Tuesday, July 23, 2013

আমি ঠকিনি বন্ধু.........

মক্কার ধনী উমাইয়া। ধনে-মানে সব দিক দিয়েই কুরাইশদের একজন প্রধান ব্যক্তি সে। প্রাচূর্যের যেমন তার শেষ নেই, ইসলাম বিদ্বেষেও তার কোন জুড়ি নেইশিশু ইসলামকে ধ্বংসের কোন চেষ্টারই সে কোন ত্রুটি করে না। এ ঘোরতর ইসলাম বৈরী উমাইয়ারই একজন ক্রীতদাস ইসলাম গ্রহণ করেছে। তা জানতে পারল উমাইয়া। জানতে পেরে ক্রোধে ফেটে পড়ল সে। অকথ্য নির্যাতন সে শুরু করল। প্রহারে জর্জরিত সংজ্ঞাহীন-প্রায় এই ক্রীতদাসকে সে নির্দেশ দেয়, “এখনও বলি,  মুহাম্মাদের ধর্ম ত্যাগ কর। নতুবা তোর রক্ষা নেই।”

কিন্তু তার ক্রীতদাস বিশ্বাসে অটল। শত নির্যাতন করেও তার বিশ্বাসে বিন্দু মাত্র ফাটল ধরানো গেল না। ক্রোধে উন্মাদ হয়ে পড়ল উমাইয়া। শাস্তির আর কঠোরতর পথ অনুসরণ করল সে।

এক দিনের ঘটনা। আরব মরুভূমিতে মধ্যাহ্নআগুনের মত রৌদ নামছে আকাশ থেকে। মরুভূমির বালু যেন টগবগিয়ে ফুটছে উমাইয়া তার ক্রীতদাসকে নির্দয়ভাবে প্রহার করল। তারপর তাকে সূর্যমুখী করে শুইয়ে দেয়া হল। ভারি পাথর চাপিয়ে দেয়া হলো তার বুকে। ক্রীতদাসের মুখে কোন অনুনয়-বিনয় নেই। মনে নাই কোন শংকা। চোখে অশ্রু নেই, মুখে কোন আর্তনাদও নেই। ঊর্ধ্বমুখী তাঁর প্রসন্ন মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে আল্লাহুর প্রশংসার ধ্বনি-‘আহাদ’, ‘আহাদ’।

ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন হযরত আবু বকর (রাঃ)। ‘আহাদ’,’আহাদ’ শব্দ তাঁর কানে গেল। অনুসন্ধিৎসু হয়ে দেখার লক্ষ্যে তিনি মরুভূমির বুকে শায়িত ক্রীতদাসের নিকটবর্তী হলেন। উমাইয়াকে দেখে সব ব্যাপারটা তিনি মনে মনে বুঝে নিলেন। বললেন,“উমাইয়া,আপনাকে তো ধনী ও বিবেচক লোক বলেই জান্তাম কিন্তু আজ প্রমাণ পেলাম, আমার ধারণা ঠিক নয়। দাসটি যদি এতই অপছন্দ, তাকে বিক্রি করে দিলেই পারেন। এমন নির্দয় আচরণ কি মানুষের কাজ?”

হযরত আবু বকরের ঔষধে কাজ হলো। উমাইয়া বললেন, ‘‘এত বাহাদুরী দেখাবেন না। দাস আমার, এর উপর সদাচার-কদাচার করবার অধিকার আমারই। তা যদি এতই দয়া লেগে থাকে, তবে একে কিনে নিলেই পারেন?”

হযরত আবু বকর (রাঃ) এই সুযোগেরই অপেক্ষা করছিলেন। তিনি চট করে রাজী হয়ে গেলেন। একজন শ্বেতাংগ ক্রীতদাস ও দশটি স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে কিনে নিলেন কৃষ্ণাংগ ক্রীতদাসকেহযরত আবু বকর (রাঃ) ক্রীতদাসকে মরুভূমির বুক থেকে টেনে তুলে গাঁ থেকে ধূলো ঝেড়ে দিলেন। উমাইয়া বিদ্রুপের হাসি হেসে বললেন,“কেমন বোকা তুমি বলতো? এ অকর্মন্য ভৃত্যটাকে একটি স্বর্ণ মুদ্রার বিনিময়েই বিক্রি করে দিতে চেয়ে ছিলাম। এখন আমার এত লাভ ও তোমার এত ক্ষতি দেখে হাসি সম্বরণ করতে পারছি না।”

আবু বকর (রাঃ)ও হেসে বললেন, “আমি ঠকিনি বন্ধু! এ ক্রীতদাসকে কেনার জন্য আমার সমস্ত সম্পত্তি দিতে হলেও আমি কুণ্ঠিত হতাম না। কিন্তু একে আমি ধারণাতীত সস্তা মূল্যে ক্রয় করে নিয়ে চললাম।’’ তিনি ক্রীতদাসকে মুক্ত করে দিলেন।

এ দাসটি ছিল বিশ্ব বিশ্রুত সাহাবী হযরত বিলাল (রাঃ)। ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন।

No comments:

Post a Comment