Monday, June 24, 2013

আত্মকথনঃ ১

৩৩ বছরের জীবনে মন মতো না হওয়ার খাতায় মাত্র যে দুইটি জিনিস তার মধ্যে একটি হলো ক্যাডেট কলেজের পড়েও সেনা অফিসার না হতে পারা। আর তার প্রেক্ষিতে একটেল (বর্তমানে রবি) থেকে একটি স্কলারশীপ জুটিয়ে ১৯৯৯ সালের মে মাসে Bachelor of Information Technology (honors) Software Engineering পড়ার জন্য মালয়েশিয়ার Multimedia University তে যাওয়া। আমাদের দুইটি ক্যাম্পাস। আমি ছিলাম মেলাক্কা ক্যাম্পাসে। কুয়ালালামপুর থেকে অনেক দূরে।

২০০০ সালের মাঝামাঝি মে বা জুন মাসের এর সন্ধ্যা। ২য় ক্যাম্পাস সাইবারজায়া। কুয়ালালামপুরের নিকটে। আমি তখন সবে ১ম বর্ষ শেষ করে ২য় বর্ষে পা দিয়েছি। প্রতিবারের মতো নতুন বাংলাদেশি ছাত্র আসবে আজকে। এক দেশি প্রি ইনিভার্সিটি শেষ করা ছাত্র এসে খবর দিলো, “বস, নতুন পোলাপানরা চইলা আইছে।” ক্যাডেট কলেজের সেই ৭ম থেকে ৮ম শ্রেণিতে ওঠার মতো এক অনুভূতি। রওনা করলাম দেখা করার জন্য।
পথিমধ্যে ছেলেটি বলল, “বস, একটা প্রবলেম?”
“আবার কি?”
“একজনের মুখে আবার দাড়ি!!”
“শালা মনে হয় জামাত করে...” নিজের বাড়ি একটা বিশেষ জেলার হওয়ায় এবং নিজেকে জাতির একজন মহান নেতার সৈনিক মনে করায় হয়তো বেরিয়ে গিয়েছিল।
“কিন্তু বস, ইনার তো আরও কঠিন অবস্থা।“

এরই মধ্যে আমরা ভার্সিটি চত্তরে হাজির। আমাদের সিনিয়র বাংলাদেশি ইমাদ ভাই আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন নতুনদের সাথে। কিন্তু আমাদের কয়েকজনের তো মাথা খারাপ।

এই নতুন ভাইয়ের নাম দিদার। মাথায় সাদা টুপি, মুখে লম্বা দাড়ি, মেরুন রঙ্গের পাঞ্জাবী ও পায়জামা। আর পায়জামাও টাকনুর উপরে। পায়ে খুবই সাধারন ব্যাক বেল্ট ছাড়া সান্ডেল। পরিচয় শেষে আমি আমার চিরচারিত স্টাইলে সরাসরি প্রশ্ন করলাম “ভাই, আপনি কি এই বেশেই প্লেনে এসেছেন?” মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, ”জি ভাই।”
এরিমধ্যে ইমাদ ভাই এর প্রস্তাব, “চলো সবাই এক সাথে ডিনার করে নেই।“ আমার পাশের জন আস্তে করে বলল, “ বস, আমরা যদি এই দাড়িওয়ালা উস্তাদের সাথে খাইতে যাই, ক্যান্টিনে তো ইন্ডিয়ান মেয়েরা আমাদের সাথে কথা বলবে না”।
“হুম, আমিও তাই ভাবছি”।

এরপর পর দেখতে দেখতে কেটে গেল ২০০১, কেটে গেল ২০০২। অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা, সেমিস্টার ব্রেকে এক মসজিদ থেকে আরেক মসজিদে জামাত বদ্ধভাবে ছুটে চলা, যা কিনা নিজের চিন্তা চেতনা, লাইফ স্টাইলে আনল পরিবর্তন।

আসলো ২১ শে জানুয়ারী ২০০৩। স্নাতক ডিগ্রীর পড়াশোনা শেষ। আজ আমার দেশে ফেরার পালা। ইমিগ্রেশন পার হয়ে প্লেনে উঠলাম। মুখে এক মুঠ মালো সুন্নতী দাড়ি, মাথায় সাদা টুপির সাথে কালো পাগড়ী, পরনে সাদা পাঞ্জাবী ও পায়াজামা। পায়জামা টাকনুর উপরে। পায়ে কালো রং এর সাধারন ব্যাক বেল্ট সান্ডেল। বাংলাদেশে এসে বিমান বন্দরে পরিবারের সকলের সাথে দেখা।

আমার একমাত্র ছোট বোনের প্রশ্ন, “ভাইয়া, তুমি কি এই বেশেই প্লেনে এসেছ?” মুচকি হাসি দিয়ে বললাম, ”জি ভাইয়া।” আর অন্তরে আমার নিঃশব্দে ধ্বনিত হচ্ছিলঃ

“আপনি বলুন, আমার নামায, আমার এই কোরবাণী (ত্যাগ) এবং আমার জীবন ও মরন একমাত্র বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে”। (সূরা আন আম ১৬২)

1 comment:

  1. ভাইয়া আপনি শেষের দিক থেকে তিন নম্বর প্যারাতে (২য় লাইন) একটা বানান ভুল করসেন। মালো না কালো দাড়ি হবে।

    ReplyDelete