Sunday, August 18, 2013

মুসলমানগণ মালদার হবে তবে দ্বীনদার হবে না

হযরত আলী (রাঃ) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মসজিদে বসা ছিলাম। হটাৎ করেই উদিত হলেন মুসআব ইবনে উমাইর (রাঃ)। তাঁর গায়ে তখন চামড়ার তালিযুক্ত একটি চাদর শোভা পাচ্ছিল। তার এই হতদরিদ্র অবস্থা দেখে এবং তাঁর ইসলামপূর্ব সময়ের কথা স্মরণ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁদতে শুরু করলেন। কারণ, ইতিপূর্বে হযরত মুসআব (রাঃ) আলালের ঘরের দুলাল হবার সুবাদে সর্বদাই মখমলের কোমল মূল্যবান পোশাক পরিধান করতেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেনঃ

“হে মুসলমানগণ! সেদিন তোমাদের কি অবস্থা হবে যখন সকালে তোমরা এক পোশাক পরিধান করবে আর বিকালে পরিধান করবে অন্য পোশাক। খাদ্যের এক পাত্র সরাতে না সরাতেই দ্বিতীয় পাত্র উপস্থিত করা হবে। তোমরা তোমাদের ঘরে এমনভাবে পর্দা ঝুলাবে যেভাবে কা’বা ঘরকে গিলাফ আবৃত করা হয়”।

সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) আরজ করলেন, “হে রাসুল (সাঃ)! সেদিন তো আমরা আজকের চাইতে অনেক ভালো থাকবো। ইবাদত করার প্রচুর সুযোগ পাব। জীবিকার জন্য মেহনত করতে হবে না”।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেনঃ 

“না। বরং সেদিনের তুলনায় এখনই তোমরা ভালো আছো। কারণ, এখন সম্পদের অভাব থাকলেও ঈমানের প্রাচুর্য আছে আর তখন সম্পদের প্রাচুর্য হবে তবে দৈন্যদশা হবে ঈমান আমলের”। (তিরমিজি শরীফ)

বাস্তব সত্য হল, আজ আল্লাহ তা’আলা অনেক মুসলমানকেই বিপুল সম্পদ দান করেছেন। এত সম্পদ দিয়েছেন, যদি আজীবন কামাই রোজগার নাও করে, দ্বীনিকর্ম ও ইবাদত-বন্দেগীতে ডুবে থাকে – তবুও অভাব হবে না। সাহাবায়ে কেরামের ভাষ্যমতে তারা চাইলে এখন সর্বদাই এবাদত-বন্দেগীতে ডুবে থাকতে পারে। অথচ তারা আজ মরণের পর যে একটা জীবন আছে সেটা যেন ভুলেই গেছে। তাদের চিন্তা ও জীবন জুড়ে কেবল ভালো খাবার, ভালো পোশাক ও ভালো গারি-বাড়ির নেশা! স্কুলের ড্রেস ভিন্ন, বেড়ানোর পোশাক ভিন্ন, ঘুমাবার পোশাক আলাদা! পোশাক আর খাদ্যের সে কি বিশাল ফিরিস্তি। সর্বক্ষণ ডুবে আছে এই একই নেশায়।
এসব ব্যস্ততার কারণে আল্লাহর সামনে সিজদাবনত হওয়া তো দূরের কথা সেই ভাবনাও নেই। এই জন্যেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ““না। বরং সেদিনের তুলনায় এখনই তোমরা ভালো আছো”।

বুখারি ও মুসলিম শরীফের একটি হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ
“আল্লাহর কসম! তোমরা দরিদ্র হয়ে পড়বে সেটাকে আমি ভয় করি না। আমি ভয় করি এটাকে যে, তোমাদেরকে বিপুল পরিমানে বিত্ত বৈভব দেওয়া হবে – যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে দেওয়া হয়েছিল। তারপর তারা যেভাবে দুনিয়ার ফাদে পড়েছিল তোমরাও তেমনি দুনিয়ার ফাঁদে আটকা পড়বে। অতঃপর দুনিয়ার বিত্ত-বৈভব তাদেরকে যেভাবে ধ্বংস করেছিল তোমাদেরকেও তেমনি ধ্বংস করে ছাড়বে”। 

তাজ্জবের বিষয় হল, আজকাল দরিদ্ররাও দ্বীন থেকে ততটাই দূরে অবস্থান করে যতটা দূরে বিত্তবানরা অবস্থিত। বরং দ্বীনের ব্যাপারে আরও অসহায় নিঃস্ব। এর বড় কারণ হল আজ কোথাও দ্বীনের পরিবেশ নেই। ধনী-গরীব সকলের ঘরেই এখন বদদ্বীন বিরাজ করছে। 

আল্লাহ হেফাজত করুন।    

No comments:

Post a Comment