উহুদের ময়দানে। হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ)
আগেই ভিষণ ভাবে ক্ষত বিক্ষত হয়েছিলেন। তারপর প্রাণহীন তাঁর দেহ যখন লুটিয়ে পড়ল
মাটিতে তখন তাঁর উপর চললো নিপীড়ন। বিকৃত করা হল তাঁর দেহকে। মুখে কিন্তু তখন তাঁর
সেই বেহেস্তী হাসি। আঘাতে আঘাতে বিকৃত তাঁর দেহের দিকে চেয়েই চিৎকার দিয়ে কেঁদে
উঠল হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) এর মেয়ে ফাতিমা। মহানবী (সা) সেদিকে চেয়ে তাঁকে
সান্বতনা সুরে বললেন, “দাফন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফিরিশতারা তাঁকে ছায়া দান করছে।”
পাহাড়ঘেরা উহুদের এক প্রান্তে আরও একজন শহীদের সাথে
তাঁকে দাফন করা হলো। ছ’মাস পর তাঁর পুত্র হযরত জাবির (রাঃ) তাঁকে সে কবর থকে তুলে
অন্য আর এক কবরে দাফন করে দিলেন। সে সময়ও তাঁর দেহ ছিল অবিকৃত। মনে হয়ে ছিল যেন
আজই তাঁকে দাফন করা হয়েছে।
উহুদ যুদ্ধের বেশ কিছুদিন পরের এক ঘটনা। একদিন হযরত
আব্দুল্লাহ (রাঃ) এর পুত্র হযরত জাবির (রাঃ) কে কেছে পেয়ে মহানবী (সাঃ) উহুদ
যুদ্ধে প্রথম শহীদ তাঁর পিতা সম্পর্কে একটি সু সংবাদ দিলেন। বললেন, “আল্লাহ পর্দা
ছাড়া সরাসরি কারও সাথে কথা বলেন না। কিন্তু তোমার পিতার সাথে সরাসরি কথা বলেছেনঃ “যা
চাও তাই দেয়া হবে।”তোমার পিতা উত্তরে বললেন, “আমার ইচ্ছা আরেক বার দুনিয়াতে গিয়ে
শহীদ হয়ে আসি।’’ আল্লাহ জবাব দিলেন, “যে দুনিয়া থেকে একবার চলে আসে, সে আর ফিরে
যেতে পারে না। অতঃপর তোমার পিতা তাঁর সম্পর্কে ওহী চেয়েছিলেন। সে ওহী আমার কাছে
এসেছে, “যারা আল্লাহুর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে তোমরা মৃত্য বলনা, বরং তারা জীবিত।”
No comments:
Post a Comment