Thursday, October 10, 2013

পাশ্চাত্যের জীবনযাত্রার প্রতি মুগ্ধতা

উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে আমাদের দেশে চিহ্নিত হয় পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশ, সে সব দেশের মানুষ এবং তাদের জীবনযাত্রা। অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে আমাদের দেশের আধুনিক শিক্ষিত শ্রেণীর মাঝে এ মনোভাবের বিস্তার ব্যাপক। বিশেষ করে আমাদের নতুন প্রজন্মের একটা অংশ এ ব্যাপারে বেশি মোহাচ্ছন্ন। 

এমন কি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাহ্যিকভাবে দ্বীনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা আধুনিক শিক্ষিত মানুষের মাঝেও নীতি-নৈতিকতা ও আধুনিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের জীবনধারার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ ও মোহ ফুটে উঠে।

এক্ষেত্রে একটি কারণ যদি হয় নিজেদের ঐতিহ্য ও অবস্থান সম্পর্কে অনুচ্চ ধারণা, তবে অন্য কারণটি হল তাদের সম্পর্কে যথাযথ অবগতির অভাব। অথচ বাস্তব চিত্র সম্পর্কে অবগতি থাকলে এ ধরনের মনোভাবের অপনোদন ঘটে যাওয়াটাই হবে স্বাভাবিক। 

যৌবনভোগের সাংস্কৃতিক কাঠামোর কারণে বিয়ে নামের বন্ধনের সঙ্গে অপরিচিত হতে শুরু করেছে নতুন প্রজন্মের পাশ্চাত্যবাসীরা একসঙ্গে যৌনজীবন কাটালেও বিয়ে এবং সন্তান ধারণ কোনোটিরই ধার ধারে না তারা। সঙ্গীর প্রতি আস্থার সঙ্কট, ব্যয়, ঝামেলা, উপভোগে অন্তরায় এবং সন্তান কোনো কাজে আসে না-এ ধারণা থেকে বিয়ে এবং সন্তান ধারণের প্রবণতা কমছে আশঙ্কাজনক হারে। বার, পাব, নাইটক্লাব সংস্কৃতির পাশ্চাত্যবাসীদের জীবনধারায় বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড, মালাবদল, পালাবদলের মধ্যে বেশি দিন একসঙ্গে থাকা হয় না। আবার যতদিনই থাকা হয়, আয়-ব্যয়ে চলে একেলা চলো নীতি। তাহলে সন্তানের দায়িত্ব নেবেটা কে? পাশ্চাত্যবাসীদের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কার পেছনে এ অঙ্কের চেয়েও ভয়াবহ চিত্র আছে।

লিভ টুগেদার বাদ দিলেও সামপ্রতিক বছরগুলোতে বিয়ের ঘটনা যাই ঘটছে তার বেশিরভাগই সমলিঙ্গের। নারী-নারী, পুরুষ-পুরুষ। ফলে জন্মহার কমছে ব্যাপকভাবে। দ্রুত শূন্যের দিকে এগুচ্ছে এ হার।
 
মৃত্যুর হার বেশি জন্মের হার কমআর যে সকল রাষ্ট্রে মৃত্যু হারের সঙ্গে সমানে চলা জন্মহার, তার প্রায় গোটাটাই আসলে অভিবাসীদের অবদান, তাতে এখনও নামে মাত্র কিছু অংশীদারিত্ব মূল পাশ্চাত্যবাসীদের। পঞ্চাশোর্ধ্বদের সঙ্গ দেয় পোষা কুকুর আর বোতলে মত্ত স্থানীয়রা। 

বিশেষ করে, ইউরোপের প্রায় সব দেশের মানুষের জীবনযাত্রার চিত্রই প্রায় অভিন্ন। যত মুগ্ধতার চোখেই তাদের দেখা হোক, তারা কিন্তু এখন অস্তিত্বের সংকটে ডুবন্ত। একথা প্রমাণিত সত্য যে, হেদায়েত যে জীবনে নেই সে জীবনে স্বস্তি ও দ্যুতি নেই। বাস্তবেই পার্থিব উন্নয়ন ও স্বচ্ছলতার জৌলুস দেখে তাদের প্রতি দুর্বল ও আসক্ত হয়ে কারো কোনো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আখেরাতে তো নেইই, দুনিয়াতেও নেই। তাই আমাদের দ্বীন ও দ্বীনকেন্দ্রিক সংস্কৃতি নিয়ে আমরা যত প্রত্যয়ী ও অনুশীলনকারী হব ততই আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আসবে।

No comments:

Post a Comment