একটা বিখ্যাত গল্প আছে, কেউ কেউ হয়ত শুনে থাকবেন ৷ গল্পটা চারটি গরুকে
নিয়ে ৷ তিনটি কালো, একটি সাদা ৷ তারা একটা শ্বাপদসংকুল এলাকায় বাস করতো ৷
এজন্য নিরাপত্তার খাতিরে তারা একসাথে থাকত এবং একে অপরের প্রতি সতর্ক
দৃষ্টি রাখতো ৷ যার ফলে তারা টিকে ছিল ৷ একদিন কালো তিনজন একত্র হল এবং বলল
‘এই সাদা গরুটার জন্য আমরা ধরা পড়ে যাব ৷ আমরা কালো বলে রাতের বেলা শত্রু
আমাদের দেখতে পায়না, কিন্তু তাকে দেখতে পায় ৷ চল ঐ গরুটাকে আমরা
পরিত্যাগ করি ৷ তারপর আমরা তিনজন একসাথে থাকবো ৷’ যেমন কথা তেমন কাজ ৷
সেদিন থেকেই কালো গরুগুলো সাদাটাকে বয়কট করল, তিনজন একপাশে থাকত আর বেচারা
সাদা গরু আরেক পাশে ৷
সেখানকার নেকড়ে, এই গরুদের মধ্যে অনৈক্য বুঝে ফেললো এবং সে সাদা গরুটার
উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো ৷ যখন নেকড়ে সাদা গরুটার গোশত খুলে খুলে খাচ্ছিল, তখন
কালো গরুগুলো কোন বাধা দিলনা ৷ তারা তাকিয়ে তাকিয়ে তাদের ভাইকে টুকরো
টুকরো হতে দেখছিল ৷
পরের রাতে নেকড়ে কালো গরুগুলো উপর আক্রমণ করলো, কারণ তাদের শক্তি কমে গেছে ৷ এজন্য নেকড়ে একটা কালো গরুকে ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হলো ৷
পরের রাতে নেকড়ের জন্য কাজটা আরো সহজ হয়ে গেল, কারণ গরু আছেই মাত্র দু’টো ৷ নেকড়ে খুব সহজে আরেকটা গরু খেয়ে নিল ৷
শেষ রাতে গরু বাকি রইল মাত্র একটা ৷ গরুটা ভয়ে এদিক ওদিক ছুটোছুটি
করলো, কিন্তু তার কোন সাহায্যকারী নেই ৷ নেকড়ে বুঝল গরুটা দৌড়াদৌড়ি করে
হাঁপিয়ে একসময় পড়ে যাবে, তাই সে মনের আনন্দে পায়চারি করতে লাগলো ৷ সময়
সুযোগমত সে গরুটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো ৷ জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে গরুটা
একটা কথা বলেছিল, খুবই শিক্ষণীয় কথা ৷ সে বলেছিল, ‘আমিতো সেদিনই খাদ্য
হয়েছি, যেদিন সাদা গরুটাকে খাওয়া হয়েছে ৷’ অর্থাৎ গরুটা বুঝতে পেরেছিল,
যেদিন সে সাদা গরুটাকে সাহায্য করেনি, সেদিনই সে নিজের মৃত্যুর চুক্তিতে
স্বাক্ষর করেছে ৷
আশা করি কাহিনীটি থেকে আপনারা মূল্যবান শিক্ষা পেয়ে গেছেন ৷ প্রথমত, এই
গল্পের সাথে বর্তমান উম্মাহর অনেক মিল পাওয়া যাবে ৷ আমরা দেখতে পাচ্ছি
একের পর এক মুসলিম জাতির/দেশের পতন ঘটছে ৷ আমরা কি করছি? আমরা শুধু চেয়ে
চেয়ে দেখি ৷ যখন ফিলিস্তিনকে কেড়ে নেয়া হল, আমরা কিছুই করিনি ৷ এরপর
একের পর এক জাতি বিপদের মুখে পড়তে লাগল – কাশ্মীর, চেচনিয়া, ফিলিপাইনের
মুসলিম এবং সর্বশেষ ইরাক ৷ ইরাকে যখন হত্যাযজ্ঞ চলছে, তখন আমরা কিছুই করিনি
৷ এখানেই শেষ নয়, পরবর্তীতে আরো জাতিকে ধরা হবে, কাকে ধরা হবে তা
আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷ গল্পটা থেকে বুঝা যায়, যে মুসলিম জাতিগুলো এখনও টিকে
আছে সেগুলো প্রথম জাতিটার পতনের সাথে সাথেই পরাস্ত হয়েছে ৷
দ্বিতীয়ত, এ গল্প থেকে অনৈক্যের ফলাফল বুঝা যায় ৷ গরুগুলো যতদিন
একসাথে ছিল, ততদিন শত্রু কিছু করতে পারেনি। কিন্তু যেই তারা একজনকে ছেড়ে
দিল, তখন কি হল? তারা সকলেই হেরে গেল৷
রসূলুলৱাহ্ (সা.) বলেছেন, ‘এই উম্মত হল একটি দেহের মত ৷ যদি দেহের কোথাও ব্যথা লাগে, তাহলে গোটা দেহ জ্বরাক্রান্ত হয় ও ঘুমাতে পারেনা ৷’ (বুখারী)৷
অর্থাৎ কারও হাত বা পায়ে আঘাত লাগলে, সে ব্যথার কারণে ঘুমাতে পারেনা, এবং
তার দেহ ব্যথা সারাতে গিয়ে জ্বরগ্রস্থ হয়ে পড়ে ৷ পূর্ব, পশ্চিম বা
উত্তর, দক্ষিণের মুসলিম জাতি ব্যথা পেলে, আপনারও এমন ব্যথা লাগা উচিত যেন
আপনার নিজ পরিবার আহত হয়েছে ৷ আপনি যদি শুধু নিজের এবং আপনজনদের নিরাপত্তা
নিয়েই চিন্তিত হন – তবে একটা সমস্যা আছে, তখন আপনাকে আর দেহের (উম্মাহ)
অংশ বলা যায় না ৷ মুসলিমরা রাষ্ট্র, মাযহাব, দলাদলি নিয়ে বিভক্ত হতে
পারে, কিন্তু তাদের বড় পরিচয় তারা মুসলিম (যদি না তারা পথভ্রষ্টদের মধ্যে
কেউ হয়) ৷ অনেকে দাবী করেন ‘আমি ও আমার দল মুসলিম’, অন্যরা যেহেতু তাদের
দলের অনুসরণ করেন না তাই অন্যরা মুসলিম না ৷ আপনি যতক্ষণ না কোন ভাইকে বা
বোনকে কাফের প্রমাণ করতে পারবেন, ততক্ষণ সে মুসলিম [একজন মানুষের অন্তরে
ঈমান আছে কি নেই তা দেখার ক্ষমতাও আমাদের নেই বা তা দেখার নির্দেশও আমাদের
দেয়া হয়নি ৷ রসূল (সা) আমাদের বাহ্যিক আমল দেখে মুসলিম সনাক্ত করতে
বলেছেন ৷ যেমন: নামায, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি]৷
আমরা মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য চাই ৷ ঐক্য বলতে বলছিনা দল, মাযহাব সব বাদ
দিয়ে সবাইকে একটা জামাতের অনুসরণ করতে হবে ৷ সেটা হয়তো এই মুহূর্তেই
সম্ভব নয় ৷ ঐক্য বলতে আমরা বলছি, আপনি যে মুসলিম গোষ্ঠীর (বা group-এরই)
হননা কেন, যে মাযহাবের হননা কেন – আপনি বিপদে আপনার ভাইয়ের পাশে এসে
দাড়াঁবেন ৷ এটাই ঐক্য!
মুসলিমদের মধ্যে একেকটা দল একেক রকম কাজ করছে – এই বিভিন্নতার দরকার আছে
৷ মুসলিমদের আজ সব ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে ৷ কেউ হয়তো দাওয়াহর কাজ করছে,
কেউ ইল্ম অর্জন করছে, কেউ এবাদতে মশগুল আছে ৷ মানুষ বিভিন্ন রকমের, তাই
কাজও বিভিন্ন রকম হবে ৷ মানুষের দক্ষতাও একেক রকম, কেউ ভাল আলেম, কেউ ভাল
ইমাম আর কেউ বা ভাল শিক্ষক ৷ কেউ কেউ আছেন যারা কথা কম বলেন, কাজ বেশি করেন
৷ সব ধরনের লোকেরই দরকার আছে ৷
তাই অন্য মুসলিম ভাইদের সাথে আপনার চিন্তাধারার মিল নাও থাকতে পারে, কিন্তু তাদের বিপদে আপনি সাহায্য করবেন – একেই বলে একতা ৷
আমাদের তাই রসূল (সা) হাদীসটির কথা স্মরণ রেখে ও সারা পৃথিবীর মুসলিমদের
দুর্দশার কথা চিন্তা করে কষ্ট লাগা উচিত ৷ ফিলিস্তিন, ইরাক বা কাশ্মীরে কি
হচেছ সে ব্যাপারে আপনাকে সচেতন হতে হবে, যদিও তা আপনার দেশ নয় ৷ এসব
মুসলিম দেশের কয়েকটির মধ্যে বিরোধ থাকতে পারে, যুদ্ধ বা রাজনৈতিক সমস্যাও
থাকতে পারে ৷ কিন্তু তাই বলে আপনার মনোভাব একই থাকবে, যা সমস্যা তা সরকারের
মধ্যে, সে দেশের মুসলিমরাতো আপনার ভাই ৷যে মুসলিমদের নিয়ে ভাবেনা সে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয় ৷
রসূল (সা.) বলেছেন, ‘একজন মানুষ যাকে ভালবাসে (কেয়ামতের দিন) তার সাথে থাকবে ৷’ আপনি
যদি মুসলিমদের ভালবাসেন, তবে মুসলিমদের সাথে থাকবেন (জান্নাতে), আর যদি
কাফিরদের ভালবাসেন, তবে আপনার আবাস হবে তাদেরই সাথে (জাহান্নামে) ৷
রসূল (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন ‘তোমরা যার উপাসনা করতে
তার পিছু পিছু যাও৷’ তাই যে ক্রুশের উপাসনা করত, সে ক্রুশের কাছে যাবে, যে
প্রতিমা পূজা করত, সে প্রতিমার কাছে যাবে ৷ এরপর আল্লাহ এসব মিথ্যা
উপাস্যদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন এবং তাদের অনুসারীরাও তাদের পিছু পিছু
যাবে ৷
গল্পটা থেকে তৃতীয়ত আমরা বিশ্বাসঘাতকতার পরিণাম জানতে পারি, জানতে পারি একজন মুসলিমকে পরিত্যাগ করার কুফল ৷ রসূল (সা) বলেছেন, ‘যে তার মুসলিম ভাইকে অত্যাচার করেনা, বিশ্বাসঘাতকতা করেনা এবং পরিত্যাগ করেনা সেই (প্রকৃত) মুসলিম ৷’ (বুখারী ও মুসলিম) ৷
jei din amader nijeder ghor e agun lagbe sei din hus hobe tar age hobe na . ajke jodi boli je desh mani na ummah ak hok sobai . taile hasina amake for sure fasi dibe . kintu ami bolbo r boli je ami desh r concept e mani na . amader durbol korar jonno ai sob concept created hoise . amra islam theke dure sore gesi . mut niti vule gesi tai ajke amader k ai din dekhte hosse
ReplyDelete