প্রসঙ্গঃ মৌলবাদ ও মৌলবাদী
মৌলবাদ
ও মৌলবাদী - যে ভয়ংকর অস্রের সাহায্যে ইহুদী-খৃষ্ট্রানরা প্রতিটি মুসলিম
দেশকে একেবারে পঙ্গু বানিয়ে ফেলেছে। আল্লাহ আমাদেরকে তা বুঝার তৌফিক দান
করুন।
আমরা খেয়াল করলে দেখতে পাবো, কোন মুসলিম দেশে ইসলামের
নবজাগরণের পিছনে যারাই নিবেদিত হয়ে কাজ করছে ইহুদী-খৃষ্ট্রান চক্র ও তাদের
অনুচওরেরা তাদেরকেই মৌলবাদী নামে আখ্যায়িত করে তাদের নির্মূল করার জন্য
“শাব্দিক অর্থেই” ঝাঁপিয়ে পড়ছে। প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইলক্ট্রোনিক মিডিয়া
দুটোই পুরোপুরি ইহুদী-খৃস্টান-হিন্দু চক্রের নিয়ন্ত্রণে ফলে তারা মুসলিম
উম্মাহার বিরুদ্ধে ব্যাপক তথ্যসন্ত্রাস চালাতে পারে। মুহুর্তের মধ্যে দিনকে
রাত এবং রাতকে দিন বানিয়ে মুসলিম বিশ্বকে নাস্তানাবুদ করে ফেলে।
পাশ্চাত্য এ পর্যন্ত মুসলিম উম্মহার বিরুদ্ধে যতগুলো অস্ত্র ব্যবহার করেছে
তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর অস্ত্র হলো মৌলবাদের নামে উম্মহার মাঝে বিভেদ
সৃষ্টি। পাশ্চাত্য তার নিয়ন্ত্রিত প্রচার মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে মৌলবাদ ও
মৌলবাদী নামে গোটা মুসলিম বিশ্বে এমন এক ভীতি ছড়িয়ে দিয়েছে যে, সেই
অদৃশ্য মৌলবাদ নির্মূলের নামে সবাই এখন মারমুখী। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়,
গোটা মুসলিম বিশ্বের নির্মম বাস্তবতা।
জাগতিক স্বার্থের লোভে
বিদেশী প্রভুদের সেবাদাস হিসাবে যারা মৌলবাদ নির্মূলের জিগির তুলছে তাদের
সম্পর্কে কিছুই বলার নেই। কিন্তু মুসলিম সমাজের অধিকাংশই হলো অসতেচন ও
সরলমনা। কৌশলে তাদের মুখে যা তুলে দেয়া হয় সরল বিশ্বাসে পরম সত্যজ্ঞানে
তাই তারা রটতে শুরু করে। এদের সম্পর্কেই আল্লামা কবি ইকবাল বড় দুঃখ করে
বলেছেন- “অন্যদের ধূর্ততা দেখো, আর দেখো আমাদের সরলতা”।
এখন আসি
মূল বিষয়ে, মৌলবাদ শব্দটির উৎপত্তিই হয়েছে পাশ্চাত্যে খৃস্টানদের
ধর্মসমাজে। ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম সমাজের সাথে এর বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই।
খৃস্টধর্মের ত্রিত্ববাদে কঠোরভাবে বিশ্বাস করার নাম দেয়া হয়েছে মৌলবাদ
বা ফাণ্ডামেন্টালিজম।
হযরত ঈসা (আঃ) এর উপর যে আসমানী কিতাব নাযিল
হয়েছে তার নাম ইন্জিল এবং হযরত মূসা (আঃ) এর উপর যে আসমানী কিতাব নাযিল
হয়েছে তার নাম তাওরাত। তারা উভয়ে ছিলেন আল্লাহর তাওহীদবাদী সত্য নবী। এবং
তাওরাত বা ইন্জীল ছিলো আল্লাহর একত্ব বা তাওহীদের শিক্ষার ধারক আসমানী
কিতাব। কিন্তু পরবর্তীতে মানুষের হাতে তাওরাত ও ইন্জীলের বিকৃতির মাধ্যমে
যথাক্রমে তা বাইবেল ওল্ড টেস্টামেন্ট ও নিউ টেস্টামেন্ট নামে পরিচিতি লাভ
করে এবং ত্রিত্ববাদই হয়ে ওঠে খৃস্টধর্মের মূল ভিত্তি।
বিকৃতি
সাধনের এ ধারা যুগ যুগ ধরে অব্যাহত থেকে এক পর্যায়ে অবস্তা এই দাঁড়ালো
যে, খৃস্টান সমাজে একই বাইবেলের অসংখ্য্ রুপ আত্নপ্রকাশ করে। এমনকি
ত্রিত্ববাদ সম্পর্কেও একেক রকম ব্যাখা দেখা যায়।
এই অদ্ভূত
নৈরাজ্যের অবস্তা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য খৃস্টান ধর্মবেত্তারা সর্বদলীয়
ধর্মসম্মেলন করে বাইবেলের প্রায় চারহাজার পরস্পর বিরোধী পাণ্ডুলিপি থেকে
“পন্জ্ঞাশ হাজার” ভুল শুদ্ধ করে বাইবেলের সর্বশেষ “নির্ভুল” সংস্করণ প্রকাশ
করে।
কিন্ত তারপরও বাইবেলের বিশ্বাসগত ব্যাখা নিয়ে চরম বিরোধ
অব্যাহত থেকে যায়। তখন নেতৃস্হানীয় ধর্মবেত্তাগণ পাঁচটি মূল বিষয়কে
ভিত্তি করে একটি “খৃস্টীয় বিশ্বাসমালা” স্হির করেন, যা খৃস্টধর্মের মৌলবাদ
রূপে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা লাভ করে।
মৌলবাদের পাঁচটি ভিত্তি হলো-
(১)বাইবেলের নিঃশর্ত ও আক্ষরিক অভ্রান্ততা।
(২)যিশুখৃস্টের উপাস্যতা।
(৩)পুরুষের উরস ছাড়া কুমারী মেরীর গর্ভে যিশুর জন্ম।
(৪)মানবের পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য যিশুর রক্তক্ষরণ ও মৃত্যু।
(৫)যিশুর কবর থেকে সশরীরে পুনরুত্থান ও রাজত্ব।
সুবিখ্যাত ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় ফাণ্ডামেন্টালিজম প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-
“ফান্ডামেন্টালিজম বা মৌলবাদ হচ্ছে প্রটেস্ট্যান্ট খৃস্টানদের একটি গোড়া
ধর্মীয় মতবাদ। ১৮৭৬ সালে যুক্তসাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের সোয়াম্পসকট
শহরে অনুষ্টিত বাইবেল সম্মেলন এবং ১৮৭৭ সালে নিউইয়র্কে অনুষ্টিত
খৃস্টানদের প্রফেটিক কনফারেন্স থেকে ফাণ্ডামেন্টালিজম বা মৌলবাদ আন্দোলনের
সূচনা।”
উইকিপিডিয়ায় মৌলবাদ সম্পর্কে বলা হয়েছে-
“মৌলবাদ
শব্দটি ইংরেজি ফান্ডামেন্টালিজম শব্দের অনুবাদ। মৌলবাদ শব্দটির সাধারণ অর্থ
হল মূলজাত। এখানে মূল শব্দটি দ্বারা ধর্ম বোঝানো হচ্ছে। অর্থাৎ আদি কাল
থেকেই ধারনাটি ধর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে। আর সে ধর্ম হল খ্রিস্টধর্ম।
খ্রিস্টান জগতে মৌলবাদ নিয়ে তর্ক শুরু হয়েছিলো ঊনবিংশ শতাব্দির শেষ দিকে
এবং বিংশ শতাব্দির দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত প্রবল প্রতাপে তা চালু ছিলো।
তর্কের শিকড় একটি জায়গায়ঃ বাইবেলে যা লেখা আছে সে সব আক্ষরিক অর্থে
গ্রহণ করে মান্য করতে হবে, নাকি পরিবর্তিত পৃথিবীর বাস্তব প্রেক্ষাপট ও
মানব ইতিহাসের অগ্রগতির নিরিখে এবং যুক্তিবাদ প্রয়োগ করে
ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের পর মান্য করতে হবে? মৌলবাদীরা আক্ষরিক অর্থের সব কিছু
গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য দেশে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের
মধ্যে মৌলবাদ নতুনভাবে তৈরি হয়েছে। সেসব দেশে মৌলবাদের রাজনৈতিক রূপের
উদ্দেশ্য রাষ্ট্রনৈতিক ক্ষমতা দখল।”
উপরের আলোচনা থেকে পরিষ্কার
হয়ে গেল যে, মৌলবাদ আগাগোড়া পাশ্চাত্য সমাজের প্রচলিত খৃস্টানধর্মভিত্তিক
আন্দোলন , যার সঙ্গে ইসলাম ধর্ম তো বটেই এমনকি মূল ঈসায়ী ধর্মেরও দূরতম
সম্পর্ক নেই। ইসলাম ধর্মের মূলভিত্তি হলো আল্লাহর প্রেরিত কালাম আল-কোরআন
এবং তার একমাত্র গ্রহণযোগ্য ব্যাখা হলো আল্লাহর রাসূলের রেখে যাওয়া হাদীছ
ও সুন্নাহ। সুতরাং ইসলাম ধর্মে আকীদা বিশ্বাস এবং কর্ম ও আচরণের ক্ষেত্রে
“মৌলবাদ-অমৌলবাদ”-এর কোন স্হান নেই। এখানে আছে শুধু কোরআন ও সুন্নাহ ।
সম্পূর্ণ কোরআনকে এবং শরীয়তের প্রতিটি বিধানকে যে বিশ্বাস করবে এবং তা
মানবার কথা মুখে স্বীকার করবে সেই শুধু মুসলমান। পক্ষান্তরে কোরআনের কোন
একটা অংশকেও যে অগ্রহণ করবে সে ইসলামের গণ্ডী থেকে বের হয়ে শুধু “অসুলমান”
নয় বরং মোরতাদ বলে গণ্য হবে। ইসলামী শরীয়তের প্রত্যেক অমুসলিমের নিজস্ব
ধর্ম ও ধর্মবিশ্বাস পালন ও মান্য করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু মুক্তবুদ্ধির
নামে ধর্মত্যাগ বা ধর্মদ্রোহের কোন অধিকার একজন মুসলমানের নেই। মোরতাদ
নারীর শাস্তি হলো তাওবা করা পর্যন্ত আটক রাখা, পক্ষান্তরে মোরতাদ পুরুষের
একমাত্র বিধান হলো মৃত্যু দণ্ড। অবশ্য একমাত্র বৈধ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষই
উক্ত শাস্তি কার্যকর করতে পারেন, তবে যারা ইসলামী শরীয়তের মুফতী তারা
অবশ্যই মোরতাদকে মোরতাদ ঘোষণা করার অধিকার সংরক্ষণ করেন, যাতে সাধারণ
মুসলমান তাদের ইসলামী নাম দ্বারা বিভ্রান্ত না হয়।
মোটকথা, ইসলাম
সম্পূর্ণত অবিভাজ্য্ একটি আসমানী জীবন-ব্যবস্হা। আমলের ক্ষেত্রে ত্রুটি,
অবহেলা ও শিথিলতা আসতে পারে, কিন্তু আংশিক গ্রহণ/বর্জন বা নিজস্ব ব্যখ্যা
সংযোজন করে বিশেষণযুক্ত মুসলামান হওয়ার কোন অবকাশ নেই। তাই ইরশাদ হয়েছে-
তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশের প্রতি ঈমান আনো, আর কিছু অংশকে অস্বীকার করো?
যারা এমন করে তাদের শাস্তি কী হতে পারে দুনিয়ার জীবনে ষা লাঞ্চনা ছাড়া!
আর কেয়ামতের দিন তাদেরকে কঠিনতম আযাবে লিপ্ত করা হবে।
খ্রিস্ট
ধর্মের তথাকথিত ত্রিত্ববাদের জটিলতা এবং অবৈজ্ঞানিকতার কারণে খৃস্ট-সমাজে
যে সর্বগ্রাসী দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিলো মূলত তা থেকেই মৌলবাদ আন্দোলনের
প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। কিন্তু ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ আসমানী
দ্বীন এবং আলকোরআন হচ্ছে আল্লাহর নাযিলকৃত সর্বশেষ আসমানী কিতাব, যা
সর্বপ্রকার মানবীয় হস্তক্ষেপ থেকে চিরমুক্ত। সুতরাং জ্ঞান-বিজ্ঞানে শাশ্বত
সত্যের সাথে তার বিরোধের কোনই সম্ভাবনা নেই। ফলে মৌলবাদ নামে কোন তত্ত্বের
চাষাবাদেরও এখানে সুযোগ নেই।
No comments:
Post a Comment