সমগ্র আরব উপদ্বীপের বাছাই করা কাফের মুশরিকদের সৈন্যদল এক যোগে
পঙ্গপালের মত ছুটে আসছে মদীনা মনোয়ারার দিকে। অরা চারদিক থেকে একসাথে মদীনার উপর
ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্ষুদ্র ইসলামী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়।
মদীনা রক্ষার জন্য তিন হাজার মুসলমান মহানবী (সাঃ) এর
নেতৃত্বে মদীনা শহর ঘিরে খন্দক কাটছেন। শত্রুরা ছুটে আসছে। হাতে সময় নেই।
নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিজনকে দশ গজ দীর্ঘ পাঁচ গজ গভীর খন্দক খনন করতে হবে। শীতকাল
বরফ জমা ঠান্ডা রাতেও তাই অবিরাম কাজ চলছে। তিন দিন থেকে খাওয়া নেই। পেট পিঠে লেগে
গেছে। ক্লান্ত-শ্রান্ত সবাই। কিন্তু মুখে তাঁদের প্রশান্ত হাসি। চোখ থেকে তাদের ভক্তি
ও আনুগত্যের পবিত্র জ্যোতি যেন ঠিকরে পড়ছে।
মহানবী (সাঃ)ও খন্দক কাটছেন। তাঁর পেট পিঠে লাগা। পাথর
বাঁধা পেটে। ভক্ত সাহাবীরা তাঁকে সাহায্য করতে চাইছেন। তিনি প্রশান্ত হাসিতে
তাঁদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন। বললেন, “তোমরা তোমাদের দায়িত্ব পালন কর।’’
তিন হাজার সাহাবীর অবিরাম শ্রমে ২০ দিনে খন্দক কাটা শেষ
হলো। শত্রুর এসে গেছে। অশান্ত, অদিগন্ত সাগর উর্মিরর মতো তারা এসে ঘিরে ফেললো
মদীনাকে। মদীনার ছান-আ পর্বতকে পেছনে আর খন্দককে সামনে রেখে সৈন্য সমাবেশ করলেন
মহানবী (সাঃ)।
সমগ্র আরব কাফের বাহিনী তিনটি বাহিনীতে বিভক্ত হয়ে মদীনা
বেষ্টন করল। উমাইয়া ইবন হিছন ফুজারীর নেতৃত্বে গাতফান বাহিনী, তুলাইহার নেতৃত্বে
আসাদ বাহিনী এবং আবু সুফিয়ান ইবন হারবের নেতৃত্বে অবশিষ্ট বাহিনী।
অবরোধ চলছে দিনের পর দিন ধরে। মদীনার তিন দিক ঘিরে
দাঁড়ানো আরব বাহিনীর তর্জন গর্জনে মদীনার ভূমিও যেন কাঁপছে। স্বয়ং আল্লাহ এ সময়কার
দৃশ্য সম্পর্কে বলেছেন,
“উপর নীচ সব দিক থেকে শত্রু যখন তোমাদের উপর আপতিত হলো, যা
দেখে তোমাদের চক্ষু স্থির হয়ে গেল। ত্রাসে যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত হবার উপক্রম হলো, আর
তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা করতে লাগলে, তখন মুসলমানদের উপর কঠিন
পরীক্ষার সময় এল এবং তাঁদের সাংঘাতিক রকমের একটি দোদুল্যমান অবস্থায় ফেলে দেয়া
হলো।”
(সূরা আল-আহযাব)
আবরধের তীব্রতা এবং শত্রু বাহিনীর জৌলুস ও আষ্ফালন দেখে
মহানবী (সাঃ) চিন্তিত হয়ে পড়লেন। চিন্তিত হলেন এই ভেবে, যদি মদীনার আনসারদের মনোবল
ভেংগে পড়ে। যদি তারা হতাশ হয়ে পড়ে। মহানবী (সাঃ) এ চরম সংকট মুহূর্তে তাই আনসারদের
মনবলের একবার পরীক্ষা নিতে চাইলেন।
তিনি আনসার সর্দার হযরত সা’দ ইবন উবাদা (রাঃ) এবং
সা’দ ইবন মুয়ায (রাঃ) কে ডাকলেন। ডেকে তাদের মতামতের জন্য তাদের বললেন, “মদীনায় উৎপাদনের
এক-তৃতীয়াংশ দেবার প্রতিশ্রুতি করে আমরা গাতফান বাহিনীকে অবশিষ্ট আরব বাহিনী থেকে
বিচ্ছিন্ন করতে পারি।” আনসার সর্দারদ্বয় শান্তভাবে মহানবী (সাঃ) এর প্রস্তাব
শুনলেন। শুনে ধীর কন্ঠে আরয করলেন, “এটা যদি আল্লাহুর হুকুম হয়, তাহলে অস্বীকার
করার উপায় নেই। আর যদি রায় বা ব্যক্তিগত মত হয় তাহলে আমাদের নিবেদনঃ ইসলাম
আমাদেরকে যে মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে, তা নিয়ে আমরা কাউকে রাজস্ব দেবার জন্য নত
হতে পারি না।”
মহানবী (সাঃ) আশ্বস্ত হলেন। নিশ্চিত হলেন ইনশাল্লাহ, এই উন্নত শির মুমিন
বাহিনীর কাছে শত্রু পক্ষের বিশাল শক্তি মাটির মিশে যাবে।
No comments:
Post a Comment